সৎ কাজের উপহার, একটি শিক্ষণীয় ঘটনা

সৎ কাজের উপহার
একটি শিক্ষণীয় ঘটনা

Islamic story


একবার তিনজন লোক পথ চলছিল, এমন সময় তারা বৃষ্টির কবলে পড়লো, অতঃপর তারা এক পাহাড়ের গুহায় আশ্রয় নিল। হঠাৎ পাহাড় হ’তে এক খন্ড পাথর পড়ে তাদের গুহার মুখ বন্ধ হয়ে গেল। তখন তারা একে অপরকে বলতে লাগলো , নিজেদের কৃত কিছু সৎকাজের কথা চিন্তা করে বের করতে, যা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করা হয়েছিল।


তার মাধ্যম করে আল্লাহর নিকট দোয়া করতে। তাহলে হয়ত আল্লাহ্‌ তাদের উপর হতে পাথরটি সরিয়ে দিবেন। তাদের একজন বলতে লাগল, হে আল্লাহ্‌! আমার আব্বা-আম্মা খুব বৃদ্ধ ছিলেন এবং আমার ছোট ছোট সন্তানও ছিল। আমি তাদের ভরণ-পোষণের জন্য পশু পালন করতাম। সন্ধ্যায় যখন আমি বাড়ি ফিরতাম তখন দুধ দোহন করতাম এবং আমার সন্তান্দের আগে আমার আব্বা-আম্মাকে পান করাতাম। 


একদিন আমার ফিরতে দেরী হল আর সন্ধ্যা হওয়ার আগে আসতে পারলাম না। এসে দেখি আমার আব্বা-আম্মা ঘুমিয়ে পড়েছেন। আমি দুধ দোহন করলাম, যেমন প্রতিদিন দোহন করি। তারপর আমি তাঁদের শিয়রে (দুধ নিয়ে) দাঁড়িয়ে রইলাম। তাদেরকে জাগানো উচিত মনে করিনি, তাদের আগে আমার বাচ্চাদেরকে পান করানোও সঙ্গত মনে করিনি। 

অথচ বাচ্চাগুলো দুধের জন্য কান্নাকাটি করছিল। এভাবে ভোর হয়ে গেল। হে আল্লাহ্‌! আপনি জানেন আমি যদি শুধু আপনার সন্তুষ্টির জন্যই এ কাজটি করে থাকি তবে আপনি আমাদের হতে পাথরটা খানিক সরিয়ে দিন!, যাতে আমরা অন্তত আসমানটা দেখতে পাই। তখন আল্লাহ পাথরটিকে একটু সরিয়ে দিলেন এবং তারা আসমান দেখতে পেল।
  

দ্বিতীয় ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহ্‌ ! আমার এক চাচাতো বোন ছিল। পুরুষরা যেমন মহিলাদেরকে ভালবাসে, আমি তাকে তার চেয়েও অধিক ভালবাসতাম। একদিন আমি তার কাছে চেয়ে বসলাম (অর্থাৎ খারাপ কাজ করতে চাইলাম)। কিন্তু তা সে অস্বীকার করল যে পর্যন্ত না আমি তার জন্য একশত’ দিনার নিয়ে আসি। একশত দিনার দিতে পারলেই সে আমার মনের আশা পূরণ করবে , পরে চেষ্টা করে আমি তা সংগ্রহ করলাম এবং তার কাছে আসলাম। 


যখন আমি তার দু’পায়ের মাঝে বসলাম (অর্থাৎ সম্ভোগ করতে তৈরী হলাম) তখন সে বলল, হে আল্লাহর বান্দা! আল্লাহকে ভয় কর। অন্যায়ভাবে আমার সতীত্ব নষ্ট করো না। তখন আমি দাঁড়িয়ে গেলাম। সহসায় সেই স্থান ত্যাগ করলাম। হে আল্লাহ! আপনি জানেন আমি যদি শুধু আপনার সন্তুষ্টির জন্য এ কাজটি করা থেকে বিরত থাকি, তবে আপনি আমাদের জন্য পাথরটা আর একটু সরিয়ে দিন। তখন পাথরটা আরো কিছুটা সরে গেল।  


তৃতীয় ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহ্‌! আমি এক ‘ফারাক’ চাউলের বিনিময়ে একজন শ্রমিক নিযুক্ত করেছিলাম। যখন সে তার কাজ শেষ করল আমাকে বলল, আমার পাওনা দিয়ে দাও। আমি তাকে তার পাওনা দিতে গেলে সে তা নিল না, পরে এসে নিয়ে যাবে বলে চলে গেল। 

কিছুদিন অপেক্ষা করে দেখলাম আসছে না। তাই আমি তার পারিশ্রমিকটুকু দিয়ে কৃষি কাজ করতে লাগলাম এবং এর দ্বারা একটা দুটা করে হতে হতে অনেক গরু জমা হয়ে গেলো। বহু দিন পর সে ব্যক্তি আমার কাছে এসে বলল’ আল্লাহকে ভয় কর, আমার মজুরী দাও ! আমি বললাম’ এই সব গরু তোমার পাওনা অর্থেই করা, তুমি এই সব গুলো গরু নিয়ে যাও। সে বলল, আমার সাথে ঠাট্টা কর না। 


আমি বললাম, আমি তোমার সাথে ঠাট্টা করছি না, ঐগুলো নিয়ে নাও যা তোমার পারিশ্রমিক থেকেই হয়েছে । তখন সে সবকিছু নিয়ে গেল। হে আল্লাহ! আপনি জানেন, যদি আমি আপনার সন্তুষ্টি লাভের জন্য এ কাজটি করে থাকি, তবে পাথরের বাকীটুকু সরিয়ে দিন’ যাতে আমরা এই গুহা থেকে বের হতে সক্ষম হই! তখন আল্লাহ পাথরটাকে সম্পুর্ণ সরিয়ে দিলেন। 

(আব্দুললাহ ইবনু ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, বুখারী হা/২৩৩৩, ‘চাষাবাদ’ অধ্যায়, অনুচেছদ-১৩; মুসলিম হা/২৭৪৩, মিশকাত হা/৪৯৩৮)।  



No comments

Powered by Blogger.