ওলীমা কাকে বলে? ওলীমার প্রসঙ্গ এবং প্রস্তাবনা
ইসলামী শরীয়ত মতে বিয়ে করা ফরয। উপযুক্ত হওয়ার সাথে সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে যাওয়া উত্তম। বিবাহের মধ্যে শরিয়ত সম্মত একটি কাজ হচ্ছে ওলিমা, যাকে আজ কাল বলা হয় বৌভাত। ওলীমার শাব্দিক অর্থ খানা খাওয়ানো। শরী‘আতের পরিভাষায় বিবাহের পর ছেলে বা তার পরিবারের পক্ষ থেকে যে খানার আয়োজন করা হয় তাকে ওলীমা বলে।
✓ শরীয়তে ওলীমা'এর বিধান
ওলীমা করা সুন্নাত। হাদীস শরীফে এসেছে, হযরত আনাস রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রাযি. এর শরীর বা কাপড়ে হলুদ রঙের চিহ্ন দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, এটা কী ? জবাবে তিনি বললেন, আমি একটি খেজুর দানার পরিমাণ সোনা দিয়ে একটি মেয়েকে বিবাহ করেছি।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বললেন, আল্লাহ তোমার বিবাহে বরকত দিন। আর তুমি ওলীমা করো যদিও একটি বকরি দ্বারা হোক না কেনো। বুখারী ১/৭৭৭, মুসলিম ১/৪৬১ তার অর্থ বিয়ে করার পর ছেলে পক্ষ নিজের বাড়িতে দাওয়াত দেওয়া, খাওয়ার আয়োজন করা সুন্নাত।
✓ ওলীমা'এর সঠিক সময়
বিবাহের তিন দিনের মধ্যে যেকোনো সময় ওলীমার আয়োজন করা যেতে পারে। তবে বর-কনের বাসর হওয়ার পর ওলীমা করা উত্তম। এতে বিবাহের পরিপূর্ণ জানান হয়ে যায়। ফাতহুল মুলহিম ৬/৪০৮
✓ ওলীমা'এর দাওয়াত গ্রহণ করার বিধান
ওলীমার দাওয়াত গ্রহণ করা সুন্নাত। হাদীস শরীফে এসেছে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যখন তোমাদের কাউকে ওলীমার দাওয়াত দেওয়া হয় তখন সে যেন তাতে উপস্থিত হয়। বুখারী ১/৭৭৭, মুসলিম ১/৪৬১
যদি উপস্থিত হওয়ার পর ওলীমায় শরীয়ত বিরোধী কার্যকলাপ দেখা যায়, তাহলে বন্ধ করার চেষ্টা করবে,যদি অপারগ হয় তাহলে সে স্থান ত্যাগ করা উচিত। কেননা শরীয়ত বিরোধী কাজে অংশগ্রহণ করা আর আয়োজন করা একই কথা। তাই এক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
✓ ওলীমা'য় কয়েকটি বর্জনীয় কাজ
ওলীমার মতো একটি সুন্দর সামাজিক এবং শরীয়ত সম্মত কাজে আপনি কোনো অনিয়ম করতে পারেন না,কারণ ইসলামের মতো এতো সুন্দর সাজানো আয়োজনের নির্দেশনা আপনি কোথাও পাবেন না। কিন্তু দুঃখের বিষয় আজকাল আমাদের সমাজে ওলীমা নিয়ে হচ্ছে গুরুত্বর অনিয়ম। তাই মারাত্মক ভুল থেকে বেঁচে থাকার উপায়,,
১. ছেলে নিজের সামর্থ্যের বাহিরে ওলীমার ব্যবস্থা করতে পারবে না এবং এর জন্য ধার-কর্জ করারও প্রয়োজন নেই। যদি কোনো কিছুর সামর্থ্য না থাকে তবে শুধু মিষ্টিমুখ করিয়ে দিবে।
২. ওলীমাতে পেট ভরে খাওয়ানো জরুরী নয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর এক স্ত্রীর ( উম্মে সালামা রাযি.) ওলীমা করেছিলেন মাত্র দুই মুদ যব দ্বারা। বুখারী ১/৭৭৭
৩. ওলীমার দাওয়াতে শুধু ধনী ও সমাজের মান্য গণ্য ব্যক্তিবর্গকে দাওয়াত করা চলবে না। গরীব শ্রেণীকেও দাওয়াত করতে হবে। হাদীসে এসেছে, হযরত আবূ হুরাইরা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, সর্বাপেক্ষা মন্দ খানা হচ্ছে সেই খানা, যাতে কেবল ধনীদের দাওয়াত দেওয়া হয়, আর গরীবদের বাদ দেওয়া হয়। বুখারী ১/৭৭৭, মুসলিম ১/৪৬১
৪. আমাদের সমাজে বরযাত্রার নামে যে ধূমধাম পার্টি করা হয়, এগুলো একদম নাজায়েজ। অনেক জায়গায় বর পক্ষের এই শর্ত করা যে, আমাদের একশ, দুইশ লোককে খাওয়াতে হবে, অর্থাৎ বড় ধরনের সংখ্যা চেপে দেওয়া হয়, এসব কার্য শরীয়ত সম্মত নয়।
মুহিউস সুন্নাহ হযরত মাওলানা শাহ আবরারুল হক রহ. বলতেন, এটা হচ্ছে ডাকাতির খানা। হাদীসে এধরণের দাওয়াতে অংশগ্রহণকারীদের ব্যাপারে এসেছে যে, তারা চোর হয়ে প্রবেশ করলো আর ডাকাত হয়ে বের হলো। সুতরাং এধরণের খানা থেকে দূরে থাকাই ভালো।
৫. শরী‘আতের দৃষ্টিতে বিয়েতে মাত্র দুই ধরনের খরচ থাকে মহর ও ওলীমা। এই উভয় খরচ বর পক্ষকেই বহন করতে হবে। মেয়ে পক্ষের উপর দাওয়াত, যৌতুক ইত্যাদি কোনো কিছুর বোঝা চাপানো জায়িয নেই।
No comments