নবী-রাসূলগনের উপর ঈমান আনা ঈমানের‌ই অঙ্গ

believing-prophets-part-faith




নবী-রাসূল আ.- এর ওপর ঈমান আনার অর্থ এ কথা বিশ্বাস করা যে, আল্লাহ তা‘আলা মানুষের হিদায়াতের জন্যে এবং তাদেরকে সঠিক পথ দেখাবার জন্য স্বীয় বান্দাদের মধ্যে হতে বাছাই করে বহুসংখ্যক পয়গাম্বর অর্থাৎ নবী-রাসূল আ. মনোনীত করে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। 


যাতে করে মানুষ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করে দুনিয়াতে সফল হতে পারে এবং পরকালে কঠিন শাস্তি থেকে মুক্তি লাভ করে অন্তিম সুখে বসবাস করতে পারে।পয়গাম্বরগণ সকলেই নিষ্পাপ। তাঁরা কোন প্রকার পাপ করেন না। সব নবীগণ মানুষ। তারা আল্লাহর বান্দা।‌


নবীগন আল্লাহর পুত্র নন। আল্লাহর রূপান্তর (অবতার) নন। বরং তাঁরা হলেন আল্লাহর প্রতিনিধি। নবীগণ আল্লাহর বাণী হুবহু পৌঁছে দিয়েছেন। তবে আল্লাহ তা‘আলা নবীগনের সঠিক সংখ্যা কুরআন শরীফে বা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীস শরীফে বর্ণনা করেননি। 


কাজেই নিশ্চিতভাবে তাঁদের সঠিক সংখ্যা কেউ বলতে পারেননা। যদিও প্রসিদ্ধ আছে যে, এক লক্ষ চব্বিশ হাজার পয়গাম্বর দুনিয়াতে এসেছেন কিন্তু কোনো সহীহ হাদীস দ্বারা তা প্রমাণিত নয়। এতটুকু বলা যায় যে, বহুসংখ্যক পয়গাম্বর পৃথিবীতে এসেছেন পথ প্রদর্শনের জন্য। 


আল্লাহ তা‘আলার হুকুমে তাঁদের দ্বারা অনেক অসাধারণ ও অলৌকিক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। ঐসব ঘটনাকে মু‘জিযা বলে। নবীগণের মু‘জিযাসমূহ বিশ্বাস করাও ঈমানের অঙ্গ। পয়গাম্বরগণের মধ্যে সর্বপ্রথম আগমন করেছেন হযরত আদম আ. এবং সর্বশেষ হচ্ছেন নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)


তাঁর পরে অন্য কেউ দুনিয়াতে নবী বা রাসূল হিসেবে আগমন করেননি এবং করবেনও না। হযরত ঈসা আ. কিয়ামতের পূর্বে আগমন করবেন, কিন্তু তিনি নবীর উম্মত হিসেবে আগমন করবেন। নতুন নবী হিসেবে তিনি আগমন করবেন না। আমদের নবী খাতামুন নাবিয়্যীন বা শেষনবী। 


সুতরাং কিয়ামত পর্যন্ত সমস্ত পৃথিবীতে একমাত্র তাঁরই হুকুম চলবে। সকলের মুক্তি ও সফলতার জন্যে অদ্বিতীয় পথ হিসেবে বহাল থাকবে। অন্য কোন ধর্ম, তরীকা বা ইজম এর অনুসরণ কাউকে কিছুই দেবেনা। শেষ নবীর পরে অন্য কেউ নবী হয়েছেন বিশ্বাস করলে তার ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে। 


হযরত ঈসা আ. আসমানে জীবিত আছেন। জীবিত অবস্থায় আসমানে উঠিয়ে নিয়েছেন, ইহা সত্য। কুরআন হাদীসে এর প্রমাণ আছে। ইহা বিশ্বাস করতে হবে, অন্যথায় ঈমান থাকবে না, কিয়ামতের পূর্বে আসমান থেকে জমিনে অবতরণ করবেন তিনি। আমাদের নবীর অনুসারী হয়ে। 


হযরত ঈসা আ. এর ব্যাপারে পুত্রবাদ ও কর্তৃত্বদের বিশ্বাস কুফরী। দুনিয়াতে যত পয়গাম্বর এসেছেন, সকলেই আমাদের মাননীয় ও ভক্তির পাত্র। তাঁরা সকলেই আল্লাহর হুকুম প্রচার করেছেন। তাঁদের মধ্যে পরস্পরে কোন বিরোধ ছিল না। সকলেই পরস্পর ভাই ভাই ছিলেন। 


আল্লাহ তা‘আলা অবশ্য হিকমতের কারণে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন হুকুম জারি করেছেন। আর এই সামান্য বিভিন্নতাও শুধু আমলের ব্যাপারে, ঈমান আকীদার ব্যাপারে নয়। আকীদাসমূহ আদি হতে অন্ত পর্যন্ত চিরকাল এক। আক্বীদার মধ্যে কোন প্রকার রদবদল বা পরিবর্তন হয়নি, আর হবেও না কখনো। 


পয়গাম্বরগণ সকলেই কামিল ছিলেন। কেও নাকিস বা অসম্পূর্ণ ছিলেন না। অবশ্য তাঁদের মধ্যে কারো মর্যাদা ছিল বেশি, কারো মর্যাদা ছিল তুলনামূলক ভাবে কম। সকল নবী নিজ নিজ কবরে জীবিত আছেন। এজন্য নবীগণকে ‘হায়াতুন্নবী’ বলা হয়।


নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম-এর সমস্ত কথা মেনে নেয়া জরুরী। তাঁর একটি কথাও অবিশ্বাস করলে বা সে সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করলে কিংবা তা নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করলে ঈমান‌ নষ্ট হয়ে যায়। নবীর স্বশরীরে জাগ্রত অবস্থায় মি‘রাজ ভ্রমণের কথা বিশ্বাস করাও জরুরী। 


No comments

Powered by Blogger.