ইসলাম ধর্মে প্রয়োজন ছাড়া প্রাণীর ছবি আঁকা, তোলা, সংরক্ষণ করা ও প্রদর্শন করার বিসার বিধান

Islamic article




পরম শান্তিময় ধর্ম হলো ইসলাম, যাতে নেই কোন ধরণের সঙ্কীর্ণতা, লাগামহীন স্বাধীনতা এবং যাতে নেই এমন কোন আদেশ যা পালন করা দুষ্কর এবং যাতে নেই এমন কোন নিষেধ, যা বর্জন করা অসম্ভব। বরং এই ধর্মে রয়েছে সহজতা, পূর্ণতা এবং ব্যাপকতা ও কোমলতা।

প্রয়োজন ছাড়া প্রাণীর ছবি আঁকা, তোলা, সংরক্ষণ করা ও প্রদর্শন করার বিধান


✓ হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে যে, কিয়ামতের দিন প্রাণীর ছবি অংকনকারীরা সবচেয়ে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হবে (সহীহ বুখারী হাদীস নং৫৯৫০,সহীহ মুসলিম হাদীস নং ২১০৯) 


✓ হযরত আবু তালহা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ঘরে কুকুর কিংবা প্রাণীর ছবি থাকে সে ঘরে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করেন না। (সহীহ বুখারী শরীফ হা. নং ৫৯৪৯,সহীহ মুসলীম শরীফ হা. নং ২১০৬)


✓ হযরত আবু হুরাইরা রাযি. বলেন, মাথার প্রতিকৃতির নাম হলো ছবি, আর যাতে মাথা নেই তা ছবি নয়। (শরহু মাআনিল আছার, খ.২পৃ.৩৩৯ নাসায়ী হা.৫৩৬৫ সহীহ ইবনে হিব্বান হা.৫৮৫৩ শরহুস সিয়ারিল কাবীর,সারাখছী খ.৪ পৃ.২১৯ ফাতহুল বারী খ.১০ পৃ.৪৭০)


✓ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযি. বলেন, আমি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, যে কেউ দুনিয়াতে কোনো প্রতিকৃতি তৈরি করবে তাকে কিয়ামতের দিন বাধ্য করা হবে যেন সে তাতে প্রাণ সঞ্চার করে, অথচ সে তা করতে সক্ষম হবেনা। (সহীহ বুখারী হা. নং ৫৯৬৩,সহীহ মুসলিম হা. নং২১১০) 


✓ হযরত আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর ঘরে অঙ্কিত কিছু দেখলে তা বিনষ্ট করে দিতেন। (বুখারী হা. নং৫৯৬২)


উপরের হাদীস সমূহের দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, কোন প্রয়োজন ছাড়া প্রাণীর ছবি আঁকা, তোলা ও সংরক্ষণ করা বা প্রদর্শন করা সম্পূর্ণভাবে হারাম। এক‌ই ভাবে কোন ব্যক্তির ছবি নিজের সাথে বা ঘরে সৌন্দর্য কিংবা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে সংরক্ষণ করা বা ঝুলিয়ে রাখা শরী‘আতের দৃষ্টিতে নাজায়েজ, হারাম। এই সমস্ত কাজ শাস্তি ও অভিশাপ যোগ্য অপরাধ।


ক্যামেরায় ছবি বা ফটোগ্রাফির বিধান 

ওলামায়ে কেরামের ফতোয়া এই যে, যন্ত্রের পরিবর্তনের কারণে ফটোগ্রাফি এবং হাতে অংকিত ছবির বিধানে কোন পার্থক্য ধরা যাবে না। ক্যামেরার ছবি বা ফটোগ্রাফি হাতে আঁকা ছবির প্রকারসমূহের মধ্যেই অন্তর্ভুক্ত হবে এবং হাত দ্বারা ছবি অংকনের ন্যায় সম্পূর্ণ হারাম হবে। (তাসবীর কী শরয়ী আহকাম পৃ.৬০, তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম খ.৪ পৃ.১৬৩)



