‘চিপ যুদ্ধ’ আগামীর মূল হাতিয়ার

'Chip war' is the key tool of the future




অনলাইন ডেস্ক;

টাফ্টস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ক্রিস মিলার সম্প্রতি একটি বই লিখেছেন ‘চিপ ওয়ারস’ নামে। তিনি বলেছেন, এই চীন-মার্কিন লড়াইয়ের আরও একটি দিক আছে। এতকাল ধরে এই চীন-মার্কিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা যেমন ‘জাহাজ বা ক্ষেপণাস্ত্রের সংখ্যার মতো ক্ষেত্রে চলেছে, কিন্তু এখন এ লড়াইটা কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তার (এআই) অ্যালগরিদমগুলো কার তৈরি প্রযুক্তি কত ভালো সেই ক্ষেত্রেও চলছে, যা মিলিটারি সিস্টেমগুলোতে ব্যবহার করা যাবে।


মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালির বেইন অ্যান্ড কোম্পানির একজন অংশীদার জু ওয়াং বলেন, চ্যালেঞ্জ হল একটি অতি ক্ষুদ্র সিলিকনের টুকরার মধ্যে কে কতগুলো ট্রানজিস্টর বসাতে পারে সেখানে। সেমিকন্ডাকটর শিল্পে এটাকে বলে ‘মূর’স ল’- যার মূল কথা একটা সময়ে চিপে ট্রানজিস্টরের ঘনত্ব দ্বিগুণ করা। এটা অত্যন্ত কঠিন কাজ।


চিপ তৈরির ক্ষেত্রে মূল প্রতিযোগিতাটা হচ্ছে এর আকার এবং কর্মক্ষমতার ক্ষেত্রে। সবাই চাইছে সবচেয়ে দক্ষ এবং সেরা চিপ বানাতে। অন্যদিকে এগুলো আকারে যত ছোট হবে, ততই ভালো। চিপগুলোর ভেতরে থাকে ট্রানজিস্টর। যাকে বলা যায় অতিক্ষুদ্র ইলেকট্রিক সুইচ। যা বিদ্যুতের প্রবাহকে চালু করতে বা বন্ধ করতে পারে। এটি যত‌ই ছোট হবে, তত‌ই ভালো। 


চিপস তৈরির কাঁচামাল সরবরাহ করে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য কোম্পানি, নানা দেশ। তাদের জটিল নেটওয়ার্ক এমনভাবে একটির সাথে আরেকটি যুক্ত যে সোজা কথায় এই সরবরাহ ব্যবস্থা বা ‘সাপ্লাই চেইনের’ নিয়ন্ত্রণ যার হাতে থাকবে, তার হাতেই উঠবে অপ্রতিদ্বন্দ্বী পরাশক্তি হয়ে ওঠার চাবিকাঠি। প্রযুক্তির বেশির ভাগই আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাতে। 


তবে সমস্যা হল- এখন এই চিপ তৈরির প্রযুক্তি হাতে পেতে চাইছে চীন। ফলে মার্কিনরা চাইছে যেন কিছুতেই তা না হতে পারে। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্য এ দুটি দেশ যে অস্ত্র প্রতিযোগিতায় লিপ্ত তা অনেকেরই জানা।


সেমিকন্ডাকটর আবিষ্কৃত হয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। কিন্তু ধীরে ধীরে এর উৎপাদন বা ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের কেন্দ্র হয়ে দাঁড়ায় পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো। এর একটি কারণ ছিল সরকারি ভর্তুকিসহ নানারকম প্রণোদনামূলক পদক্ষেপ।ফলে ওয়াশিংটন এমন একটি অঞ্চলের সাথে ব্যবসায়িক সম্পর্ক এবং কৌশলগত জোট গড়ে তুলতে পেরেছে যে জায়গাটি স্নায়ুযুদ্ধের সময় রুশ প্রভাবের চাপের মুখে ছিল। একটুখানি সিলিকনের টুকরা দিয়ে তৈরি এই চিপসের বাজার অনেক বিশাল। 


গত ২০২২ সালের মাঝামাঝিতে স্যামসাং বিশ্বের প্রথম কোম্পানি হিসেবে তিন ন্যানোমিটারের মাপে চিপস ব্যাপক হারে উৎপাদন শুরু করে। মানুষের এক গাছা চুল হচ্ছে ৫০ থেকে এক লাখ ন্যানোমিটার। এরচেয়ে অনেক অনেক সরু স্যামসাংয়ের নতুন এই চিপ। এর পরেই এ স্তরে পৌঁছায় তাইওয়ানের টিএসএমসি নামের সেমিকন্ডাকটর উৎপাদনকারী কোম্পানি। তারা হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় চিপ প্রস্তুতকারক এবং অ্যাপল কোম্পানির অন্যতম প্রধান সরবরাহকারী। পৃথিবীতে এখন সবচেয়ে বেশি চিপ তৈরি হচ্ছে তাইওয়ানে। তাইওয়ান দ্বীপটিকে চীন তার নিজের অংশ বলে মনে করে।


প্রথমত, চিপ তৈরিতে চীনের এগিয়ে যাওয়া, আর দ্বিতীয়ত সরবরাহের জন্য তাইওয়ানের মতো এশিয়ার দেশগুলোর ওপর নির্ভরশীলতা।যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এ দুটিই উদ্বেগের কারণ। চিপ তৈরিতে চীন এখনও বিশ্বের এক নম্বর হওয়ার ধারে কাছেও নেই। কিন্তু গত দশকে তারা এ ব্যাপারে অনেকটা এগিয়ে এসেছে। বিশেষ করে চিপের ডিজাইনিংয়ের সক্ষমতার ক্ষেত্রে।

No comments

Powered by Blogger.