হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এবং বিবি সারা (আঃ) এর প্রেমময় একটি গল্প



হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এবং বিবি সারা (আঃ) এর প্রেমময় একটি গল্প


হযরত ইবরাহীম (আঃ) যখন নমরূদের অগ্নীকুন্ড থেকে সহী-সালামতে বের হয়ে আসলেন তখনও তার সম্প্রদায়ের লোকেরা ঈমান আনতে রাজী হলো না বরং অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করলো তখন তিনি বললেনঃ আমি পৌত্তলিকতার স্থান ছেড়ে এমন জায়গায় চলে যাব যেখানে স্বাধীনভাবে আমার রবের ইবাদত করতে পারবো।

অতি সত্তর তিনি আমাকে এমন স্থানের পথ দেখিয়ে দিবেন। (সূরাঃ সাফ্ফাত আয়াত- ৯৯) এরপর তিনি স্বীয় স্ত্রী হযরত সারা (আঃ) কে নিয়ে নমরূদের নির্যাতন থেকে বাঁচার জন্য বাবিল শহর থেকে শাম দেশে হিজরতের উদ্দেশ্যে বের হলেন।


হযরত সারা (আঃ) ছিলেন যুগের শ্রেষ্ঠ সুন্দরীদের একজন। এদিকে তৎকালিন সময়ে মিশরের বাদশার সভাবজাত ধর্ম ছিল, যে কোন সুন্দরী মহিলার ইজ্জত লুন্ঠন করা। এ জন্য দেশের বিভিন্ন স্থানে সে লোক নিয়োগ করে রেখেছিল। যাদের কাজ ছিল, সুন্দরী সুন্দরী রমণী বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করে আনা। অতঃপর বাদশার কাছে পেশ করা। 


সে যুগে সুন্দরী রমণীদের জন্য উক্ত বাদশার হাত থেকে রেহাই পাওয়া ছিল বড় দূরহ ব্যাপার। পথ চলতে চলতে হযরত ইবরাহীম (আঃ) স্বীয় স্ত্রীকে নিয়ে যখন বাবিলের সিমান্ত পাড়ি দিয়ে মিশরের সিমান্তে প্রবেশ করলেন,তখনই মিশরের বাদশা ‘সাদেফ বিন সাদেফ’ মতান্তরে ‘সেনান বিন উলওয়ান’ অথবা ‘ওমর বিন ইমরউল কাইছ’ এর বাহিনী হযরত ইবরাহীম (আ.) এর কাছে হাজির হয়ে জিজ্ঞাস করলো, 

আপনার সঙ্গে এই মহিলা কে ? হযরত ইবরাহীম(আ.) শুনেছিলেন কোন রমনীর সাথে তার আপন ভাই অথবা পিতা থাকলে তাকে ছিনিয়ে নেয়া হয় না। তাই তিনি জবাব দিলেন, এ আমার বোন। অর্থাৎ ধর্মীয় বোন। এছাড়াও তিনি চাচাত বোনকে বিবাহ করেছিলেন। সেদিক থেকেও বংশগত বোন। এ কথা বলেও হযরত ইবারাহীম (আ.) রেহাই পেলেন না।


শেষ পর্যন্ত তারা হযরত সারা (আ.) কে ছিনিয়ে নিয়ে বাদশার হাতে অর্পন করলো। বাদশা এত সুন্দরী রমণী দেখে প্রায় হুশ হারিয়ে ফেললো এবং তখনই তাকে ভোগ করার জন্য শাহী মহলের বিশেষ কক্ষে প্রবেশ করালো। এদিকে স্ত্রী হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার সাথে সাথেই হযরত ইবরাহীম (আ.) আল্লাহর স্মরণাপন্ন হয়ে নামাযে দাড়িয়ে গেলেন।


তখন আল্লাহ তাআলা অলৌকিকভাবে হযরত ইবরাহীম (আ.) এর জন্য সমস্ত প্রাচীর এবং গাছ-পালার অবরণ উঠিয়ে দিয়ে বাদশার খাস মহলে সারা (আ.) এর অবস্থান সচ্ছ কাঁচের ন্যায় পরিস্কার করে দিলেন। যাতে হযরত ইব্রাহীম আঃ স্বীয় স্ত্রীর সাথে বাদশার আচরণ ও কার্যকলাপ স্বচোক্ষে দেখে স্ত্রীর সতীত্বের ব্যাপারে সন্দেহ মুক্ত থাকেন।


