মসজিদ নির্মাণ এবং রক্ষণাবেক্ষণ
মসজিদ পৃথিবীর পবিত্রতম স্থান। মসজিদ আল্লাহ তাআলার ঘর, মসজিদ সম্পর্কে আমরা সবাই জানি, কিন্তু মসজিদের পবিত্রতা রক্ষা করতে পারিনা কেউই। মসজিদের সাথে চলছে হার-হামেশা বেয়াদবি। মসজিদে জোরে জোরে কথা বলা, মসজিদে পা মেলে বসা, মসজিদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে হাত পা ছেড়ে বসা ইত্যাদি স্পষ্ট আদবের পরিপন্থী।
মুহিউস সুন্নাহ হযরত মাওলানা শাহ আবরারুল হক রহ. বলতেন যে তোমরা মসজিদ ও মাদরাসাকে সুন্নী বানাও তাহলে পুরা মহল্লা সুন্নী হয়ে যাবে। সুতরাং মসজিদ হতে হবে আদব কায়দা এবং সুন্নাতের কেন্দ্রস্থল, আজ সেই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
✓ মসজিদের গেইটে মসজিদে ঢোকার দু‘আ লিখে দিতে হবে। অনুরূপভাবে বের হওয়ার দু'আও লিখে দিতে হবে, যাতে মানুষের মনে পড়ে যায়। বর্তমানে প্রায় সবগুলো মসজিদেই ঢোকা ও বের হওয়ার দু‘আ লিখা হয়, কিন্তু কিছু মসজিদে শুধু ঢোকার দোয়া থাকে, না হয় শুধু বের হওয়ার দোয়া থাকে, এমন ভুল করা যাবে না,দিলে দুটোরই দিতে হবে।
✓ মসজিদের ওযূখানা এমনভাবে নির্মাণ করতে হবে, যাতে পানি অপচয় না হয়, এরজন্য গুনাহগার হতে হবে। মসজিদ কর্তৃপক্ষ এই বিষয়টি নিয়ে সঠিক তদারকি করতে হবে। একটু উদাসীনতার জন্য গুনাহের ভার বহন করতে হবে।
✓ মসজিদের মুসল্লিদের স্বার্থে প্রত্যেক মসজিদের নিজস্ব টয়লেট এবং ওযূখানা থাকা প্রয়োজন। মসজিদ কমিটির জন্য এর ব্যবস্থা করা একান্ত জরুরী। সর্বদা টয়লেট ওযূখানা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে, কোন দুর্গন্ধ যেন না ছড়ায়।
✓ মুসল্লীদের কষ্ট হয় এমন কাজ করতে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কঠিন ভাবে নিষেধ করেছেন। (তিরমিযী হা: নং ২৪৬-৪৭) যেমন,
১. মসজিদে মুসল্লীদের জন্য আরামদায়ক বিছানার ব্যবস্থা করার চেষ্টা করা, যাতে বয়স্ক মুসল্লীদের নামায আদায় করতে সুবিধা হয়।
২. মসজিদের জন্য দুই সেট বিছানা রাখা উচিত, যাতে করে একটা পরিষ্কার করার সময় অপরটা বিছানো যায়।
৩. গরমের সময় কার্পেট না উঠিয়ে বয়স্কদের জন্য এক কাতার বা দুই কাতার রেখে দেওয়া উচিত, অনেকেই হাঁটুর ব্যথায় কষ্ট পান।
✓ মসজিদের ভেতরে সামনের দেয়ালে মিম্বারের দুই পাশে কিছু লিখা বা লেখনি টাঙ্গানো, রঙ্গীন নকশা ও কারুকাজ কোনো কিছুই করা উচিত নয়, এতে করে মুসল্লীদের নামাযের একাগ্রতা নষ্ট হয়ে যায়। নামাযরত অবস্থায় অনিচ্ছা সত্ত্বেও বারবার চোখ যায়। তাই যা কিছু করার পেছনের দেয়ালে কিংবা পাশের দেয়ালে করতে হবে।
