বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম'এর তাফসীর এবং তাৎপর্য

 

tafseer-analysis-bismillah-rahmanir-rahim




بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیْمِ


বিসমিল্লাহ বাক্যটি তিনটি শব্দ দ্বারা গঠিত। প্রথমতঃ ‘বা’ বর্ণ, দ্বিতীয়তঃ ‘ইসম’ ও তৃতীয়তঃ ‘আল্লাহ’। ‘আরবী ভাষায় ‘বা’ বর্ণটি অনেক অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তন্মধ্যে তিনটি অর্থ এ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে এবং এ তিনিটির যে কোন একটি অর্থ এ ক্ষেত্রে গ্রহণ করা যেতে পারে।

এক-সংযোজন। অর্থাৎ, এক বস্তুকে অপর বস্তুর সাথে মিলানো বা সংযোগ ঘটানো অর্থে। 

দুই-ইস্তি‘আনাত। অর্থাৎ, কোন বস্তুর সাহায্য নেয়া। 

তিন- কোন বস্তু থেকে বরকত হাসিল করা। ‘ইসম’ শব্দের ব্যাখ্যা অত্যন্ত ব্যাপক। মোটামুটিভাবে এতটুকু জেনে রাখা যথেষ্ট যে, ‘ইসম’ নামকে বলা হয়। ‘আল্লাহ’ শব্দ সৃষ্টিকর্তার নামসমূহের মধ্যে সবচেয়ে মহত্ত্বর ও তাঁর যাবতীয় গুণাবলীল সম্মিলিত রূপ। কোন কোন আলেম একে ইসমে ‘আযম বলেও অভিহিত করেছেন।


এ নামটি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো জন্য প্রযোজ্য নয়। এজন্যই এ শব্দটির দ্বিবচন বা বহুবচন হয় না। কেননা, আল্লাহ এক; তাঁর কোন শরীক বা অংশীদার নেই। মোটকথা, আল্লাহ এমন এক সত্তার নাম, যে সত্তা পালনকর্তার সমস্ত গুণাবলীর এক অসাধারণ প্রকাশবাচক। 


তিনি অদ্বিতীয় ও নজিরবিহীন তথা অতুলনীয়। এজন্য বিসমিল্লাহ শব্দের মধ্যে ‘বা’-এর তিনটি অর্থের সামঞ্জস্য হচ্ছে আল্লাহর নামের সাথে, তাঁর নামের সাহায্যে এবং তাঁর নামের বরকতে।


তা‘আওউয শব্দের অর্থ أعُوْذُ بِاللّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ পাঠ করা। কুরআনে পাকে ইরশাদ হয়েছে, যখন কুরআন পাঠ কর, তখন শয়তানের প্রতারণা থেকে আল্লাহ তা‘আলার নিকট আশ্রয় চাও।


দ্বিতীয়তঃ কুরআন পাঠের প্রাক্কালে ‘আঊযুবিল্লাহ পাঠ করা ইজমায়ে উম্মত দ্বারা সুন্নত বলে স্বীকৃত হয়েছে। এ পাঠ নামাযের মধ্যেই হোক বা নামাযের বাইরেই হোক।


কুরআন তিলাওয়াত ব্যতীত অন্যান্য কাজে শুধু বিসমিল্লাহ পাঠ করা সুন্নত, আ‘ঊযুবিল্লাহ নয়। তিলাওয়াত কালে উভয়টি পাঠ করা সুন্নত। তবে একটি সূরা শেষ করে শুধুমাত্র সূরা তাউবা ব্যতীত অপর সূরা আরম্ভ করার পূর্বে যখন কুরআন তিলাওয়াত আরম্ভ করা হয় তখন আ‘ঊযুবিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ উভয়টিই পাঠ করতে হয়। 


