মহিলাদের মসজিদে যাওয়া কতখানি সঠিক ?
মহিলাদের মসজিদে যাওয়া কতখানি সঠিক ?
মহিলাদের মসজিদে যাওয়ার বিষয়টি ইসলামের প্রাথমিক যুগে অনুমোদিত ছিলো। পরবর্তীতে সেটাকে নিষেধ করে দেয়া হয়েছে। শুরুর যুগে মহিলাদের মসজিদে আসার যে অনুমতি দেয়া হয়েছিলো, তার ভিত্তি ছিলো দু’টি জিনিসের উপর।
|◆| ইসলামের সূচনালগ্ন হওয়ায় দ্বীনি ইলমের ব্যাপক প্রচার প্রসারের স্বার্থে পুরুষ মহিলাসহ সকলের জন্য মসজিদে এসে সরাসরি নবীজীর কাছ থেকে হুকুম-আহকাম জানার প্রয়োজন ছিল।
|◆| ফিতনার আশঙ্কা না থাকা। তখনকার নারীগণ ছিল অত্যন্ত ধর্মভীরু। তাহারা কোনো ভাবেই আল্লাহর হুকুম অমান্য করতেন না। তাদের ঈমান ছিল অত্যন্ত দৃঢ় এবং মজবুত।
পরবর্তীতে একদিকে যখন দ্বীনি ইলমের ব্যাপক প্রচার-প্রসার হয়ে গেলো অপরদিকে ‘খাইরুল কুরুন’ তথা সর্বশ্রেষ্ঠ তিন যুগেই মহিলারা রাসূলের নির্দেশ অমান্য করে খুশবু ব্যবহার করে ছিলো, সেজেগুজে মসজিদে আসতে শুরু করলো, তখন ফিতনা ফাঁসাদের প্রবল আশঙ্কায় হযরত আয়েশা (রাঃ), উমর (রাঃ), ইবনে মাসঊদ (রাঃ)সহ অনেক সাহাবা'য়ে কেরাম কঠোরভাবে মহিলাদের মসজিদে গমনকে নিষেধ করলেন তাঁরা নিজেদের এ নিষেধাজ্ঞার সমর্থনে এ কথাও ঘোষণা করলেন যে, ‘নবীজী যদি জীবিত থাকতেন, তবে তিনিও অবশ্যই এ পরিস্থিতিতে মহিলাদেরকে মসজিদে গমন করতে কঠোরভাবে নিষেধ করতেন’।
অন্যান্য সাহাবায়ে কেরামও মৌনভাবে তাদের এ নিষেধাজ্ঞাকে সমর্থন করলেন। কেননা, এ নিষেধাজ্ঞা ছিলো, শরীআতের রুচিবোধ এবং নবীজীর মানশা ও ইচ্ছার সঠিক বাস্তবায়ন। সাহাবায়ে কেরামের অনুসরণে উলামায়ে কেরামগন পরবর্তীতে মহিলাদের মসজিদে গমন করাকে নাজায়েয বলে থাকেন।
এখন আমরা কুরআন, হাদীস, সাহাবাদের আমল ও ফুকাহায়ে কেরামের সিদ্ধান্ত উপস্থাপন করবো যার দ্বারা একথা প্রমাণিত হবে যে, বর্তমান যুগে মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামা‘আতে অংশ গ্রহণ করা নাজায়েয।
|★| কুরআনে কারীমের আয়াত
وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى
তোমরা (নারীরা) তোমাদের ঘরে অবস্থান করো এবং জাহিলিয়্যাত যুগের নারীদের মত দেহ সৌষ্ঠব ও সৌন্দর্য প্রদর্শন করে ঘোরাফেরা করো না।
|★| হাদীসের আলোকে
নারীদের ব্যাপারে শরীআতের রুচিবোধ হলো যে, নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হবে না। সুগন্ধি ব্যবহার করলে ফিতনা সৃষ্টি হবে এই আশঙ্কায় সুগন্ধি ব্যবহারকারি মহিলা সাহাবীদেরকে মসজিদে আসতে নিষেধ করেছেন। মহিলাদেরকে মসজিদে গিয়ে নামায পড়তে স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিরুৎসাহিত করেছেন।
|●| হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) হতে বর্ণিত রাসূল (সাঃ) বলেন, ‘নারী আপাদমস্তক আবরণীয়। যখন সে বাইরে বের হয় শয়তান তার দিকে লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। নারী যতক্ষণ ঘরের ভিতরে থাকে আল্লাহর রহমতে অধিক নিকটে থাকে।
|●| হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাযিঃ) এর সূত্রে বর্ণিত রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেন, মহিলাদের জন্য ঘরের আঙ্গিনায় নামায অপেক্ষা তার ঘরে নামায পড়া উত্তম। আর ঘরে নামায অপেক্ষা নিভৃত ও একান্ত কোঠায় নামায পড়া উত্তম।
|★| ফিকাহবিদদের মতে
ফিকাহবিদদের মধ্যে চার মাযহাবের চারজন ইমামের মতামত অত্যন্ত দৃঢ় এবং গুরুত্বপূর্ণ। এই চার মাযহাবের উপর ভিত্তি করেই বর্তমানে পুরো পৃথিবীতে ইসলাম ধর্ম পরিচালনা হয়ে থাকে। তাই এই চারজন ইমামের মতামত তুলে ধরা হয়েছে,
|●| হানাফী মাযহাব
হানাফী মাযহাবে মহিলাদের জন্য, সে যুবতী হোক কিংবা বৃদ্ধা হোক, ওয়াজ নসীহত শ্রবণ কিংবা নামাযের জন্য মসজিদে গমন বৈধ নয়। আদ্দুররুল মুখতারে (১/৫৬৬) বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে।
|●| মালেকী মাযহাব
মালেকী মাযহাব মতে বৃদ্ধা মহিলা যাদের প্রতি সাধারণত আকর্ষণ সৃষ্টি হয় না, তাদের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত ফরয নামায, ঈদের নামায ও ইস্তিসকার নামাযের উদ্দেশ্যে বের হওয়া জায়েয আছে, তবে অনুত্তম।
|●| শাফেয়ী মাযহাব
শাফেয়ী মাযহাবের ইমামগণ বলেন, যদি সে যুবতী হয় কিংবা তার প্রতি আকৃষ্ট হবার আশংকা থাকে, এমন বৃদ্ধা হয় তাহলে তার জন্য এটা মাকরূহে তাহরিমী এবং তার স্বামী বা অন্যান্য অভিভাবকের জন্য তাকে সুযোগ দেয়াটাও মাকরূহে তাহরিমী হবে।
|●| হাম্বলী মাযহাব
হাম্বলী মাযহাব মতেও সর্বাবস্থায় মহিলাদের জন্য তাদের ঘরে নামায পড়া উত্তম এবং যদি ফেতনার আশঙ্কা হয়, তবে তাদেরকে মসজিদে যেতে নিষেধ করার কথা বলা হয়েছে।
সারমর্ম কথা হলো, বর্তমান ফেতনা ফাসাদের যুগে এই সব আয়োজন না করাই ভালো। কেননা সমাজের বিশৃঙ্খলা, পরিবারের উদাসীনতা আজকাল সবাইকে অশ্লীলতায় লেলিয়ে দিয়েছে। তাই শংকা আর সন্দেহের উর্ধ্বে কাউকে রাখাও মুশকিল। দ্বীনকে গভীর ভাবে বুঝতে হবে, তারপর দ্বীনের পথে শতভাগ নিজেকে পরিচালনা করার অঙ্গীকার করতে হবে।
No comments