'ওয়াজ' মাহফিল কেন করবেন! লক্ষ্য উদ্দেশ্য কি হ‌ওয়া উচিত জেনে নিন শরিয়তের মূল ব্যাখা


why-do-Waz-Mahfil-what-should-be-objective



ওয়াজ মাহফিল শুধু এই যুগে নয়, যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। ওয়াজ মাহফিল শুধু আমাদের দেশেই হচ্ছে এমনটিও নয়, পৃথিবীর সব দেশেই ওয়াজ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। ওয়াজ মাহফিল মানুষকে ধর্মের প্রতি অনুপ্রাণিত করার জন্য‌ই হয়ে থাকে। অতিব প্রয়োজনীয় ধর্মীয় অনুসঙ্গ গুলো বুঝে নেয়ার জন্য। বলতে হবেই ওয়াজ মাহফিল প্রয়োজন। 


প্রত্যেক এলাকায় হক্কানী উলামায়ে কেরামের মাধ্যমে সম্পূর্ণ অনাড়ম্বরভাবে বছরে একবার বা একাধিক বার মাহফিল করা উচিত। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে ধর্মের চর্চা থাকে। মানুষ ধর্মীয় অনুসঙ্গ গুলো জানতে পারে খুব সহজেই।
কিন্তু যেনতেন ভাবে ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করলে চলবে না, এটি যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনই এর আয়োজন করতে হবে দেখেশুনে গুরুত্ব সহকারে।


সব কিছুরই সুনির্দিষ্ট কিছু উদ্দেশ্য এবং নিয়মকানুন থাকা দরকার। ওয়াজ মাহফিল একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান বিধায় এর নিয়মকানুন গুলো ভালো ভাবেই মানতে হবে, নিম্নে দেওয়া হলো ওয়াজ মাহফিলের সঠিক নিয়ম।


(১) হক্কানী উলামায়ে কেরামকে আমন্ত্রণ জানাতে হবে। বিশেষ করে যারা ওয়াজের বিনিময় গ্রহণ করেন না, এমন বক্তাকেই প্রাধান্য দিতে হবে। কারণ ওয়াজ করা নবী রাসুলগনের কাজ। নবী রাসুলগণ ওয়াজের বিনিময় গ্রহণ করতেন না। তাঁরা একমাত্র আল্লাহ থেকে বিনিময় পাওয়ার আশায় ওয়াজ করতেন। (সূরায়ে ইয়াসীন:২১ শু‘আরা: ১২৭)


(২) অনেক রাত পর্যন্ত ওয়াজ মাহফিল বিলম্বিত না করা। রাত দশটা এগারোটার মধ্যেই মাহফিল শেষ করা। আজকাল অনেক স্থানে সারা রাত ওয়াজ করার নিয়ম চালু হয়ে গেছে, এটা কিছুতেই উচিত নয়। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ততক্ষণ ওয়াজ করতে বলেছেন যতক্ষণ লোকদের আগ্রহ থাকে। অনেক রাত পর্যন্ত বিলম্বিত হলে মানুষের আগ্রহ কমে যায়। 


(৩) সময় মতো এ'শার নামায জামা‘আতের সাথে পড়ে নিবে। মাহফিলের মাইক দ্বারা পার্শ্ববর্তী মসজিদের জামা‘আতের কোন ধরণের সমস্যা না হয়। মাস‌আলা আছে এ'শার নামাজ বিলম্বিত করা মাকরুহ। তাই উত্তম সময়ের মধ্যে নামাজ আদায় করে নিতে হবে। 


(৪) মাহফিলের মধ্যে নামাযসহ ইসলামের মূল আক্বিদা সমূহের আলোচনা করবে এবং ইসলামের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আমলের বাস্তব প্রশিক্ষণ দিবে যা সাধারণ মানুষ খুব সহজেই শিখে নিতে পারে। 


(৫) ওয়াজ মাহফিলের দাওয়াত দিয়ে চাঁদা কালেকশন করা যাবে না। কারণ প্রচারপত্রে ওয়াজ শুনানোর ঘোষনা বা ওয়াদা করা হয়। অর্থের প্রয়োজন হলে জনসাধারণদের ডেকে পরামর্শ সভা করবে এবং সাহায্যের আবেদন করবে।