তিলাওয়াত করার সময় মধ্যে সূরা বারাআত আসলে তখন বিসমিল্লাহ পড়া নিষেধ। কিন্তু প্রথম তিলাওয়াতই যদি সূরা বারাআত দ্বারা আরম্ভ হয়, তবে তা‘আওউয/আ‘ঊযুবিল্লাহ ও তাসমিয়াহ/বিসমিল্লাহ উভয়টিই পাঠ করতে হবে। [ফতোয়া ‘আলমগীরি]


‘বিসমিল্লাহির র‘হমানির র‘হীম’, কুরআনের সূরা নামল এর একটি আয়াতের অংশ এবং দু’টি সূরার মাঝখানে একটি পূর্ণাঙ্গ আয়াত। তাই অন্যান্য আয়াতের ন্যায় এ আয়াতটির সম্মান করাও ওয়াজিব। 


উযূ ছাড়া এটি স্পর্শ করা জায়েয নয়। অপবিত্র অবস্থায় যথা হায়েয (স্ববালগ মেয়েদের প্রতি মাসে নির্ধারিত সময়ে যে রক্ত প্রবাহিত হয়), নেফাস (মহিলাদের বাচ্চা প্রসবের পর যে রক্ত প্রবাহিত হয়)-এর সময়, (পবিত্র হওয়ার পূর্বে) তিলাওয়াতরূপে পাঠ করাও নাজায়েয। তবে কোন কাজ কর্ম আরম্ভ করার পূর্বে (যথা-পানাহার ইত্যাদি) দু‘আরূপে পাঠ করা সব সময়ই জায়েয।


★ কুরআন তিলাওয়াত ও প্রত্যেক কাজ বিসমিল্লাহ্‌ সহ আরম্ভ করার আদেশ

জাহিলিয়্যাত যুগে লোকদের অভ্যাস ছিল, তারা তাদের প্রত্যেক কাজ উপাস্য দেব-দেবীদের নামে শুরু করতো। 


এ প্রথা রহিত করার জন্য জিবরাঈল আ. পবিত্র কুরআনের সর্বপ্রথম যে আয়াত নিয়ে এসেছিলেন, তাতে আল্লাহর নামে কুরআন তিলাওয়াত আরম্ভ করার আদেশ দেয়া হয়েছে। যথা إقْرَأ بِاسۡمِ رِبِّكَ الَّذِى خَلَقَ অর্থাৎ,পাঠ করুন আপনার পালনকর্তার নামে।


কোন কোন বর্ণনায় দেখা যায়, স্বয়ং রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামও প্রথমে প্রত্যেক কাজ بِاسْمِكَ اللَّهُمَّ বলে আরম্ভ করতেন এবং কোন কিছু লেখাতে হলেও এ কথা প্রথমে লেখাতেন।


কিন্তু بِسۡمِ ٱللَّهِ ٱلرَّحۡمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ অতীর্ণ হওয়ার পর সর্বকালের জন্য ‘বিসমিল্লাহির র‘হমানির র‘হীম বলে সব কাজ শুরু করার নিয়ম প্রবর্তিত হয়েছে। ক্বুরতুবী,রু‘হুল মা‘আনী


কুরআন শরীফের স্থানে স্থানে উপদেশ রয়েছে যে, প্রত্যেক কাজ বিসমিল্লাহ বলে আরম্ভ কর। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে কাজ বিসমিল্লাহ ব্যতীত আরম্ভ করা হয়, তাতে কোন বরকত থাকে না।”


এক ‘হাদীসে ইরশাদ হয়েছে, ঘরের দরজা বন্ধ করতে বিসমিল্লাহ বলবে, বাতি নিভাতেও বিসমিল্লাহ বলবে, পাত্র আবৃত করতেও বিসমিল্লাহ বলবে। কোন কিছু খেতে, পানি পান করতে, উযূ করতে, সওয়ারীতে আরোহণ করতে এবং তা থেকে অবতরণকালেও বিসমিল্লাহ বলার নির্দেশ কুরআন ও ‘হাদীসে বার বার উল্লেখ করা হয়েছে। ক্বুরতুবী


No comments

Powered by Blogger.