শরিয়ী বিধানে ব্যাংক ডিপোজিট'এর খুঁটিনাটি

Details of Bank Deposit in Shariah




আধুনিক বিশ্বে নিরাপদ লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে ব্যাংককে ব্যাবহার করা হয়। ঝুঁকি ঝামেলা নিয়েই বহু বছর ধরে চলছে এই খ্যাত। কিন্তু কথা হলো যারা ব্যাংক আবিষ্কার করেছেন তারা কেউ ইসলামের বিধি বিধান মোতাবেক এর নিতি মালা তৈরি করেনি, করবেও বা কি ভাবে তারা সবাই ছিলেন অমুসলিম। কিন্তু যারা ইসলাম ধর্মের অনুসারী তাদের অবশ্যই জেনে রাখা প্রয়োজন যে ব্যাংকে টাকা রাখা, ব্যাংক ডিপোজিট, ব্যাংক লোন এগুলো শরীয়ত সম্মত কিনা!


বর্তমানে অনেক দেশেই অনেক ব্যাংক হালাল ব্যাংকিং কিংবা শরীয়া ব্যাংকিং চালু করেছে কিন্তু কতখানি সেটা শরীয়ত সম্মত তাও জেনে রাখা ভালো। দেশে বর্তমানে ব্যাংকিং ডিপোজিট খুবই জনপ্রিয়, এতে ব্যাংকের আয়ের উৎস বেড়েছে, মানুষ নিজের কষ্টার্জিত টাকা নিরাপদে রাখতে পারেন।


কিন্তু এই ব্যাংক ডিপোজিট কতোখানি শরীয়ত সম্মত তাও জেনে রাখা প্রয়োজন। ব্যাংকিং পরিভাষায় ডিপোজিট কতো প্রকার, কোনটি শরীয়ত সম্মত আজ সেই বিষয়ে আলোচনা করা হবে। 


ব্যাংকিং পরিভাষায় ব্যাংক ডিপোজিট চার প্রকার
১. কারেন্ট একাউন্ট (Current Account)  বা চলতি হিসাব।
২. সেভিংস একাউন্ট (Savings Account )  বা সঞ্চয়ী হিসাব।
৩. ফিক্সড একাউন্ট (Fixed Deposit)  বা নির্ধারিত মেয়াদি সঞ্চয়।
৪. লকার (Locker)  তথা ব্যাংক থেকে লোহার বক্স ভাড়া নিয়ে তাতে টাকা পয়সা বা মূল্যবান সামগ্রী রেখে তা ব্যাংকের নিকট আমানত রাখা। (ফিকহী মাকালাত ৩/১৩-১৫)


ডিপোজিট গুলোর শরিয়ী অবস্থান 
প্রথম তিন প্রকার ডিপোজিট করজের হুকুমে যায় দুটি শর্তের কারণে, প্রথমত এই তিন প্রকারের (কারেন্ট, সেভিংস ও ফিক্সড) ডিপোজিট কারিগণ ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে তাদের অর্থের যামিন বা জিম্মাদার বানায়। দ্বিতীয়ত ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে তাদের গচ্ছিত অর্থের যথেচ্ছা ব্যবহারের সার্বিক ক্ষমতা প্রদান করে থাকে। চতুর্থ প্রকার তথা লকার (Locker) এটা বর্তমান প্রচলন ও শরয়ী দৃষ্টিকোণ উভয় বিবেচনায় আমানত হওয়ার ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। (ফিকহী মাকালাত ৩/১৮)


কারেন্ট একাউন্টে টাকা রাখার বিধান 
জান ও মালের নিরাপত্তার খাতিরে কারেন্ট একাউন্টে টাকা রাখা জায়িয আছে। যেহেতু কারেন্ট একাউন্ট হোল্ডারদেরকে ব্যাংক কর্তৃক কোন মুনাফা প্রদান করা হয় না। বরং তাদের থেকে উল্টা সার্ভিস চার্জ ও অন্যান্য চার্জ কাটা হয়। অতএব, কারেন্ট একাউন্টে টাকা রাখলে সুদি লেন-দেনে অংশগ্রহণ গণ্য হবে না। সুতরাং তা জায়িয আছে।


ফিক্সড ডিপোজিট ও সেভিংস একাউন্টে টাকা রাখার বিধান 
ফিক্সড ডিপোজিট ও সেভিংস একাউন্টে টাকা রাখা জায়িয নেই। কারণ এই উভয় প্রকার একাউন্ট হোল্ডারদেরকে ব্যাংক কর্তৃক মুনাফা প্রদান করা হয় এবং এই উভয় একাউন্টে গচ্ছিত টাকা ওলামাদের ঐক্যমতে করজের শামিল।


আর করজের বিনিময়ে লভ্যাংশ অর্জন করা শরীয়তে সূদ। অতএব ব্যাংক একাউন্ট হোল্ডারদেরকে মূল টাকার অতিরিক্ত যে টাকাই প্রদান করবে তা স্পষ্ট সূদ হবে। আর সূদ বৈধ হওয়ার কোন সুযোগ নেই। সুতরাং যে ব্যক্তি উল্লেখিত একাউন্টে টাকা রাখবে সে ব্যাংকের সাথে হারাম লেন-দেনে অংশীদার হয়ে যাবে। এ কারণে এটি শরিয়তের বিধানে অবৈধ। 


কোন মুসলমানের জন্য এই দুই প্রকার (সেভিংস এবং ফিক্সড ডিপোজিট) একাউন্টে টাকা রাখা জায়িয নেই । কেউ রেখে থাকলে সুযোগ থাকলে সে একাউন্ট পরিবর্তন করে চলতি হিসাব খুলে সেখানে টাকা রাখতে হবে। 


আর যদি কোন কারণে চলতি হিসাব খুলতে অপারগ হয় এবং জান ও মালের নিরাপত্তার জন্য সেভিংস একাউন্ট খুলতে বা জারী রাখতে বাধ্য হয়, তাহলে সে ঐ অর্থ নিজের কাজে, পরিবারের মাঝে অথবা ব্যাবসায় লাগাতে পারবেন না। ঐ একাউন্ট থেকে যে সূদের টাকা আসবে তা সাওয়াবের নিয়ত ছাড়া অর্থাৎ বিনা স্বার্থে গরীব মিসকিনদেরকে বা মসজিদ মাদরাসায় দিয়ে দেবে।


No comments

Powered by Blogger.