চোর চাতুরি
একদল চোর সবসময় সঙ্ঘবদ্ধভাবে চুরি করতো। চুরির কাজে তারা ছিলো খুবই পারদর্শী। দেশের মানুষ তাদের যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে উঠেছিলো। কোনভাবেই চোরের দলটাকে ধরা যাচ্ছিলো না। জনসাধারণের জোর দাবীর পরিপ্রেক্ষিতে সরকার একদল চৌকস গোয়েন্দা নিয়োগ দিলো।
গোয়েন্দারা তাদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা ব্যয় করে চোরের দলটাকে আটক করে বিচারের সম্মুখীন করলো। আদালতের কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগে চোরদের দল নেতা বললো, ‘মাননীয় বিচারক, বিচার শুরু হওয়ার আগে আমার কিছু কথা আছে।’ তার কথা শুনে আদালত কক্ষের সবাই নড়েচড়ে উঠলো।
কী বলতে চায় দল নেতা! বিচারকের অনুমতির পর দল নেতা বলতে শুরু করলো, ‘মাননীয় বিচারক, আমরা মূলত অসংখ্য মানুষের কল্যাণ চিন্তায় চুরি করে থাকি। আমাদের চুরির পেছনে দেশের বৃহত্তর স্বার্থ লুকিয়ে আছে। ’দলনেতার কথা শুনে এবার বিচারকও নড়েচড়ে বসলেন।
বলে কী, চুরির পেছনে দেশের স্বার্থ! বললেন, ‘ঠিক আছে, বিষয়টা তুমি আমাদের বুঝিয়ে বলো। ’চোরনেতা বললো, ‘আমরা চুরি করছি বলেই দেশে অসংখ্য আলমারি তৈরি হচ্ছে। এ শিল্পের মাধ্যমে হাজারো মিস্ত্রির জীবিকা নির্বাহ হচ্ছে। আমাদের চুরির ভয়েই দেশে লক্ষ লক্ষ তালা বিক্রি হচ্ছে।
মানুষ ব্যাংকে টাকা রাখছে। ফলে ব্যাংকগুলো হাজার হাজার কোটি টাকার ব্যবসা করতে পারছে। লাখো মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে সেগুলোতে। আমরা চুরি বন্ধ করে দিলে এই সব কিছুই বন্ধ হয়ে যেতো।
আমাদের অবদান কম নয় মাননীয় বিচারক। দেশে বর্তমানে অসংখ্য চুরির মামলা হচ্ছে; এসব মামলার মাধ্যমে হাজার হাজার উকিল-জজ-ব্যারিস্টারের উপার্জনের পথ সুগম হচ্ছে; এটাও তো আমাদের অবদান।’চোরনেতার বক্তব্যের পর অনেকে ভাবছিলো, এবারও বোধহয় চোরের দল বেঁচে যাবে।
দল নেতার এমন অকাট্য যুক্তির উত্তর দেয়া তো অসম্ভব। কিন্ত বিচারক ছিলেন বিচক্ষণ। তিনি বললেন, ‘তোমরা অনেক মানুষের কল্যাণচিন্তা করেছো বটে। কিন্তু সেটা করতে করতে নিজেদের কথা ভাবতেই ভুলে গেছো। একটু চিন্তা করলেই তোমরা বুঝতে পারতে- নিজের জন্যে কল্যাণকামনার প্রথম ধাপ হলো, নিজেকে অন্যায় থেকে বাঁচানো।
এটাই হচ্ছে প্রত্যেকের প্রথম কর্তব্য। সেই কর্তব্য আদায় না করে অন্যের কল্যাণচিন্তা করতে কে তোমাদের বলেছিলো? মিস্ত্রি, তালা ব্যবসায়ী, ব্যাংক কর্তৃপক্ষ, উকিল, বিচারক সবাই মিলে কি তোমাদের দায়িত্ব দিয়েছিলো তাদের জীবিকার কথা চিন্তা করতে? বিচারকের বক্তব্য শুনে চোর নেতার মাথা নিচু হয়ে গেলো।
No comments