খতনা করানোর উপযুক্ত সময় এবং উপকারিতা

appropriate-timing-benefits-circumcision



খতনা করা সুন্নাত। এটা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিয়ার বা নিদর্শন। ধর্মীয় দিক থেকে খতনা করানোর যেমন গুরুত্ব রয়েছে, তেমনি চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এর অনেক উপকারিতা রয়েছে।‌ তাই এই কাজটি দ্রুত সম্পন্ন করতে ডাক্তাররাও তাড়া দিয়ে থাকেন। 


জন্মের পর থেকে বালেগ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত যেকোনো সময় খতনা করা যায়। তবে সাত বছরের আগে করানো উত্তম ও মুস্তাহাব। কেননা ছোট বেলায় খতনা করালে অনেক গুলো সুবিধা হয়। খতনা করাতে অনেকেই ভয় পায়, তাই ছোট বেলায় কারালে ভয় ভীতির ব্যপারটাও থাকে না। 


যদি বালেগ হওয়ার পূর্বে কারো খতনা না হয়ে থাকে বা কোনো অমুসলিম বালেগ হওয়ার পর মুসলমান হয়, তাহলে বালেগ হওয়ার পর খতনা করার বিধান বাকী থাকবে। নবী মুসলিম হ‌ওয়ার যত দ্রুত সম্ভব খতনা সেরে ফেলতে হবে। তখন খতনা করানোর কষ্ট সহ্য করার মতো ক্ষমতা থাকে। 


✓ খতনার পরিমাণ 
পুরুষাঙ্গের অগ্রভাগে যে চামড়া রয়েছে তার অর্ধেকের চেয়ে বেশি কাটা হলে তাকে খতনা বলা হবে। আর অর্ধেক বা তার চেয়ে কম কাটা হলে তাকে খতনা বলা হবে না। সুতরাং যদি কাউকে খতনা করানোর পর তার অগ্রভাগের চামড়া লম্বা হয়ে পুরুষাঙ্গের অগ্রভাগকে প্রায় ঢেকে নেয়, তাহলে তাকে পুনরায় খতনা করাতে হবে। রদ্দুল মুহতার ১০/৫১৫


তাই এই মারাত্মক ভুল থেকে বাঁচতে হলে, প্রথমত ভালো অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যক্তি দ্বারা খতনা করানোর ব্যবস্থা করা। কেননা দ্বিতীয় বার অনেক কষ্টদ্বায়ক হয়। এর চেয়ে একবার‌ই নিয়ম মতো খতনা করানোর প্রয়োজন। 


✓ খতনা করানোর উপকারিতা সমূহ 
১. প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের ক্ষেত্রে খতনা করালে লিঙ্গের ক্যান্সার প্রতিরোধ হয় ও যৌনবাহিত রোগের ঝুঁকি কমে। 
২. পুরুষাঙ্গের মাথার বাড়তি চামড়ার নিচে এক ধরনের সাদা পদার্থ জমে এবং এটিই পুরুষাঙ্গের ক্যান্সারের জন্য দায়ী। 
৩. লিঙ্গের মাথায় প্রদাহ, চুলকানি ও জ্বালাপোড়া করলেও খতনা করালে তা সেরে যায়। 
৪. খতনার দ্বারা শরীর অধিক পাকপবিত্র ও পরিচ্ছন্ন থাকে। 
৫. খতনা করালে শিশুদের মূত্রপথের সংক্রমণ প্রতিরোধ হয়। 
৬. প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া, জ্বর, খাবারে অনীহা এবং স্বাস্থ্য ভালো না হওয়া ইত্যাদি রোগ থেকে ঝুঁকিমুক্ত থাকে। 
৭. পুরুষের খতনা এইচআইভি বা এইডস প্রতিরোধে একটি কার্যকর ভূমিকা রাখে, এটি আংশিক সুরক্ষা দেয়। 


✓ খতনা নিয়ে প্রচলিত ভুল এবং ফেতনা 
অনেক জায়গায় খতনা উপলক্ষে আত্মীয়-স্বজন পাড়া-প্রতিবেশীদের জন্য বিরাট আকারে দাওয়াতের আয়োজন করা হয় এবং সেখানে ছেলেদের জন্য কাপড়-চোপড় ও হাদিয়া-তোহফা নিয়ে আসা হয়, এসব সুন্নাত পরিপন্থী ও পরিত্যাজ্য কাজ। এগুলো থেকে বিরত থাকতে হবে।


অনেক জায়গায় খতনা করানোর পর ছেলের জন্য সোনার চেন নিয়ে আসার জন্য নানা নানিকে বাধ্য করা হয়। না হয় পারিবারিক ভাবে তাদের হেনস্থা করা হয়, এগুলো শরীয়ত বিরোধী কাজ, একদম করা যাবে না। 


বিখ্যাত তাবেয়ী হযরত হাসান বসরী রহ. বলেন, হযরত উসমান ইবনে আবিল আস রাযি. কে কোনো এক খতনার অনুষ্ঠানে দাওয়াত করা হলো, তখন তিনি তা গ্রহণ করলেন না। 


পরে যখন তাকে এর কারণ জিজ্ঞাসা করা হলো তখন তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগে আমরা খাতনার দাওয়াতে যেতাম না এবং আমাদেরকে এর জন্য দাওয়াতও দেওয়া হত না। কিন্তু এই কাজটি আজ আমাদের সমাজে একরকম বাধ্য করে দেওয়া হয়েছে।



No comments

Powered by Blogger.