শরীয়ত সম্মত মিলাদ মাহফিল

ঈদে মিলাদুন্নবী ও জশনে জুলুস এর শরিয়তের বিধান 

ঈদে মিলাদুন্নবীর প্রচলন 
Shariah-compliant Milad Mahfil


মিলাদের অর্থ হল জন্ম। মিলাদ মাহফিলের উদ্দেশ্য হলো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্ম যেসব লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে হয়েছে এবং তিনি নবুয়তের তেইশ বছরে উম্মতের জন্য কি কি সুন্নাত বা তরিকা রেখে গেছেন, তার কোন কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা, আলোচনা শেষে শ্রোতাগণ নিজস্ব ভাবে হাদীসে বর্ণিত সহীহ দরূদ তিন বার বা এগারো বার পড়ে নেয়া, সকলে মিলে দু‘আ মুনাজাত করা। 

এই হলো মোটামুটি হক্কানী আলেমদের দ্বারা স্বীকৃত সহীহ মিলাদের একটা রূপরেখা। এর মধ্যে কোন গুনাহ নেই, এর মধ্যে কোনো শিরকের সম্ভাবনা নেই, এর মধ্যে বেদাআতের কোনো কর্মকাণ্ড নেই বরং এটা আল্লাহ চায়তো হতে পারে অসীম সাওয়াবের কাজ, অসীম বরকতময় এক আমল।


✓ ঈদে মিলাদুন্নবী ও জশনে জুলুস 
রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ এলেই সমাজের এক শ্রেণীর লোকজন রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মদিন পালনের নামে জশনে জুলুসে তথা ঈদে মিলাদুন্নবী ব্যাপক উৎসব ও আনন্দমুখর ভাবে পালন করে থাকে। 

এটিকে কেন্দ্র করে দেয়াল লিখন, ব্যানার বানানো, সভা-সমাবেশ, গেইট সাজানো, রাসূলের শানে কাসিদা পাঠ, নকল বাইতুল্লাহ ও রওজা শরীফের প্রতিকৃতি নিয়ে রাস্তায় নারী-পুরুষের সম্মিলিত শোভাযাত্রা, ঢোল-তবলা ও হারমোনিয়াম সজ্জিত ব্যান্ডপার্টির গগণবিদারী গান-বাজনা এবং নাচা-নাচি করা। সবশেষে মিষ্টি ও তবারক বিতরণ করা। এবং এটাকে মহাপূণ্যের কাজ ও শ্রেষ্ঠ ঈদ হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকে।


✓ ঈদে মিলাদুন্নবী ও জশনে জুলুস এর শরিয়তের বিধান 
ইসলামে কোন মহা মনীষীর জন্মদিন বা মৃত্যু দিবস পালন করার বিধান নেই। যদি থাকত তাহলে, বছরের প্রত্যেক দিনই জন্ম বা মৃত্যু দিবস পালন করতে হতো। কেননা লক্ষাধিক নবী-রাসূল ও লক্ষাধিক সাহাবা এবং শত সহস্র ওলী-বুযুর্গ দুনিয়াতে আগমন করে বিদায় নিয়ে গেছেন। 

হিসেব করলে দেখা যাবে, বছরের প্রত্যেক দিন কোন না কোন নবী কিংবা সাহাবা অথবা কোন বুযুর্গ জন্ম গ্রহন করেছেন কিংবা ইন্তিকাল করেছেন। ফলে সারা জীবন কেবল জন্ম দিবস আর মৃত্যু দিবস পালনের মাঝেই কেটে যাবে। ইবাদত বন্দেগীর সুযোগ হবে না। কখনো দেখা যাবে একই দিনে কোন মহামনীষী জন্ম গ্রহন করেছেন 

আবার কোন মনীষী ইন্তিকাল করেছেন।  তখন একই দিন জন্ম ও মৃত্যু দিবস পালন করতে হবে। যার পরিণতি হবে সমাজে সর্বদা অশৃঙ্খল-গোলযোগ মারামারি। অথচ ইসলাম মানুষকে সুশৃঙ্খল যিন্দেগী যাপন করা শিখায়।


