মনসুর হেল্লাজ, রাষ্ট্র ও ধর্মের হাতে নিহত সূফী

Mansur hellaj



মনসুর হেল্লাজ __ রাষ্ট্র ও ধর্মের হাতে নিহত সূফী 


রহস্যময়তা নয়, আমাকে টানে রহস্যের পেছনের মানুষ গুলো 
মনসুর হেল্লাজ ( 858-913 খ্রী: )


মনসুর হেল্লাজের আধ্যাত্মিক শিক্ষা পূর্নতা পেয়েছিল বাগদাদে এবং সে সময়ের প্রধান ধমীর্য়পুরুষ হযরত জোনায়েদ-আল-বাগদাদীর সান্নিধ্যে।সে সময়ে মুসলিম বিশ্বের শাসক ছিলেন আব্বাসীয় খলিফাগন। আধ্যাত্মিক পুরুষ হিসেবে মনসুর অনন্য ছিলেন তার প্রকাশ ভঙ্গিমায় ।অন্যান্য সুফী-দরবেশগন যেখানে ধর্মের গুঢ় তত্ব সাধারন মানুষের সাথে আলোচনা করতেন না,নিজেদের রহস্যময়তার ভেতর রাখতেন, সেখানে মনসুর ছিলেন বিপরীত।
মনসুর মারফতের সব জটিল ও অলৌকিক ব্যপারগুলো খোলামেলা আলোচনা করতেন সাধারন মানুষের সাথে । অন্যান্য ধর্মীয় স্কলারদের চেয়ে বরং সাধারণ মানুষের সাথে তিনি আল্লাহ ও তার প্রেমময়তা নিয়ে কথা বলতেন বেশী ।

বাগদাদের রাস্তায় রাস্তায় তিনি বলে বেড়াতেন_____
আমি তোমাকে খুঁজতে গিয়ে আমাকে ফিরে পাই।
এতো নিকটে তুমি যে, আমি আমার থেকে তোমাকে আলাদা করতে পারিনা
আমার অন্তরাত্না মিশে গেছে তোমার মাঝে,
খুব সন্নিকটে অথচ অনেক দূরে
যেন তুমিই আমি যেমন আমি হয়ে গেছি তোমার ।

এর ফলে মনসুর সাধারন মানুষের কাছে খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেন। কিন্তু এরফলে তৎকালীন অন্য সব ধর্মীয় গুরুগন তার উপর ক্ষেপে উঠেন । তারা মনসুরের বিরুদ্ধে আধ্যাত্মিক রহস্য জনসম্মুখে প্রকাশের অভিযোগ আনেন । এমনকি তার শিক্ষক হযরত জোনায়েদ ও তাকে সতর্ক করে দেন সাধারন মানুষের কাছে সব গোপনীয়তা প্রকাশ না করার জন্য । কিন্তু এসব অভিযোগ, সর্তকীরন মনসুরকে আটকাতে পারেনি ।

তিনি আবারো বলেন______
'আমার অস্তিত্বে তুমি মিশে গেছো যেমন মদের সাথে জল
যখন তোমাকে স্পর্শ করি আমি তার স্পর্শ পাই'

এবার শরীয়তি আইনে তাকে খারিজী ঘোষনা করা হয় এবং বাগদাদে অবাঞ্চিত করা হয় । মনসুর আল-হেল্লাজ ফিরে যান তার জন্মস্থান ইরানে । সমগ্র ইরান জুড়ে তিনি ছুটে বেড়ান সাধারণ মানুষকে ইসলামের প্রেমময়তা শিক্ষা দেবার জন্য এবং সবখানেই তিনি সাধারণ মানুষের ভালোবাসা পান আর শাসক গোষ্ঠী ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গুলোর বিরাগভাজন হন।
এরপর তিনি তার 400 শিষ্য নিয়ে মকক্বা শরীফে যান হজ্ব করার জন্য । সেখানে তাকে যাদুকর ও ভন্ড বলে তিরস্কার করা হয় এবং মকক্বা নগরীর প্রবেশ দুয়ার বন্ধ করে দেয়া হয় । ফিরে এসে মনসুর একা বেরিয়ে পড়েন ছোট্র নৌকা নিয়ে । সাগর পাড়ি দিয়ে আসেন ভারতে। গুজরাট, সিন্ধু হয়ে চলে যান চীন দেশে । সবখানেই তিনি তার স্বভাব অনুযায়ী হাজার হাজার সাধারণ মানুষের সাথে মিশেন,কথা বলেন,ধর্মের অপার সৌন্দর্য্য ব্যখ্যা করেন এবং সবখানেই তিনি ব্যাপকভাবে আদৃত হন, নন্দিত হন।
মনসুর আবার ফিরে আসেন বাগদাদে । আবারো বাগদাদের সাধারণ মানুষের সাথে শুরু হয় তার ভাবনা বিনিময় ।
তিনি সবাইকে বলেন________
'যদি নিজেকে বিযুক্ত করা যায় সবকিছু থেকে তাহলে
পৌঁছে যাওয়া যায় সেই অলৌকিকতায়
যেখানে কিছুই বিযুক্ত নয় আর, কিছুই নয় সম্পৃক্ত'।

