ইবাদত এবং বিনিময়

worship-and-exchange


রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা কুরআন পড়, তবে তার দ্বারা বিনিময় গ্রহণ কর না। মুসনাদে আহমাদ ৩:৩৫৭; হাদীস নং ১৫৫৩৫, যারা পার্থিব জীবনের সুখ সমৃদ্ধি,টাকা কড়ি কামানোর জন্য কোরআন পড়বে, কেয়ামতের দিন তাদের ভয়াবহ অবস্থা হবে। 

ইবাদত তিন প্রকার যথা; 
১. মাকাসিদ
২. ওয়াসাইল
৩. রুকইয়াত

১. মাকাসিদ 
তথা খালিস ও মূল ইবাদত যেমন, নামায, রোযা, হজ্ব ও সওয়াবের উদ্দেশ্যে কুরআন তিলাওয়াত, যিকির-আযকার ও দু‘আ-দুরুদ ইত্যাদি। এই প্রকার তথা মাকাসিদ জাতীয় ইবাদত করে তার বিনিময় নেয়া দেয়া সর্ব সম্মতভাবে হারাম। ফাতাওয়ায়ে শামী, ৬:৫৫-৫৮; আল-মুগনী, ৫:২৩;


২. ওয়াসাইল
তথা সহায়ক পর্যায়ের ইবাদত যেমন, ইমামতি, আযান, ইকামত, দ্বীনি শিক্ষা দান, ওয়াজ-নসীহত ইত্যাদি। 

ওয়াসাইল ইবাদত আবার দুই ভাগে বিভক্ত,
ক. যে সকল ইবাদত ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নাতে মুআক্কাদাহ, শরিয়তে ইসলামের অন্তর্ভুক্ত দ্বীনের স্থায়িত্ব তার ওপরে নির্ভরশীল বিধায় তার বিনিময় গ্রহণ ও প্রদান অন্যান্য মাযহাবে জায়েয থাকলেও হানাফী মাযহাবের আলেমগণ জরুরতের কারণে শরী‘আতের বিশেষ উসূলের ভিত্তিতে বিশেষ কতক সহায়ক পর্যায়ের ইবাদতের বিনিময় গ্রহণ প্রদানকে বৈধ বলেছেন। 

ফিকাহবিদগণ সে সকল ইবাদতকে চিহ্নিত করেছেন। সেগুলো হল, ফরয ও ওয়াজিব নামাযের ইমামতি, আযান, ইকামত, দ্বীনি শিক্ষাদান ইত্যাদি।

খ. যে সকল ইবাদত ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নাতে মুআক্কাদাহ, শরিয়তে ইসলামের অন্তর্ভুক্ত দ্বীনের স্থায়িত্ব তার ওপরে নির্ভরশীল নয় যথা, খতমে তারাবীতে কুরআন শুনানো, মৃত ব্যক্তিকে সাওয়াব পৌঁছানোর জন্য খতম পড়া ইত্যাদি।

এ প্রকার ইবাদতের বিনিময়ের লেনদেনে হারাম হওয়ার বিষয়টা শরী‘আতের সকল প্রকার দলীল অর্থাৎ কুরআন, হাদীস, ইজমা এবং কিয়াস দ্বারা সুপ্রমাণিত এবং সুপ্রতিষ্ঠিত। এজন্য কোন কালে কোন মাযহাবের কোন নির্ভরযোগ্য আলেম-ফকীহ এ ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করেননি। ফাতাওয়া রশিদিয়া, ৩২৪; ইমদাদুল ফাতাওয়া, ১:৪৮৪; 


আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী রহ. বলেন, এ ব্যাপারে (সওয়াব রেসানীর উদ্দেশ্যে কুরআন তিলাওয়াত করে বিনিময় লেনদেন নাজায়িয হওয়ার ব্যাপারে) কুরআন, হাদীস, ইজমা, কিয়াস সব দলীলই বিদ্যমান আছে। (ফাতাওয়ায়ে শামী, ৬:৫৫-৫৮; আল-মুগনী, ৫:২৩; আল-মুদাওয়ানাতুল কুবরা ৩:৪৩১; ফাতাওয়া রশীদিয়া, ৪১৭ পৃ.)

৩. রুকইয়াত
তথা বালা-মুসীবত থেকে পরিত্রাণ, রোগ মুক্তি, ব্যবসায় উন্নতি ইত্যাদি পার্থিব উদ্দেশ্যে দু’আ, খতম, ঝাড়-ফুঁক, তাবীয-কবয ইত্যাদি। এই প্রকার ইবাদতের বিনিময় গ্রহণ করা সর্বসম্মতভাবে জায়েয। রদ্দুল মুহতার, ৬:৫৫-৫৮, আল মুদাওয়ানাতুল কুবরা, ৩:৪৩১, ফাতাওয়া রশিদিয়া, ৪১৭


আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন, তুচ্ছ মূল্যে তোমরা আমার আয়াত সমূহকে বিক্রি কর না। (সূরা বাকারা:৪১) তবে এর অর্থ নয় যে, বেশি মূল্যে বিক্রি করা যাবে। কারণ কোর‌আনের তুলনায় গোটা পৃথিবীর মূল্য একেবারেই সামান্য।

হাদীস শরীফে এসেছে, সাহাবী হযরত ইমরান ইবনে হুসাইন রা. সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, তিনি একবার এক বক্তার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, যে কিনা কুরআন পড়ে মানুষের নিকট সাওয়াল করেছিল। 


তিনি এই অবস্থা দেখে ইন্নালিল্লাহ...পড়লেন এবং বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ইরশাদ করতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, যে কুরআন পড়ে সে যেন আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করে। শীঘ্রই কিছু লোকের আবির্ভাব হবে যারা কুরআন পড়ে মানুষের কাছে ভিক্ষা চাইবে। তিরমিযী শরীফ, হাদীস নং ২৯১৭


No comments

Powered by Blogger.