জেনারেটর কাকে বলে এবং এর প্রকারভেদ

What is generator and its types



আশি কিংবা নব্বই দশকে যারা বড় হয়েছেন তাদের সকলের একটা শব্দের সাথে বেশ পরিচিত ছিলেন, আর সেটা হচ্ছে ডায়নামা। তখন গ্রামেগঞ্জে বিদ্যুৎ ততটা যায়নি, তখনকার বিয়ে, ঈদে কিংবা বড় কোন অনুষ্ঠানে আলোর জন্য এই ডায়নামা ভাড়া করে নিতে হতো। সন্ধ্যায় বাতি লাগিয়ে ডায়নামা যখন স্টার্ট করা হতো, পুরো বাড়ি আলোকিত হয়ে যেতো। অনেক দিন পর এমন আলোর খেলা দেখে ছোট ছোট বাচ্চারা চিৎকার চেঁচামেচি করতো, আর বাড়ির এই প্রান্ত থেকে ঐপ্রান্ত দৌড়ে বেড়াতো।


কিন্তু তখনও অনেকের জানা ছিল না যে, এর নাম ডায়নামা নয়। এর নাম জেনারেটর। ডায়নামা একটি প্রস্তুতকারক কোম্পানির নাম। জ্বী হ্যাঁ, এই ডায়নামো ছিল প্রথম বৈদ্যুতিক জেনারেটর যা শিল্প কারখানার জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে সক্ষম হয়। 


জেনারেটর কাকে বলে ?

যে তড়িৎযন্ত্রে যান্ত্রিক শক্তিকে তড়িৎশক্তিতে রুপান্তরিত করা হয় তাকে জেনারেটর বলে। জেনারেটর মুলত তড়িৎশক্তি উৎপন্ন করে থাকে। 

জেনারেটর'এর সংজ্ঞা 

বর্তমানে জেনারেটর বহুল ব্যবহারিত একটি যন্ত্র। Generator একটি ইংরেজি শব্দ যার বাংলা অর্থ হচ্ছে উৎপন্ন করা, জেনারেট করা।


জেনারেটর'এর আবিষ্কারক 

তড়িৎচৌম্বক আবেশের কার্যপ্রণালি ব্যবহার করে 1831 থেকে 1832 খ্রিষ্টাব্দে সর্বপ্রথম জেনারেটর তৈরি করেন ব্রিটিশ বিজ্ঞানী মাইকেল ফ্যারাডে। তাই তড়িতচৌম্বক আবেশের উপর ভিত্তি করেই এই যন্ত্রের মূল নীতি প্রতিষ্ঠিত হয়। ডায়নামো ছিল প্রথম বৈদ্যুতিক জেনারেটর যা শিল্প কারখানার জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে সক্ষম হয়। 


জেনারেটর দুই প্রকার 

✓ এসি জেনারেটর
✓ ডিসি জেনারেটর


এসি জেনারেটর 

এতে একটি চুম্বক থাকে। চুম্বকের মধ্যবর্তী স্থানে একটি কাচা লোহার পাতের উপর একটি তারের আয়তকার কুন্ডলী থাকে। কাচা লোহার পাতটিকে আর্মেচার বলে। আর্মেচারটিকে চুম্বকের দুই মেরুর মধ্যবর্তী স্থানে যান্ত্রিক উপায়ে সমদ্রুতিতে ঘুরানো হয়। আয়তকার কুন্ডলীর দুই প্রান্ত দুইটি স্লিপ রিং এর সাথে সংযুক্ত থাকে। 

স্লিপ রিং দুইটি আর্মেচারের একই অক্ষ বরাবর ঘুরতে পারে। দুইটি কার্বন নির্মিত ব্রাশ এমনভাবে স্থাপন করা হয় যেন তারা যখন আর্মেচার ঘুরতে থাকে তখন স্লিপ রিং দুইটিকে স্পর্শ করে থাকে। ব্রাশ দুইটির সাথে বহিবর্তনীয় রোধ সংযুক্ত থাকে।


ডিসি জেনারেটর

ডিসি জেনারেটর এর স্থির চুম্বক ক্ষেত্রের মধ্যে অবস্থিত আর্মেচারকে ঘুরালে এর কয়েল চুম্বক ফ্লাক্সকে কর্তন করার ফলে কয়েলে ফ্যারাডের তড়িৎ চুম্বকীয় সূত্রানুসারে এসি ভোল্টেজ উৎপন্ন হয় যা আর্মেচারের সাথে যুক্ত কম্যুটটরের সাহায্যে ডিসি ভোল্টেজে রূপান্তরিত করে বহিঃস্থ সার্কিটের প্রেরণ করা হয়।

আর্মেচার কন্ডাকটর চৌম্বক ক্ষেত্রের মধ্যে ঘুরালে কন্ডাকটর এর মধ্যে বৈদ্যুতিক চাপের সৃষ্টি হয় একে EMF (Electromagnetic-Force) বলে। এভাবেই একটি ডিসি জেনারেটর কাজ করে।

জেনারেটরের কার্য প্রক্রিয়া 

যখন আর্মেচারটিকে ঘুরানো হয় তখন আর্মেচার কুন্ডলী চৌম্বকক্ষেত্রের বলরেখাগুলোকে ছেদ করে এবং তড়িৎচৌম্বক আবেশের নিয়মানুযায়ী কুন্ডলীতে তড়িচ্চালক শক্তি আবিষ্ট হয়। কুন্ডলীর একবার ঘূর্ণনের মধ্যে আবিষ্ট তড়িৎপ্রবাহের অভিমুখও এবার পরিবতির্ত হয়। 

এখন কুন্ডলীটির দুই প্রান্ত বর্হিবর্তনীর সাথে সংযুক্ত থাকায় বর্তনীতে পর্যায়বৃত্ত তড়িৎপ্রবাহের উৎপত্তি হয়। আবিস্ট তড়িৎপ্রবাহের মান প্রধনত চৌম্বক ক্ষেত্রের সবলতা ও ঘুর্ণনের বেগের উপর নির্ভর করে। এভাবে যান্ত্রিক শক্তি থেকে পর্যায়বৃত্ত প্রবাহ উৎপন্ন হয়।


জেনারেটরের বহুবিধ ব্যবহার

বর্তমানে জেনারেটরের ব্যবহার বহুল। কারণ আমাদের দেশে এখনো চাহিদা মাফিক বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হয় নাই। তাই অনেককেই তাদের প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎতের চাহিদা মেটানোর জন্য জেনারেটরের উপর নির্ভর করে। বিশেষ করে বিভিন্ন ছোট বড় শিল্প কারখানায় জেনারেটরের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি। 


No comments

Powered by Blogger.