আস্থার প্রতিদান

 

reciprocation-trust



তারা ছিলেন ত্রিশ জন। মরুপথের যাত্রী। আরবের কোনো এক এলাকায় দীন প্রচারের জন্যে যাচ্ছিলেন। তাদের পাঠিয়েছেন স্বয়ং রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। পথি মধ্যে যাত্রা বিরতি হলো। ত্রিশজনের এই কাফেলাটি একটি গ্রামে অবস্থান নিলো। 


সে সময় আরবের মেহমানদারির খ্যাতি ছিল বিশ্বজোড়া। তখন কোনো কাফেলা কোথাও উপস্থিত হলে মেহমানদারির কথা বলতে হতো না। মানুষ নিজে থেকেই পরম হৃদ্যতার সাথে কাফেলার মেহমানদারি করতো। কিন্তু এই গ্রামের আরবের চিরায়ত এ নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটলো। 


তারা রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম'এর সাহাবীদের আতিথ্য গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানালো। কাফেলার সবাই নৈরাশ। খাবারের জন্যে অন্য উপায় বের করতে হবে। ঠিক এমন সময় গ্রামের মানুষ দল বেঁধে উপস্থিত হলো তাদের কাছে। কী ব্যাপার? 


জানা গেলো, গোত্রের সর্দারকে বিচ্ছু দংশন করেছে। বিষের যন্ত্রণায় সে অস্থির। কিন্তু এর কোনো প্রতিষেধক তারা খুঁজে পাচ্ছে না। তখন‌ই নিরুপায় হয়ে সবাই কাফেলার কাছে এসেছে। তাদের উদ্দেশ্য এমন কোনো লোকের সন্ধান করা যে ঝাড়ফুঁকের মাধ্যমে বিষ নামাতে পারে।


এই কাফেলাতে ছিলেন হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রাযিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু। তিনি ভাবলেন, এই তো সুযোগ। ইচ্ছে করলে আমার সাথীদের জন্যে কিছু খাদ্যের ব্যবস্থা করতে পারি। তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ আমি ঝাড়ফুঁক জানি। কিন্তু বিনিময়ে আমাকে কিছু দিতে হবে।


গ্রামের লোকেরা আশার আলো দেখতে পেলো। আবু সাঈদ খুদরীর কথায় তারা এক বাক্যে রাজি হয়ে গেল। বললো, আমরা তোমাকে ত্রিশটা ছাগল দিবো। আবূ সাঈদ খুদরী সর্দারের ক্ষতস্থানে ঝাড়ফুঁক করলেন। বর্তমানে ঝাড়ফুঁক বলতে আমরা যেমন ‘ছু মন্তর ছু’ টাইপের ঝাড়ফুঁক বুঝি, তেমন কিছু না। 


তিনি শুধু সাতবার সূরা ফাতিহা পড়ে তার ওপর দম করলেন। সে সম্পূর্ণ ভালো হয়ে গেলো। শর্ত হিসেবে গোত্রের লোকেরা ত্রিশটি ছাগল পাঠিয়ে দিলো। সেই সাথে পাঠালো অনেক খাদ্য। কাফেলার সবাই ছিলো ক্ষুধার্ত। তৃপ্তির সাথে তারা সে খাবার খেলো। মেহমানদারীর খাবার খেতে কোনো অসুবিধা নেই। 


কিন্তু ছাগলের ব্যাপারে পরস্পরে মতবিরোধ হয়ে গেলো। কেউ বললো, এগুলো নেয়া যাবে। আর কেউ বললো, না, বিনিময় হিসেবে এগুলো নেয়া যাবে না। তাই সমাধানের জন্যে সবাই ছুটে এলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে। এসে সব‌ই বলা হলো। 


তিনি আবূ সাঈদ খুদরী রাযিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কিভাবে জানলে, সূরা ফাতিহা বিষ থেকে মুক্তি দেয়? তিনি বললেন, হুযুর! আমার বিশ্বাস ছিলো, আল্লাহর ইচ্ছায় এর দ্বারাই সে আরোগ্য লাভ করবে। এরপর ছাগলগুলো গ্রহণের প্রসঙ্গ এলো। 


রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এগুলো তোমরা নিজেদের মধ্যে বণ্টন করে নাও। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুধু এইটুকু বলেই চুপ থাকলেন না। বরং এগুলো যে সম্পূর্ণ বৈধ তা বোঝাবার জন্যে বললেন, ‘আমার জন্যেও রেখ’।

No comments

Powered by Blogger.