বাংলাদেশের আইনে ধর্ষণ'এর সংজ্ঞা, কারণ এবং শাস্তির বিধান

The definition, cause and punishment of rape in the law of Bangladesh
বাংলাদেশের আইনে ধর্ষণ'এর সংজ্ঞা, কারণ এবং শাস্তির বিধান

বৃহস্পতিবার । আগষ্ট । ১৯ । ২০২১ ।
Public info;


definition, cause and punishment of rape in the law of Bangladesh


  || ■ || বাংলাদেশের আইনে ধর্ষণ'এর সংজ্ঞা  

সঙ্গী বা সঙ্গিনীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে বা অনুমতি ছাড়া যৌনাঙ্গের মিলন ঘটিয়ে বা না ঘটিয়ে যৌনসঙ্গমে লিপ্ত হওয়াকে ধর্ষণ বলা হয়ে থাকে। সাধারণ অর্থে একজন পুরুষের সঙ্গে একজন নারীর সম্মতি ব্যতিরেকে যৌনসঙ্গমকে ধর্ষণ বলা হয়। যেভাবেই ধর্ষণ হোক না কেন, ধর্ষণ এক প্রকার যৌন অত্যাচার এবং তা একটি গুরুতর ফৌজদারি অপরাধ বটে। 

বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৩৭৫ ধারা মোতাবেক, যদি কোনো ব্যক্তি নিম্নক্ত পাঁচ প্রকারের যেকোনো অবস্থায় কোনো নারীর সঙ্গে যৌন সহবাস করে, তবে উক্ত ব্যক্তি ধর্ষণ করেছে বলে গণ্য হবে। 

● প্রথমত : তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে 

● দ্বিতীয়ত : তার সম্মতি ব্যতিরেকে 

● তৃতীয়ত : তার সম্মতিক্রমে, যেক্ষেত্রে তাকে মৃত্যু বা আঘাতের ভয় প্রদর্শন করে তাঁর সম্মতি আদায় করা হয়। 

● চতুর্থত  : তার সম্মতিক্রমে বা ব্যতিরেকে, যে ক্ষেত্রে সে ১৪ বছরের কম বয়স্ক হয়। 

● পঞ্চমত : তাঁর সম্মতিক্রমে, যেক্ষেত্রে লোকটি জানে যে, সে তার স্বামী নয় এবং নারীটি এ বিশ্বাসে সম্মতিদান করে যে, পুরুষটির সঙ্গে সে আইনানুগভাবে বিবাহিত অথবা সে নিজেকে আইনানুগভাবে বিবাহিত বলে বিশ্বাস করে ।

  || ■ ||  বাংলাদেশে ধর্ষণের প্রধান কারণ সমূহ ।  

【√】ধর্ষকদের মধ্যে কাম-প্রবৃত্তি থাকে, যা ধর্ষণের আরেকটি বড় কারণ

【√】সাইকোপ্যাথিক ব্যক্তিত্বের অধিকারী লোকেরা ধর্ষণ করে বেশি

【√】যে সমাজে আইনের শাসন নেই কিংবা থাকলেও তা দুর্বল বা ভঙ্গুর, সেই সমাজের লোকেরা ধর্ষণ উপযোগী পরিবেশ পায় এবং ধর্ষণ করে।

 তাই, সামাজিক প্রতিরোধ ও আইনের শাসনের অভাব ধর্ষণের জন্য দায়ী। 

【√】ধর্ষণকারীদের মধ্যে বিন্দুমাত্র অপরাধবোধ না থাকার কারণে নির্দ্বিধায় ধর্ষণ করতে উদ্যোগী হচ্ছে। 

【√】মাদকাসক্তি মানুষের স্বাভাবিক বিবেচনাবোধ লোপ করে এবং এটিও ধর্ষণের আরেকটি বড় কারণ। 

【√】মেয়েদের ওপর আধিপত্য বিস্তার ও ভয়-ভীতি দেখিয়ে নিয়ন্ত্রণ করার মানসিকতাও ধর্ষণের অন্যতম কারণ। 

【√】ক্ষমতাশীল ব্যক্তি সুযোগ পেয়ে কোনো দুর্বল মেয়ে, শিশু বা ছেলের ওপর ক্ষমতার প্রয়োগ ঘটায় ধর্ষণের মাধ্যমে। 

【√】একাকিত্ব বোধ, অক্ষমতাবোধ, রাগ, অপমানজনক অনুভূতি, হতাশা, ব্যর্থতা বা ব্যক্তিজীবনে কষ্ট, অপ্রাপ্তি ইত্যাদি থাকলে মনের মধ্যে ধর্ষণের আকাক্সক্ষা বৃদ্ধি পায়। 

【√】ধর্ষকদের মনে মেয়েদের প্রতি তীব্র ক্রোধ, আক্রমণাত্মক মনোভাব ও প্রতিহিংসা পরায়ণতা মনোভাব থাকে এবং এর ফলে ধর্ষণ করে। আর এসবের কারণ হতে পারে অতীতে কোনো মেয়ে দ্বারা প্রতারিত, অপমানিত ও প্রত্যাখ্যাত হওয়া। 

