কুরআন শরীফ তিলাওয়াতের কতিপয় ভুলসমূহ
মহা গ্রন্থ আল কুরআন পৃথিবীর সবচেয়ে উৎকৃষ্ট কিতাব। যার একটি হরফও কেউ কোন দিন পরিবর্তন করতে পারবেনা। এই কিতাবের মর্যাদা অনেক বেশি। এই কিতাব আল্লাহ তায়ালা অলৌকিক ভাবে সারা পৃথিবী জুড়ে লাখো মুসলমানের হৃদয়ে গেঁথে দিয়েছেন, যেন কেউ কোন দিন এর ভুল প্রচার বা ভুল ব্যাখ্যা ছড়াতে না পারে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, আমাদের মধ্যে অনেকেই এখনও কোরআন শরীফ শুদ্ধ করে পড়তে জানে না, এর সাথে অনেক কুসংস্কার ছড়িয়ে পড়ছে। তাই শুদ্ধ করে কুরআন শরীফ শিক্ষা করা সকলের ঈমানী দায়িত্ব।
আজ আলোচনা করা হবে, কুরআন শরীফ তিলাওয়াতের কিছু মারাত্মক ভুলের ব্যাপারে, যেগুলো নিয়ে আলোচনা করা খুবই জরুরি। এগুলো আজই এখনই শুধরে নিতে হবে, অন্যথায় গুনাহগার হতে হবে।
১. হরফে লীন- (ক) মারূফ পড়তে হয় كيف (কাইফা) কে কায়ফা, لو (লাউ) কে লাও পড়া ভুল । (খ) নরম করে পড়তে হয়, ঝটকা দেয়া ভুল । (গ) তাড়াতাড়ি পড়তে হয়, মাদ্দ করা ভুল।
২. মদ্দের ব্যাপারে- (ক) এক আলিফ এক দুই হরকত পরিমাণ টান হবে, বেশী টানা ভুল । (খ) তিন, চার বা পাঁচ আলিফ মাদ্দের আওয়াজে তরঙ্গ সৃষ্টি করবে না । আওয়াজ নাকে নিবে না । মাদ্দে মুত্তাসিল ও মুনফাসিলের মধ্যে পার্থক্য স্পষ্ট হবে।
৩. গুন্নাহ ও ইখফা- উভয়টার পরিমাণ এক আলিফ । ইখফা অনেকটা বাংলা অনুস্বর (ং) -এর মত এবং গুন্নাহ “ন্না” এর মত । অনেকে ব্যতিক্রম করে থাকে, যা ভুল।
৪. ক্বলকলাহ- সামান্য ধাক্কা দিয়ে পড়তে হয়, বেশী ধাক্কা দেওয়া ভুল । অবশ্য এসব অক্ষরে তাশদীদ থাকলে ওয়াক্ফকালে অক্ষরটি দুবার উচ্চারিত হয়। সাধারণ ক্বলক্বলার ন্যায় একবার উচ্চারণ করা ভুল। যেমন- ابي لهب و وتب
৫. হরফের মধ্যে- (ক) ز “য” এর মত নরম হবে, “ঝ” এর মত শক্ত নয় । (খ) ض অনেকটা “জ” এর মত হবে, “দ” এর মত নয় । (গ) و এর শুরু ও শেষে ঠোঁট গোল হবে এবং মাদ্দ করে পড়তে হবে।
৬. সিফাতের মধ্যে- (ক) ض–এর استطا لت প্রতি খেয়াল করা হয় না । (খ) ز ص س এর সিফাত আদায় হয় না । (গ) حروف مستعليه এর মধ্যে আকার উচ্চারণ করে যা ভুল । অবশ্য যের অবস্থায় إستعللاء কম হওয়া জরুরী।
৭. হরকতের মধ্যে- (ক) َ যবর –এ আকার (া) উচ্চারণ হবে । যফলা (য্য)-এর মত, টেড়া উচ্চারণ ভুল । (খ) ِ যেরকে দাবিয়ে উচ্চারণ করতে হয়, “ে” -এর উচ্চারণ ভুল (গ) ُ পেশ উভয় ঠোঁট মিলার কাছাকাছি হবে, “ো” উচ্চারণ ভুল।
৮. ওয়াকফ এর অবস্থায়- (ক) ر পরিষ্কার শুনা যাবে, অধিকাংশেরই ر শুনা যায় না । (খ) তেমনিভাবে অনেকেরই ه সাফ হয় না বরং নরম হামযার মত হয় । আবার কেউ কেউ শক্ত করে উচ্চারণ করে তাও ভুল । (গ) ت এর উপর ওয়াক্ফ করার সময় অনেকে ه এর মত আওয়াজ বের করে, যা ভুল । (ঘ) غ দাবিয়ে উচ্চারণ করতে হয় কিন্তু বেশী দাবানো ভুল ।
(ঙ) তাশদীদ যুক্ত ر কে ওয়াক্ফের সময় অনেকে একটি ر উচ্চারণ করে, যা ভুল, বরং ر কে মাখরাজের মধ্যে সামান্য দেরী করে উচ্চারণ করবে, যাতে উভয় ر উচ্চারিত হতে পারে । উল্লেখ্য ر পুর ও বারিকের মধ্যে জরুরী অনেক কায়দা আছে । (হারদূয়ীর কায়দা দ্রষ্টব্য) (চ) ى মুশাদ্দাদ উচ্চারণে অনেকে “জ” এর মত আওয়াজ করে যা ভুল । বরং নরম করে, দু হরফ পরিমাণ উচ্চারণ করে আদায় করবে।
৯. লাহনে জলী- অনেকে ء (হামযাহ) কে ى (ইয়া) এবং ى (ইয়া) কে ء (হামযাহ)উচ্চারণ করে যা লাহনে জলী, যেমন-شَانِئَكَ هُوَ الْأَبْتَرُ
এর মধ্যে কে ى এবং مِنْ ثُلُثُى اليْل এর মধ্যে ى কে উচ্চারণ করা ভুল।
১০. হরূফে মুকত্বাআত- এর মধ্যে অনেকে তাজবীদের ইখফা, গুন্নাহ, ক্বলকলাহ, ইত্যাদি কায়দা জারী করে না, যেমন-كهيعص । উল্লেখ্য অনেকে নীরবে ক্বিরা‘আত পড়ার সময় তাজবীদের কায়দা জারী করে না। এ কারণে যুহরের নামায ক্বিরা‘আত লম্বা হওয়া সত্ত্বেও ৪/৫ মিনিটে শেষ হয়ে যায়, যা মারাত্মক ভুল। কারণ তাজবীদ তিলাওয়াতের হক। চাই তিলাওয়াত নীরবে হোক বা আওয়াজ করে করা হোক।
No comments