প্রয়োজনে ছবি তোলার বিধান

বিনা প্রয়োজনে কোনো প্রাণীর ছবি উঠানো সম্পূর্ণ হারাম। তবে বিশেষ কোন প্রয়োজন ছবি উঠানো জায়েজ। যেমন, ধর্মীয় কোন প্রয়োজনে, জীবন জীবিকার তাগিদে একান্ত প্রয়োজনে বহির বিশ্বে ভ্রমণের উদ্দেশ্যে বা হজ্ব উমরাহ পালন করার উদ্দেশ্যে বা চিকিৎসার উদ্দেশ্যে পাসপোর্টের জন্য ছবি উঠানো জায়েজ। 



ন্যাশনাল পরিচয়পত্র সংগ্রহের জন্য ছবি তোলা বা এমন বিশেষ কোন মুহূর্তে ছবি উঠানো জায়েজ যেখানে মানুষের মুখমণ্ডল সনাক্ত করা আবশ্যকীয় হয়। এ ধরনের একান্ত কোন প্রয়োজনে ছবি তোলার অবকাশ আছে। কেননা হক্কানী আলেমদের মতে, একান্ত প্রয়োজনের ক্ষেত্রে হারাম হওয়ার বিধানটি শিথিল ভাবে বিবেচনা করেছেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা হা.২৭১৭ শরহুস সিয়ারিল কাবীর খ. ৪পৃ.২১৮ তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম, তাকি উসমানী  ৪/১৬৪)


যে সমস্ত বস্তুর ছবি ধারণ করা জায়েয 

জড়বস্তু, বৃক্ষলতা, নদী, সাগর, প্রাকৃতিক দৃশ্য ইত্যাদি প্রাণহীন বস্তু, তার প্রতিকৃতি প্রস্তুত করা বা তার ব্যবহার কিংবা ঘরে বা অন্য কোথাও দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখা বৈধ। যদি তাতে শরী‘আতের অন্যকোন নিষেধাজ্ঞা না থাকে। (বুখারী হা.২২২৫ শরহুস সিয়ারিল কাবীর ৪/২১৯ ফাতাওয়ায়ে শামী ১/৬৫০)



বিচ্ছিন্ন কোন অঙ্গ যেমন, হাত, পা, চোখ ইত্যাদি। কোন প্রাণীর ছবি যদি এত ছোট হয় যে, তার অঙ্গ-প্রতঙ্গগুলো পরিপূর্ণ বুঝা যায় না (যেমন বিভিন্ন ক্যালেন্ডারে কা'বা শরীফের ছবি, সেখানে লক্ষ লক্ষ মানুষের ছবি ছোট ছোট পিঁপড়ার মতো দেখায় ) তাহলে এমন ছবি ব্যবহার করা বা ঘরে রাখা জায়েয। যদিও তা বানানো না-জায়েয। (ফাতাওয়ায়ে শামী খ.১ পৃ.৬৪৯, তাছবীর কী শরয়ী আহকাম পৃ. ৮৩)


ফটো যদি কোন থলি, গিলাফ কিংবা কোন বাক্সে বন্ধ অবস্থায় থাকে তাহলে উক্ত পাত্রসমূহ ঘরে রেখে ব্যবহার করা জায়েয, যদিও তা বানানো ও তার ক্রয় না-জায়েয। (শামী ১/৬৪৯,তাসবীর কী শরয়ী আহকাম পৃ.৮৭)



ছবি বানিয়ে বা ফটো তোলে  তার মূল্য গ্রহণ করার বিধান

বিনা প্রয়োজনে কোন প্রাণীর ছবি প্রস্তুত করার পর প্রস্তুতকারীর জন্য যেমন তার মূল্য নেয়া না-জায়েয তেমনি ক্রয়কারীর জন্য তার মূল্য দেয়াও না-জায়েয, এজন্য স্টুডিও ইত্যাদিতে ছবি বানানোর কাজে চাকুরী করাও না-জায়েয। তবে চিত্রকর ছবি বানাতে যে রং ইত্যাদি ব্যয় করেছে তার মূল্য দিয়ে দিবে।



No comments

Powered by Blogger.