✓ অধিকাংশ স্থানে মসজিদের ঠিক মাঝে মেহরাব তৈরী করা হয়, তার ঠিক ডান পাশে মিম্বর তৈরী করা হয়। এতে ইমাম বাম দিকে চেপে দাঁড়াতে বাধ্য হন। এই কাজটা সম্পূর্ণ মাকরূহ। মসজিদ কর্তৃপক্ষ খেয়াল রাখবেন, যেন মেহরাব তৈরী করার সময় এ ব্যাপারে কোনো অবহেলা না হয়।
✓ যদি বড় আকারের মেহরাব হয় তাহলে তার ডান পার্শ্বে মিম্বার বানানো সত্ত্বেও ইমাম মাঝে দাঁড়াতে সমস্যা হয় না। কিন্তু মেহরাব যদি ছোট আকারের হয় এবং মেহরাবের ভিতরে ডান দিকে মিম্বার বানাতে চায় তাহলে মেহরাবকে মসজিদের একদম মাঝে না বানিয়ে একটু ডান দিকে নির্মাণ করা উচিত। তাহলে ইমামের কাতারের একদম মাঝে দাঁড়াতে সমস্যা হবে না। (আবূ দাউদ হাদীস নং ৬৮১)
✓ মসজিদের মিম্বার তিন ধাপ বিশিষ্ট হতে হবে এবং প্রত্যেকটি ধাপ এতটুকু উঁচু হবে, যাতে খতীব সাহেব সেখানে আরামের সাথে বসতে পারেন। তিনের অধিক ধাপ বিশিষ্ট মিম্বার বানানোর কোন প্রমাণ রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীসে নেই। হ্যাঁ তৃতীয় ধাপের উপর হেলান দেয়ার জন্য আলাদা ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
✓ কমিটি, মোতাওয়াল্লীদের দায়িত্ব হল, মসজিদের সকল কুরআন মাজীদ গিলাফে রাখার ব্যবস্থা করা এবং কিছু দিন পর পর গিলাফ পরিস্কার করার ব্যবস্থা করা। আমাদের দেশের অনেক মসজিদে দেখা যায় কোরআন মাজিদের উপর ধূলোবালি জমে থাকে, এলোমেলো ভাবে পড়ে থাকে এগুলো অত্যন্ত দুঃখজনক ব্যাপার।
✓ ছেঁড়া ফাটা কুরআন শরীফের কপি যার হরফ গুলো বোঝা যায় না, ঠিক করে পড়ার যোগ্য করা যাবে না সেগুলো পবিত্র কাপড়ে মুড়ে গোরস্থানের কিনারায় দাফন করে দেওয়া। (আলমগীরী-৫/৩২৩)
কোরআন মাজিদ তাকে রাখার পদ্ধতি
১. তাকের মধ্যে কোরআন মাজীদ সুন্দর করে সাজিয়ে রাখতে হবে
২. কোন কোরআন শরীফ উপুড় করে রাখা যাবে না
৩. দুই কোরআনের মাঝে রেহাল রাখা যাবে না
৪. কোরআনের উপর তাফসিরের কিতাব রাখা যাবে না
৫. কোরআনের উপর খুতবা ও অন্যান্য কিতাব রাখা যাবে না
৬. মিম্বরের উপর রেহাল ছাড়া সরাসরি কোরআন রাখা যাবে না
৭. কোরআন তিলাওয়াতের সময় বা বন্ধ করার সময় কোরআনের উপর চশমা, কলম, চিরুনি ইত্যাদি রাখা যাবে না। এসবই কুরআনের সাথে বে-আদবী। সকলেই এই বিষয়টি খেয়াল রাখবেন। (সূরায়ে হজ্জ-৩২, হিন্দিয়া-৫/৩২৩, ইমদাদুল ফাতাওয়া-৪/৬২২)
No comments