【√】যেসব পর্নোগ্রাফিতে মেয়েদের সঙ্গে জবরদস্তিমূলক যৌন সম্ভোগে মেয়েদের তা উপভোগ করতে দেখানো হয় বা মেয়েদের প্রতিবাদ করতে দেখানো হয় না, সেসব দেখে অনেক পুরুষ ধর্ষণে উৎসাহ বোধ করে। 

【√】কোনো মেয়ে প্রেমে বা বিয়ের আগে যৌন সম্পর্কে রাজি না হলে অনেক সময় মেয়েটির মুখ থেকে উচ্চারিত ‘না’ শব্দকে সহ্য করতে না পেরে ধর্ষণের মতো কাজে লিপ্ত হয়ে যায়।  

【√】অনেক সময় বন্ধুবান্ধবরা একসঙ্গে হয়ে বা শক্তিশালী হয়ে আকস্মিকভাবে কোনো অসহায় মেয়েকে একা পেয়ে আনন্দ-ফুর্তি করার জন্যও ধর্ষণ করে।

এছাড়াও বর্তমানে ইন্টারনেট, স্যাটেলাইটসহ নানা ধরনের তথ্যপ্রযুক্তির অবাধ ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়াসহ পারিপার্শ্বিক আরও অনেক কারণে ধর্ষণ হতে পারে আমাদের সমাজে।


  ■ ধর্ষণ অপরাধের শাস্তির বিধান সমূহ  

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ (সংশোধিত ২০০৩)-এর ৯ ধারা অনুযায়ী, ধর্ষণের অপরাধের যেসব শাস্তির বিধান রয়েছে, 

ধর্ষণের ফলে কোনো নারী বা শিশুর মৃত্যু হলে ধর্ষণকারীর জন্য রয়েছে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড এবং এর অতিরিক্ত কমপক্ষে এক লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড। একাধিক ব্যক্তি দলবদ্ধভাবে কোনো নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করলে ধর্ষণকালে বা ধর্ষণের পর যদি তার মৃত্যু ঘটে, তবে উক্ত দলের সকলের জন্যই এই শাস্তি প্রযোজ্য হবে। ধর্ষণের চেষ্টা করলে ধর্ষণকারীর সর্বোচ্চ দশ বছর এবং সর্বনিম্ন পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেরও বিধান রয়েছে। 

কোনো নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করে মৃত্যু ঘটানো বা আহত করার চেষ্টা করলে ধর্ষণকারী যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবেন। বিচারক সাধারণত শাস্তির পরিমাণ নির্ধারণ করে অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনা করেন। 

মামলার বিষয়বস্তু (ধর্ষণের শিকার নারীর জবানবন্দি, ডাক্তারি পরীক্ষার ফলাফল এবং অন্যান্য সাক্ষ্য) পর্যালোচনা করে নিজস্ব বিচার-বিবেচনার ভিত্তিতে বিচারক রায় দেন এবং অপরাধীর শাস্তি নির্ধারণ করেন। 

তবে ধর্ষণের ক্ষেত্রে ধর্ষিত নারীর উচিত হবে ধর্ষণের ঘটনাটি দ্রুত কাছের কাউকে জানানো। ধর্ষণ প্রমাণের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ধর্ষণের শিকার হওয়া নারীর শরীর। এজন্য ধর্ষণের ঘটনার পর যে অবস্থায় আছে, তেমনি থাকা প্রয়োজন। নিজেকে পরিষ্কার বা গোসল করানো এক্ষেত্রে কোনোভাবেই ঠিক হবে না। কারণ, ধর্ষণকারী অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নারীর শরীরে কিছু প্রমাণ-চিহ্ন রেখে যায়। 

ডাক্তারি পরীক্ষার দ্বারা নারীর শরীর থেকে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য-প্রমাণাদি এবং আলামত সংগ্রহ করা যায়, যা ধর্ষণের ঘটনাকে প্রমাণ ও ধর্ষণকারীকে চিহ্নিত করতে সাহায্য করে। ঘটনার সময় যে কাপড় শরীরে ছিল তা অবশ্যই সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। কাপড়ে রক্ত, বীর্য ইত্যাদি লেগে থাকলে তা যদি ধর্ষণকারীর রক্ত বা বীর্যের সাথে মিলে যায়, তাহলে মামলায় এটা গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে কাজ করে। 

আর এক্ষেত্রে দ্রুত থানায় অভিযোগ দায়ের কিংবা আদালতে মামলা দায়ের করতে হবে। যত দ্রুত অভিযোগ দায়ের করা যায়, ততই মঙ্গল। কারণ, ধর্ষণের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ডাক্তারি পরীক্ষা না করালে ধর্ষণের প্রমাণ তেমন একটা পাওয়া যায় না।তবে থানায় অভিযোগ দায়ের করে কিংবা আদালতে মামলা করে বিচার পাওয়ার চেয়ে সমাজে যেন ধর্ষণের ঘটনা না ঘটে সেই ব্যবস্থা করা অধিকতর মঙ্গলজনক। 

ধন্যবাদ সবাইকে।

সংকলন: A N I .


No comments

Powered by Blogger.