ইসমে আজম'এর অর্থ এবং ফজিলত

 

meaning-virtue-esmaa-azam



অনেক অভিজ্ঞ আলেমদের মতামত হলো, প্রকৃত পক্ষে আল্লাহ তায়ালার সব নামই আজিম তথা মহিমান্বিত। কোনো নামের উপর কোনো নামের আলাদা ফযিলত-মর্যাদা নেই। সুতরাং ইসমে আজম তথা আল্লাহ তায়ালার সকল নামের মধ্যে সবথেকে সম্মানিত কোনটি; এমন কোনো বিষয় নির্দিষ্টভাবে নির্ভরযোগ্য বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত নয়। 


ইসমে আজম'এর অর্থ

'ইসম' শব্দের অর্থ নাম আর 'আজম' শব্দের অর্থ মহান বা শ্রেষ্ঠ। আল্লাহ তাআলার অনেক নাম রয়েছে। এসব নামের মধ্যে যে নামগুলো দিয়ে আল্লাহ সুবহানাহু তাআলার বড়ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব সবচেয়ে বেশি প্রকাশিত হয়, সেই নামগুলোকে 'ইসমে আজম' বলা হয়। অর্থাৎ ইসমে আজম অর্থ আল্লাহর নামসমূহের মধ্যে শ্রেষ্ঠ নামগুলো।


ইসমে আজম কোনটি

নবী করীম (সা.) দোয়ার ক্ষেত্রে যে দুটি জিনিস প্রাধান্য দিতেন সেটি হলো, ইয়া জালজালালি ওয়াল ইকরাম এবং ইয়া ইইয়্যু ইয়া ক্বাইয়্যুম বিরহমাতিকা আস্তাগিছ। অনেকে এ কথা বলেছেন যে এটা ইসমে আজম, এ জন্য রাসুল (সা.) এটাকে বেশি প্রাধান্য দিতেন।


রাসুল (সা.) বলেছেন, ইসমে আজম বা মহান কোনো নাম, যদি কোনো ব্যক্তি এ নাম দিয়ে দোয়া করে থাকেন, তাহলে আল্লাহ তাঁর দোয়া কবুল করেন। রাসুল (সা.) হাদিসের মধ্যে কোনটি ইসমে আজম, সেটি নিশ্চিত করেননি। এখানে শুধু তিনটি পয়েন্ট আলোচনা করা হলো-


১. বেশির ভাগ ওলামায়ে কেরামের বক্তব্যমতে, ইসমে আজম হচ্ছে, আল্লাহতায়ালার নাম। পরিপূর্ণতার যতগুলো বৈশিষ্ট্য আছে, সব বৈশিষ্ট্য এর মধ্যে আছে। তাই একদল ওলামায়ে কেরাম বলেছেন যে এটাই ইসমে আজম।


২. আরেক দল ওলামায়ে কেরাম বলেছেন, আর রহমান, আর রাহিম এটা ইসমে আজম। যেহেতু কোরআনুল কারিমে আল্লাহ একটি ইসমের মাধ্যেমে তাঁর পরিচয় করে দিয়েছেন।


৩. ওলামায়ে কেরাম বলেছেন, আল হাইয়্যুল-কাইয়্যুম, এটা হলো ইসমে আজম। যেহেতু আল্লাহ তাঁর সত্তার মহিমান্বিত দিকগুলো যখন তুলে ধরেছেন, তখন কোরআনুল কারিমের মধ্যে এ তিনটি আয়াতে এ কথা দিয়ে আল্লাহ পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন।


ইসমে আজম আল্লাহর নির্দিষ্ট কোনো নাম কিনা; এ সম্পর্কে বিভিন্ন হাদীস ও বিজ্ঞ আলেমদের থেকে প্রায় ৪০টি মন্তব্য পাওয়া যায়। এর মধ্যে হযরত আবদুল কাদের জিলানি (রহ.) বলেন, "ইসমুল আজম হলো 'আল্লাহ' শব্দ। তবে শর্ত হলো তা পূর্ণ একাগ্রতা ও এখলাসের সঙ্গে বলতে হবে'।" মিরকাতুল মাফাতিহ, ১/৬


ইসমে আজম'এর ফজিলত

বিভিন্ন হাদিসে আল্লাহ তাআলার কিছু গুণবাচক নামকে 'ইসমে আজম' বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে ইসমে আজমের ফজিলতও বর্ণনা করা হয়েছে। হযরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, একদিন রাসুল (সা.) নামাজের পর দোয়ারত জায়েদ ইবনে সামেত (রা.)-এর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। 


দোয়াতে তিনি বলছিলেন, 'আল্লাহুম্মা ইন্নি আস-আলুকা বি-আন্না লাকাল হা'মদু লা-ইলা-হা ইল্লা-আনতা ওয়াহ'দাকা লা-শারিকা লাকাল মান্না-ন, ইয়া বাদিআ'স্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদ্বি, ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম। ইয়া হাইয়্যু ইয়া কাইয়্যুম।' তখন রাসুল (সা.) তাঁকে বললেন, 'তুমি আল্লাহর দরবারে ইসমে আজমের মাধ্যমে দোয়া করেছ, যার মাধ্যমে দোয়া করলে আল্লাহ তাআলা কবুল করেন এবং কিছু চাইলে তা দান করেন।' মুসনাদে আহমদ : ১২২০৫


অবশেষে...

যে সব নামকে হাদীস শরীফে ‘ইসমে আজম’ বলা হয়েছে- এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, এই নামগুলো আল্লাহ তায়ালার আজিম (মহান) নামের মধ্য থেকে।বিশেষভাবে এই নামগুলোর মাধ্যমে দোয়া কবুল হয়। এ কারণেই ইসমে-আজম সম্পর্কে একাধিক বর্ণনা পাওয়া যায়। সুতরাং নিশ্চিত ও সর্ব সম্মতভাবে কোনো একটি নামকে ‘ইসমে আজম’ হিসেবে আখ্যা দেয়া কঠিন এবং জটিল বিষয়! ফাতাওয়া উসমানী ১/২৬৪, ২৬৫


বিভিন্ন দেশের প্রচলিত ওজিফার বইগুলোতে অনেক বানোয়াট নামকে ইসমে আজম বলে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে। যেগুলো আসলে ইসমে আজম নয়। তাই এসব ভুল তথ্যের পেছনে না পড়ে অভিজ্ঞ আলেমদের পরামর্শ ও মানসম্মত কিতাব ও বই-পুস্তক থেকে ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করতে হবে।



No comments

Powered by Blogger.