স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের শাসন ব্যবস্থা |

Post-independence Bangladesh's governance system |  স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের শাসন ব্যবস্থা |


A N I |
ANOWAT NURUL ISLAM |
Post-independence Bangladesh's governance system |

স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের শাসন ব্যবস্থা |


■ স্বাধীন বাংলাদেশ (১৯৭২-বর্তমান)|
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ১৯৭২-১৯৭৫
স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ প্রথমে সংসদীয় গণতন্ত্র ব্যবস্থা চালু হয় ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৩ সালের সংসদীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। ১৯৭৩ ও ১৯৭৪ সালে যুদ্ধবিদ্ধস্ত নতুন দেশে বিদেশী ষড়যন্ত্রে দেশব্যাপী দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় ১৯৭৫ সালের শুরুতে বঙ্গবন্ধু দেশে বাকশালের অধীনে সকল দল এবং ব্যক্তি নিয়ে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা চালু করেন। ১৯৭৫সালের ১৫ই আগস্ট সেনাবাহিনীর কিয়দংশ ষড়যন্ত্রে সংঘটিত অভ্যুত্থানে তিনি সপরিবারে নিহত হন।

■ খন্দকার মুশতাক ১৯৭৫ |
১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হওয়ার পর আওয়ামী লীগ নেতা খন্দকার মুশতাক আহমদ রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ গ্রহণ করে। সে নতুন করে মন্ত্রী সভা গঠন করে। তার কার্যকাল ছিল ১৫ই আগস্ট থেকে ৬ নভেম্বর ১৯৭৫; এ সময় সামরিক আইন জারী করা হয়। তার কর্মকাল ছিল সংক্ষিপ্ত। পরে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব লাভ করেন বিচারপতি আবু সাদাত মুহাম্মাদ সায়েম।

■ জিয়াউর রহমান,১৯৭৫-১৯৮১ |
সেনা কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দের ৭ই নভেম্বর তথাকথিত সিপাহি বিপ্লব নামের আন্দোলনের পর পর্যায়ক্রমে রাজনীতিতে সংশ্লিষ্ট হন। ১৯শে নভেম্বর ১৯৭৬ সালে তাঁকে পুনরায় সেনাবাহিনীর চীফ অফ আর্মী স্টাফ পদে দায়িত্বে প্রত্যাবর্তন করা হয়। তিনি এসময়ে উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৭ সালে রাষ্ট্রপতি আবু সাদাত সায়েমের পরে ২১শে এপ্রিল রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ গ্রহণ করেন। ১৯৭৮ সালের ৩রা জুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জিয়াউর রহমান জয়লাভ করেন। জিয়াউর রহমান বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ নামের রাজনৈতিক মতবাদ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জেনারেল জিয়াউর রহমান জাতীয় গণতান্ত্রিক দল (জাগদল) প্রতিষ্ঠা করেন, পরবর্তীতে ১৯৭৮ সালের ১লা সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) নামকরণ করা হয়। জিয়া এই দলের সমন্বয়ক ছিলেন এবং এই দলের প্রথম চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। অধ্যাপক এ. কিউ. এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী এর প্রথম মহাসচিব ছিলেন। বিএনপি গঠন করার আগে ১৯৭৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল) উপ-রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আব্দুস সাত্তারকে সভাপতি করে গঠিত হয়েছিল। জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি থাকা অবস্থায় ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ২৯৮টি আসনের মধ্যে ২০৭টিতে জয়লাভ করে। ১৯৮১ সালের ২৯শে মে চট্টগ্রামে এক সামরিক অভ্যুত্থানে জিয়া নিহত হন। অত:পর উপরাষ্ট্রপতি আব্দুস সাত্তার রাষ্ট্রপতি হন।

■ হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ, ১৯৮২-১৯৯০ |
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় যে কয়জন সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা পাকিস্তানে স্বেচ্ছাবন্দী ছিলেন তাদের মধ্যে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ অন্যতম। বিচারপতি আবদুস সাত্তারের দুর্বল নেতুত্ব ও রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রেক্ষিতে ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ মাসে শাসক জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ রক্তপাতবিহীন এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেন। এরশাদ স্বৈরশাসক হিসাবে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত শাসন করেন। ৯০ এর গণঅভ্যুত্থানে তার পতনের পর সংসদীয় গণতন্ত্র পুনরায় চালু হয়।

■ বিএনপি ও খালেদা জিয়া, ১৯৯১-১৯৯৬ |
সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নেত্রী হিসাবে ১৯৯১ হতে ১৯৯৬, ১৯৯৬ এর ফেব্রুয়ারি ও ২০০১ হতে ২০০৬ পর্যন্ত ৩ বার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৯৬-২০০১ এবং ২০০৯-২০১৪ পর্যন্ত জাতীয় সংসদ এ বিরোধীদলীয় নেতার দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর চেয়ারম্যান। দলটি ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করায় বর্তমানে সংসদ এর বাইরে আছে।

■ আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা, ১৯৯৬-২০০১ 
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা ১৯৯৬ হতে ২০০১ সাল, ২০০৯ হতে ২০১৪ সাল এবং ২০১৪ সাল হতে বর্তমান পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামিলীগ এর নেতৃত্বে গঠিত সরকার এর প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।

■ চারদলীয় ঐক্যজোট ২০০১-২০০৬ ।
২০০১ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি মাইলফলক স্থাপন করে। তারা ক্ষমতার পাঁচবছর সময় অতিবাহিত করতে সক্ষম হয়। বিরোধীদল সরকার পতনের আন্দোলনের ডাক দেয়নি। পাঁচবছর পুর্তি শেষে আওয়ামী লীগ তত্তাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার নির্বাচনের আয়োজন করে। সেই নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। এই সরকারের শাসনামলে বাংলা ভাই এবং জামায়েতুল মুজাহেদুনের উৎপাত শুরু হয়। বাংলাদেশের ৬৪ জেলায় একযোগে বোমা বিস্ফোরিত করে এই জঙ্গী সংগঠন।

■ তত্ত্বাবধায়ক সরকার, ২০০৬-২০০৯ |
২০০৬ সালের রাজনৈতিক পট পরিবর্তন এবং নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট রাজনৈতিক অচলাবস্থায় তৎকালীন সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ মদদপুষ্ট হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক এর সাবেক গভর্নর জনাব ফখরুদ্দিন আহমদ এর নেতৃত্বে ২০০৬ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়।

■ চৌদ্দদলীয় মহাজোট ও শেখ হাসিনা, ২০০৯-২০১৪|
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ৯ম সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ জয়লাভ করে, এবং দলটির সভানেত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণ করেন।

■ আওয়ামী লীগ ২০১৪ - বর্তমান |
২০১৪ খ্রিস্টাব্দের ৫ জানুয়ারি বাংলাদেশের ১০ম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং তার মিত্র আঠারো দলীয় জোট দলীয় সরকারের অধীনের নির্বাচন সুষ্ঠ হবেনা অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জন করে। বিএনপি আগের মত তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য আন্দোলন শুরু করেন। ঢাকা সহ সারাদেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। দেশে বিদেশে এই নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব বাংলাদেশ সফর করেন। তিনি প্রধান দুই দল বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের মাঝে সংলাপের উদ্যোগ নেন। কিন্ত শাসকগোষ্ঠী তাদের সিদ্ধান্তে অটল থাকেন। প্রথম দিকে জাতীয় পার্টি নির্বাচন বর্জনের কথা বললেও শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নেয়। এ নির্বাচনে ১৫৩টি পদে আওয়ামীলীগ প্রার্থী, জাতীয় পার্টি ইত্যাদির প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দীতায় নির্বাচিত হন সার্বিকভাবে ৩০০ আসনের মধ্যে ২৩২টিতে বিজয়ী হয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ জয় লাভ করে। এ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ১৩টি আসনে জয় লাভ করে এবং সংসদের প্রধান বিরোধী দল হিসাবে আর্বিভুত হয়। রওশন এরশাদ সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা নির্বাচিত হন। এ নির্বাচনে ওয়াকার্স পাটি ৪টি আসন এবং জাসদ ২টি আসন লাভ করে। ত্বরিক্বত ফেডরেশন ১টি এবং বিএনএফ ১টি আসন লাভ করে।

১২ জানুয়ারি তারিখে শেখ হাসিনা তৃতীয় বারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ গ্রহণ করেন এবং ২৯ সদস্যবিশিষ্ট মন্ত্রী সভা গঠন করেন। এছাড়াও নিয়োগ করেন ১৭জন প্রতিমন্ত্রী এবং ২ জন প্রতিমন্ত্রী।
জাতীয় পার্টির কিছু সংসদ সদস্য মন্ত্রিত্ব গ্রহণ করেন। জাতীয় পার্টির চেয়্যারম্যান হুসেইন মোহাম্মাদ এরশাদ প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হিসেবে নিয়োগ পান। জাতীয় সংসদে জাতীয় পার্টি সরকারী দল এবং বিরোধী দল উভয় পক্ষে থেকে গণতন্ত্রের ইতিহাসে এক ভিন্নরকম মাইলফলক স্থাপন করেছে।
বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি মাঝে মাঝে তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য আন্দোলনের হুমকি প্রদান করছে, ক্ষমতাসীন দল দল আওয়ামী লীগ প্রথম দিকে মধ্যবর্তী নির্বাচনের কথা বললেও এখন সেই অবস্থান থেকে সরে এসেছে।

THANK YOU ALL.
A N I .

No comments

Powered by Blogger.