এক পর্যায়ে মনসুর উচ্চারণ করেন তার সব থেকে ভয়ংকর অথচ সুন্দর শব্দগুচ্ছ
' আনাল হক' অর্থাৎ 'আমিই সত্য' ।

তার এই উচ্চারণে কেঁপে উঠে বাগদাদ তথা সমস্ত মুসলিম বিশ্ব। বলা হয় মনসুর নিজেকে আল্লাহ ঘোষনা করেছেন যেহেতু ' হক' আল্লাহর 99 নামের একটা । মনসুরকে প্রশ্ন করা হলে তিনি উত্তর দেন ' আল্লাহ সবখানে এবং সবকিছুতেই । আল্লাহ আমার মাঝেও । তাই আমিই সত্য' ।কিন্তু প্রথা গত ধর্মজ্ঞান তার ব্যখ্যায় খুশি হয়নি । এবার শরীয়া আইনে তাকে কাফের ঘোষনা করে বন্দী করা হয় ।
বন্দী হবার প্রথম দিন মনসুর জেলখানা থেকে অদৃশ্য হয়ে যান,  দ্বিতীয় দিন সে সহ পুরো জেলখানাই অদৃশ্য হয়ে যায়, তৃতীয় দিন আবার দৃশ্যমান হন তিনি এবং জেলখানা । এ ঘটনায় সমস্ত বাগদাদ জুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। প্রধান ধর্মীয় পুরুষগন ছুটে যান তার কাছে ।

তিনি ঘটনার ব্যখ্যা দেন এভাবে_____
'প্রথম দিন আমি চলে গিয়েছিলাম মহানবী(র:) কাছে, দ্বিতীয় দিন মহানবী(র:) এসেছিলেন আমাকে দেখতে, তৃতীয় দিন আমি ফিরে এসেছি তার নির্দেশে শরীয়তকে সম্মান জানাতে'
ঐ জেলে সে সময় তিনশো বন্দি ছিলো । মনসুর তাদের বলেন ' তোমরা কি মুক্তি চাও?' তারা পালটা প্রশ্ন করে 'ওহে মনসুর ক্ষমতা থাকলে তুমি নিজেই মুক্ত হওনা কেন?' তিনি জবাব না দিয়ে তাদের শিকল গুলোর দিকে চোখ মেলে তাকান । শিকল সব ভেঙে পড়ে । তিনি জেলখানার প্রধান ফটকের দিকে দৃষ্টি দেন । ফটক খুলে যায় । সব বন্দি বেরিয়ে যায় । পরদিন সকালে বিস্মিত নগর বাসী একা মনসুরকে বসে থাকতে দেখে জেলখানায় । তাদের প্রশ্নের উত্তরে এবার তিনি বলেন " আমি আমার প্রভূর দেয়া শাস্তির অপেক্ষা করছি'

বন্দি মুক্তির ঘটনা শোনার সাথে সাথে আব্বাসীয় খলিফা তাকে 300 ডোররা এবং ফাঁসীর নির্দেশ দেন ।
শরীয়া আইন অনুযায়ী বাগদাদের তৎকালীন কাজি খলিফার এই নির্দেশনামায় স্বাক্ষর করেন ।

THANK YOU ALL
A N I

No comments

Powered by Blogger.