রিদ্দার যুদ্ধ

রিদ্দার যুদ্ধ 




অনেক অনেক ত্যাগ আর প্রানের বিনিময়ে 
আবু বকর (রাঃ) এর খিলাফতের বেশীর ভাগ সময়ই রিদ্দা যুদ্ধে পরিপূর্ণ ছিল। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) এর ওফাতের খবর প্রচারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই একশ্রেণীর লোক মদীনায় ইসলামী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করে। কিছু গোত্র যাকাত দিতে অস্বীকার করে। একই সময় মুহাম্মাদ (সাঃ) এর সাফল্য অনেকের মনে নবু্য়ত দাবীর আকাঙ্খা জাগিয়ে তোলে। 

এরা হল আসাদ আন্‌সি, মুসায়লামা, তুলায়হা এবং সাজাহ্‌ নামের এক খ্রীস্টান রমণী। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) এর ওফাতের খবরে ভন্ড নবীদের বিদ্রোহ প্রকাশ্য রূপ নেয়। এইসব ভন্ড নবী ও বিদ্রোহীদের পরিচালিত আন্দোলন রিদ্দা আন্দোলন (Apostasy Movement) নামে পরিচিত। 



আবু বকর (রাঃ) সাহস ও দৃঢ় সংকল্পের সাথে এই বিদ্রোহ দমণ করেন। খলিফা মুসলিম সৈন্যদলকে এগারটি ভাগে বিভক্ত করেন। প্রত্যেকটি সৈন্যদলকে একজন অভিজ্ঞ সেনাপতির অধীনে দিয়ে আরবের বিভিন্ন অংশে প্রেরণ করেন। খলিফা স্বয়ং প্রধান সেনাপতির দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। প্রথমেই মহাবীর খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ) তুলায়হাকে পরাজিত করেন। 



বানু আসাদ গোত্রকে ক্ষমা করা হলে তুলায়হা মদীনায় এসে ইসলাম গ্রহণ করে। তুলায়হাকে দমণ করার পর খালিদ (রাঃ) তামিম গোত্রের আনুগত্য লাভ করেন এবং বানু ইয়ারবু গোত্রের নেতা যে ভন্ড নবী সাজাহ্‌র দলে যোগ দিয়েছিল তাকে পরাজিত ও নিহত করেন। খলিফা ইকরামা (রাঃ) ও শুরাহবিল (রাঃ) কে মুসায়লামার বিরুদ্ধে প্রেরণ করেন। 



পরবর্তীতে তিনি খালিদ (রাঃ) কে তার বিরুদ্ধে পাঠান। ৬৩৩ খ্রীষ্টাব্দে খালিদ (রাঃ) মুসায়লামাকে ইয়ামামার যুদ্ধে পরাজিত করেন। মুসায়লামাসহ বানু আসাদ গোত্রের অসংখ্য লোক মারা যায়। অন্যদিকে বানু বকর ও পারস্যের সম্মিলিত বাহিণী পরাজিত হলে বাহরায়েন ও ওমানের বিদ্রোহ দমন হয়। দক্ষিণ ইয়ামেনে (যেখানে সর্ব প্রথম বিদ্রোহ শুরু হয়) ভন্ড নবী আসাদ আন্‌সির অনুসারীদের দমন করতে খলিফা মুহাজীর (রাঃ) কে নিয়োগ করেন। 



তিনি ইয়ামেনে শান্তি স্থাপন করে হাযারমাউতের দিকে অগ্রসর হোন। হাযারমাউতের পূর্ব ও পশ্চিম দিক হতে যথাক্রমে ইকরিমা (রাঃ) এবং মুহাজীর (রাঃ) অগ্রসর হয়ে বিদ্রোহীদের পরাজিত করেন। হাযারমাউত প্রদেশই সবার শেষে আত্মসমর্পণ করে এবং এই বিজয়ের মধ্য দিয়েই রিদ্দা যুদ্ধের অবসান হয়। খলিফা ভন্ড নবীদের বিরুদ্ধে যেমন কঠোর মনোভাবের পরিচয় দেন তেমনই যাকাত অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে একইরূপ অবস্থান নেন। 



তাদের বিরুদ্ধে তিনি আলী (রাঃ), তালহা (রাঃ) ও যুবাইর (রাঃ) কে প্রেরণ করেন। তারা বিদ্রোহ দমন করলে যথারীতি যাকাত আদায় হতে লাগল। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) এর ওফাতের এক বছরের মধ্যে আবু বকর (রাঃ) রিদ্দা যুদ্ধ সফলভাবে পরিচালনা করেন এবং সকল বিদ্রোহীদের দমন করে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। 

No comments

Powered by Blogger.