✓ রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম নবুয়ত লাভের পর ২৩ বছর জীবত ছিলেন। অতঃপর রাসূলের ইন্তিকালের পর সাহাবায়ে কিরাম ১১০ বছর পর্যন্ত দুনিয়াতে ছিলেন। এই সূদীর্ঘ কালের প্রতি বছরই রবিউল আউয়াল মাস আসতো, কিন্তু কোন বছরই না রাসূল স্বয়ং নিজের জন্মদিন পালন করেছেন, এবং না কোন সাহাবা করেছেন।


✓ জাহেলী যুগে মদীনাবাসীরা (প্রথা অনুযায়ী) দুটি দিনে আনন্দ উৎসব করতো। অতঃপর আল্লাহর রাসূল মদীনায় আগমন করে বললেন, আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের জন্য এ দুটি দিনের চেয়ে উত্তম দুটি দিন তথা ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। একথা প্রতিয়মান হয় যে, মুসলমান কখনো নিজেরা নিজেদের ঈদ নির্ধারণ করতে পারে না। বরং তা আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে নির্ধারিত হয়ে থাকে। 

কুরআন-হাদীস অনুযায়ী মুসলমানদের ঈদ হলো দু’টি, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা। সুতরাং তৃতীয় কোন দিনকে ঈদ হিসেবে নির্ধারণ হলে, সেটা হবে স্পষ্ট বিদ‘আত, কুসংস্কার। সাহাবা, তাবেঈন এবং তাবে-তাবেঈন এই তিন সোনালী যুগেও এর কোন অস্তিত্ব ছিলো না। 

✓ ঈদে মিলাদুন্নবীর প্রচলন 
ইরাকের মুসেল নগরীতে, স্বেচ্ছাচারী বাদশাহ মালিক মুযাফ্ফর আবু সাঈদ কূকবুরী (মৃত ৬৩০হি.) ৬০৪ হিজরীতে সর্বপ্রথম এই ঈদে মীলদুন্নবীর সূচনা করে। এরপর তার দেখাদেখি অন্য লোকেরাও শুরু করে।

ইমাম আহমাদ ইবনে মুহাম্মাদ মিসরী মালেকী লেখেন- সে একজন অপব্যয়ী বাদশাহ ছিলো। সে তার সময়কালের আলেমদের হুকুম দিতো, তারা যেন তাদের ইজতিহাদ ও গবেষণা অনুযায়ী আমল করে এবং অন্য কারো মাযহাবের অনুসরণ না করে। ফলে দুনিয়া পূজারী একদল আলেম তার ভক্ত এবং দলভূক্ত হয়ে পড়ে। (আল কাওলুল মু’তামাদ ফী আমলিল মাওলিদ, রাহে সুন্নাত সূত্রে,পৃষ্ঠা: ১৬২)

উক্ত অপব্যয়ী বাদশাহ প্রজাগণের মনোরঞ্জন ও নিজের জনপ্রিয়তা অর্জনের লক্ষে প্রতি বছর ১২ই রবীউল আউয়ালকে কেন্দ্র করে মীলাদুন্নবী উদযাপন করতো। এবং এ অনুষ্ঠানে সে রাষ্ট্রীয় কোষাগার হতে তিন লক্ষ দীনার ব্যয় করতো । (আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়াঃ-১৩/১৩৯-১৪০)

অতপর দুনিয়ালোভী দরবারী মৌলবী উমর ইবনে দেহইয়া আবূল খাত্তাব মীলাদ মাহফিল ও জশনে জুলুসের  স্বপক্ষে দলীলাদী সম্বলিত কিতাব রচনা করে বাদশার কাছ থেকে প্রচুর অর্থ কড়ি হাতিয়ে নেয়। সেই থেকেই মূলত এর আস্ফালন ঘটে। 


No comments

Powered by Blogger.