(৬) চুক্তি করে ওয়াজের বিনিময় নেয়া বক্তাকে আমন্ত্রণ করা যাবে না।আমলহীন ও আক্বীদাহীন আলেম এবং টিভির কোন বক্তাকে আমন্ত্রণ করা যাবে না কারণ এধরণের বক্তার বয়ানের দ্বারা জনগণের মধ্যে দ্বীনের পরিবর্তে দুনিয়ার খারাপ কৌতুহল সৃষ্টি হবে। এধরনের বক্তার লক্ষ্য থাকে মানুষকে মনোরঞ্জন করা। 


(৭) ওয়াজ মাহফিলের মধ্যে ভিত্তিহীন কিচ্ছা-কাহিনী বলে শ্রোতাদের হাসানো বা কাঁদানোর মন মানসিকতা পরিহার করতে হবে। স্বল্প জ্ঞানের বক্তা কিন্তু কন্ঠ তার শ্রুতিমধুর হ‌ওয়ার কারণে তাকে আমন্ত্রণ জানানো যাবে না কারণ এটি হল স্পষ্ট কেয়ামতের আলামত। 


(৮) ওয়াজ মাহফিল শেষে দাওয়াত, শিরনী তাবরকের নামে এধরনের কোনকিছু বিতরণের ব্যবস্থা করা যাবে না। এতে মানুষের মনোযোগ নষ্ট হয়। মাহফিলের মূল উদ্দেশ্য নষ্ট হয়। এধরনের ওয়াজ মাহফিল দ্বারা কোন উপকার হয় না। (বুখারী শরীফ হাদীস নং ২৬৯৭, মুসলিম শরীফ হাদীস নং ১৭১৮, রদ্দুল মুহতার: ২/১৪০)


(৯) ওয়াজ মাহফিলের রাস্তার মধ্যে কোন গেইট বা তোরণ বানানো যাবে না, কিংবা নানান রঙের পতাকা লাগানো যাবে না। স্টেজের মধ্যে কোন আলোক সজ্জা করা যাবে না। প্রয়োজনীয় লাইটের অতিরিক্ত লাইট না লাগানোই উত্তম।এগুলো অপচয় ছাড়া কিছুই নয়। মাহফিলের বাইরে দূরে দূরে মাইক লাগানো যাবে না। কারণ এর দ্বারা লোকদেরকে অনর্থক বিরক্ত করা হয়।
 

(১০) ওয়াজ মাহফিলের প্রচারপত্রে দিন তারিখ ও স্থান উল্লেখ করতে হবে। বক্তাদের নাম ঘোষনার প্রয়োজন নেই। মানুষদেরকে ব্যক্তির আকর্ষনে জমা না করে দ্বীনের আকর্ষনে জমা করতে হবে।


(১১) সাধারণ মানুষের চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে মাহফিল করা থেকে বিরত থাকুন। এতে মানুষদের কষ্ট দেয়া হয়, যা শরী‘আত বিরোধী কাজ। তাই মসজিদ বা কোন খোলা মাঠ-ময়দানের মধ্যে মাহফিলের ব্যবস্থা করতে হবে।


বাংলাদেশে এখন ভরপুর ওয়াজ মাহফিলের মৌসুম। আগে ওয়াজ মাহফিল হতো দুই চার গ্রাম পর কোনো এক বিখ্যাত মাদ্রাসা, মসজিদ কিংবা স্কুলের মাঠে কিন্তু বর্তমানে ওয়াজ মাহফিল রাস্তার মোড়ে মোড়ে, অলিতে গলিতে, অখ্যাত বিখ্যাত সব জায়গায়। এই সব ওয়াজ মাহফিলে বক্তা হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে যেনতেন হুজুর দিয়ে, যারা কোন রকম পাশ করে বের হয়েছে। 


তাই এই বিষয় গুলো নিয়ে ভাবার এখন‌ই সঠিক সময়। মানুষ এই সব ওয়াজ মাহফিল এখন পিকনিকের মতো উপভোগ করছে, হেদায়েত একদম নিহায়েত। তাই ধর্মের নামে রং তামাশা বন্ধ করতে হবে। 






No comments

Powered by Blogger.