কেননা হযরত ইবরাহীম (আ.) চরিত্রগত সব ধরণের অসৎ আচরণকে সর্বাবস্থায় বড় ঘৃণা করতেন। এদিকে শাহী মহলের বিশেষ কক্ষে অসৎ উদ্দেশ্যে বাদশা যখনই হযরত সারা (আ.) এর দিকে হাত প্রসারিত করতে উদ্যত হলো তখনই বাদশার হাত সম্পূর্ণ বিকল হয়ে গেল।


তৎক্ষনাত বাদশা বিকলতা লাঘবের জন্য হযরত সারা (আ.) এর কাছে ক্ষমা প্রার্থী হলো। তখন হযরত সারা (আ.) এর দোয়ায় সে আবার হাতের মধ্যে পূর্বের শক্তি ফিরে পেল। এরপর সে আবার অসৎ উদ্দেশ্যে হাত বাড়াতে চাইলে দ্বিতীয়বার বিকল হয়ে গেল। বাদশা আবার ক্ষমা প্রার্থী হয়ে দোয়া ভিক্ষা চাইলো।


তখনও হযরত সারা (আ.) আবার দোয়া করলে সে পুনরায় হাতের মধ্যে পূর্বের শক্তি ফিরে পেল। এরপর সে আবার তৃতীয় বার অসৎ উদ্দেশ্যে হাত বাড়াতে চাইলে তৃতীয় বার আবার বিকল হয়ে গেল । বাদশা এবার খুব কাকুতি মিনতি কারে ক্ষমা চাইলো এবং ওয়াদা করলো যে,

আর কখনও এমন কাজ করবো না। তখন হযরত সারা (আ.) আবার দোয়া করলে সে আবার হাতের মধ্যে পূর্বের শক্তি ফিরে পেল। বাদশা এবার পরাজিত চেহারায় কোন রকমে কক্ষ থেকে বের হলো এবং দারোয়ানকে ডেকে বললো তোমরা এটি কি নিয়ে এসেছো ? এতো মানুষ নয়। বরং জন্নাতের কোন হুর ! যাও একে মুক্ত করে দাও। 


আর এর খেদমতের জন্য হাজেরা নামক কৃতদাসী দিয়ে দাও। তাই দেয়া হলো।হযরত সারা (আ.) ও হাজেরা উভয়ে যখন হযরত ইবরাহীম (আ.) এর নিকট পৌঁছলেন তখন তিনি নামাযে লিপ্ত ছিলেন। হাতের ইশারায় তিনি নামাযেই হযরত সারা (আ.) কে জিজ্ঞেস করলেন কি খবর ? (ঐ শরীয়তে নামাযের মধ্যে ইশারায় কোন কিছু জিজ্ঞেস করা জায়েয ছিল) হযরত সারা (আ.) জবাব দিলেন,


আল্লাহ তাআলা পাপিষ্ঠের চক্রান্ত নস্যাৎ করে দিয়েছেন। আর হাজেরা নামক এই কৃতদাসী আমি উপহার পেয়েছি। এদিকে হযরত সারা (আ.) এর গর্ভে এ পর্যন্ত কোন সন্তান হয়নি বলে তিনি নিজেকে বন্ধ্যা মনে করতেন। তাই তিনি স্বামীর নিকট হাজেরা নামক কৃতদাসীকে পেশ করে বললেন, আপনি একে বিবাহ করুন, তাহলে হয় তো তার থেকে আপনার কোন সন্তান হতে পারে। 


 হযরত ইবরাহীম (আ.) তাকে আজাদ করে বিবাহ করলেন এবং এই বলে দোয়া করলেন, হে আমার রব! আমাকে এমন সন্তান দান করুন, যে হবে সৎকর্মশীলদের থেকে। (সূরা সাফ্ফাত, আয়াত-১০০)

ফলশ্রুতিতে হাজেরার (আঃ) গর্ভে হযরত ইসমাঈল (আঃ) এর জন্ম হয়। হাজেরা মা হ‌ওয়ার পর সারা (আ.) এর মা হবার ইচ্ছা জাগে কিন্তু সেসময় সারা ও ইবরাহীম (আঃ) দুজনই বৃদ্ধ ছিলেন,

অতপর আল্লাহ তায়ালা তাদের ইচ্ছা পূরণ করে সুসংবাদ পাঠিয়ে সারা (আ.) এর মা হবার কথা জানালেন, এর কিছু কাল পর সারা (আ.) এর গর্ভে হযরত ইসহাক (আ.) এর জন্ম হয়, যিনি ইসমাঈল আঃ এর থেকে ১৩ বছরের ছোট ছিলেন। 


No comments

Powered by Blogger.