দীর্ঘদিনের কোমর ব্যথার দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা এবং পরিকল্পনা
ফিজিওথেরাপি প্র্যাকটিস আ্যন্ড রিসার্চ জার্নালের প্রতিবেদন থেকে জানা যায় বাংলাদেশে কোমর ব্যথার জন্য যেসব চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়, উন্নত বিশ্বে তা প্রায় সম্পূর্ণ অচল। এর ফলে কোমর ব্যথা রোগী উপকার তো পানই না বরং রোগী আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হন। অনেকই ইউটিউব দেখে নিজেই নিজের চিকিৎসা করা শুরু করেন যা বিপদ ডেকে আনতে পারে। তাই এসব ক্ষেত্রেই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
গবেষণা থেকে জানা যাচ্ছে, বাংলাদেশে প্রায় প্রতি ২.৫ জন মানুষের মধ্যে একজন কোমর ব্যথাজনিত সমস্যায় ভুগে থাকেন। বিপুল পরিমাণ মানুষ যেমন কোমর ব্যথায় ভোগেন, ঠিক তেমনি এ সমস্যার চিকিৎসা খরচও অনেক বেশি। কোমর ব্যথার কারণে সারা পৃথিবী বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
কোমর ব্যথা সাধারণত তিন ধরনের-
✓ স্বল্পমেয়াদি
✓ মধ্যমেয়াদি
✓ দীর্ঘমেয়াদি
যে ব্যথার বয়স তিন মাস বা তার বেশি তাকে সাধারণত দীর্ঘমেয়াদি ব্যথা বলে এবং কোমর ব্যথার বেশিরভাগ রোগীই দীর্ঘমেয়াদি ব্যথায় ভোগেন।
দীর্ঘমেয়াদি কোমর ব্যথার চিকিৎসা
দীর্ঘমেয়াদি কোমর ব্যথার চিকিৎসা জটিল। এ ব্যথার জন্য বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকমের চিকিৎসা প্রচলিত আছে। তবে নিরঙ্কুশভাবে কাজ করে এমন কোনো একক চিকিৎসা পদ্ধতি দীর্ঘমেয়াদি কোমর ব্যথা ভালো করতে পারে না।
চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা দীর্ঘমেয়াদি ব্যথার চিকিৎসায় পারসোনালাইজড চিকিৎসা ও সমন্বিত চিকিৎসার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।শারীরিক, প্যাথলজিক্যাল ও রেডিওলোজিক্যাল পরীক্ষা ও রোগীর ইতিহাস গ্রহণ করে ব্যথার ধরন নির্ণয় করে যে চিকিৎসা দেওয়া হয় সেটাই হলো পারসোনালাইজ চিকিৎসা।
এ ক্ষেত্রে একেকজনের চিকিৎসা হয় একেক ধরনের। যেমন, অনেক রোগী আছেন যাদের বসার চেয়ার পরিবর্তন করে কয়েকটি বিশেষায়িত ব্যায়াম করলেই ব্যথা নিয়ন্ত্রণে চলে আসে; আবার অনেকের প্রয়োজন হয় ইলেকট্রোথেরাপির। কোনো কোনো ক্ষেত্রে লাইফস্টাইল মোডিফিকেশন বা জীবনধারায় পরিবর্তন প্রয়োজন হয়।
ভিন্ন ভিন্ন চিকিৎসা ভিন্ন ভিন্ন রোগীদের জন্য প্রয়োজন হয়, আর এর সবকিছুই নির্ভর করে রোগ নির্ণয়ের ওপর। যেমনটি হয় আমাদের সবার আঙুলের ছাপের ক্ষেত্রে, আমাদের সকলের আঙ্গুলের ছাপ ভিন্ন ভিন্ন। একজনের ফিঙ্গার প্রিন্ট বা আঙুলের ছাপের সঙ্গে যেমন অন্যজনের ছাপের মিল নেই, ঠিক তেমনি একেক জনের ব্যথা একেকভাবে শরীরে বাসা বাঁধে।
আমাদের দেশের মানুষ কোমর ব্যথা হলেই রোগী নিজেই ফার্মেসিতে গিয়ে ব্যথানাশক কিনে এনে খেতে থাকেন। যদি ব্যথার ওষুধ কাজ না করে তাহলে চিকিৎসকের কাছে যান।
বাংলাদেশে কোমর ব্যথার চিকিৎসা বিভিন্নভাবে করা হয়। অনেক চিকিৎসক ব্যথার ওষুধ বা এনএসআইডি, গ্যাবাজেরিক, মাসল রিল্যাক্স্যান্ট ইত্যাদির ওপর নির্ভর করে থাকেন। অনেকে সার্জারির ওপর জোর দেন। অনেকে মেশিনের মাধ্যমে ফিজিওথেরাপি, ম্যানুয়াল থেরাপি বা থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ দিয়ে দীর্ঘমেয়াদি কোমর ব্যথা ভালো করতে চান।
সচেতনতা সৃষ্টি করুন
আমাদের দেশেও অনেক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান ও চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। যথাসম্ভব একজন দক্ষ চিকিৎসক নির্বাচন করে তার পরামর্শমতো চিকিৎসা নিতে হবে। যত্রতত্র ক্ষতিকর ব্যথানাশক ওষুধ, অবৈজ্ঞানিক ব্যায়াম, মেশিনের চিকিৎসা ও ম্যানুপুলেশন করা যাবে না।
No comments