শেষ নবীর অন্বেষণে

 
quest-last-prophet



যায়েদ ইবনে সা’নাহ। ইয়াহুদীদের বড় পণ্ডিত। তাওরাতের বিশেষজ্ঞ। প্রচুর অর্থ সম্পদের মালিক। একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘর থেকে বেরিয়েছেন। সাথে ছিলো হযরত আলী ইবনে আবি তালেব রাযিয়াল্লাহু তাআলা আনহু। এমন সময় এক গ্রাম্য ব্যক্তি সওয়ারী নিয়ে হাজির হলো। 

এক গ্রামের দুর্ভিক্ষের কথা বলে সেখানের মুসলমানদের জন্যে সাহায্য চাইলো। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আলী রাযিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু এর দিকে তাকালেন। তারপর নিজে থেকেই বললেন, আচ্ছা, তোমার কাছে তো কিছু নেই। তখনই নবীজীর দিকে এগিয়ে এলো যায়েদ ইবনে সা’নাহ। 

বললো, আমি আপনাকে কিছু নগদ অর্থ প্রদান করতে পারি। বিনিময়ে আপনি নির্দিষ্ট একটি সময়ের ভেতর অমুক বাগানের খেজুর আমাকে দেবেন। নবীজী বললেন, শোনো ইয়াহুদী। নির্দিষ্ট বাগানের খেজুর দিতে পারবো না। তবে নির্দিষ্ট পরিমাণ খেজুরের বিনিময়ে তুমি টাকা দিতে পারো। 

সময় মতো তোমাকে খেজুর দিয়ে দেয়া হবে। যায়েদ রাজি হয়ে গেলো। ইয়াহুদী চাইছিলো যে কোনো ভাবে নবীজীর সাথে একটা লেনদেন হোক। নিজের থলে খুলে আশি মিসকাল স্বর্ণ নবীজীকে অগ্রীম দিলো। নবীজী স্বর্ণ মুদ্রাগুলো ওই সাহায্যপ্রার্থী ব্যক্তিকে দিয়ে বললেন, এগুলো নিয়ে তাদের সাহায্য করো।

কিছুদিন পর নির্ধারিত সময় আসার তখনও দু’ তিন দিন বাকি। নবীজী সেদিন এক সাহাবীর জানাযা আদায় করছিলেন। সাথে ছিলেন আবু বকর, উমরসহ একদল সাহাবী। ঠিক সেই সময়ে ইয়াহুদী পন্ডিত যায়েদ ইবনে সা’নাহ পাওনা আদায়ের জন্যে উপস্থিত হলো।

জানাযা শেষে নবীজী একটি দেয়ালের ছায়ায় বসার জন্যে এগিয়ে গেলেন। কিন্তু তার আগেই নবীজীর জামা চেপে ধরলো যায়েদ। গোস্বা ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো, কী ব্যাপার মুহাম্মদ! তুমি কি পাওনা আদায় করবে না? খোদার কসম, আব্দুল মুত্তালিবের বংশের সবাই পাওনা আদায়ে গড়িমসি করে। 

তোমাদের টালবাহানা সম্পর্কে আমি আগে থেকেই জানতাম। তখন যায়েদ ইবনে সা’নাহ-র কথা শুনছিলেন হযরত উমর রাযিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু। রাগে চোখ ঠিকরে বেরিয়ে আসার উপক্রম। তিনি বললেন, ওহে আল্লাহর শত্রু, আল্লাহর রাসূলকে তুমি এমন কথা বলছো? 

আমার সামনে তাঁর সাথে এমন আচরণ করছো? আল্লাহর শপথ, যদি নবীজীর প্রাণের ঝুঁকি না থাকতো তরবারীর আঘাতে তোমার মাথা উড়িয়ে দিতাম।নবীজী উমরের কথা শুনে মুচকি হাসলেন। বললেন, ‘উমর, তোমার কাছ থেকে আমরা দু’জনই আরো ভালো কিছু আশা করছিলাম। 

ভালো হতো যদি তুমি রাগ না করে আমাকে পাওনা আদায়ের পরামর্শ দিতে আর তাকে ভালো ভাবে চাইতে আদেশ করতে। যাও উমর, তার পাওনা আদায় করে দাও। সেই সাথে তোমার ধমকের বিনিময়ে তাকে বিশ সা’ অতিরিক্ত খেজুর দিয়ে দাও। নবীজীর কথা মতে হযরত উমর রা: পাওনা পরিশোধ করলেন। 

অতিরিক্ত বিশ সা’ পেয়ে যায়েদ ইবনে সা’নাহ অবাক হলেন। বললেন, অতিরিক্ত খেজুর কী জন্যে? উমর রাযিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বললেন, এটা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদেশ। তোমার সাথে কঠোরতার বিনিময়।যায়েদ ইবনে সা’নাহ বললেন, উমর, আমাকে চেনো?

উমর রাযিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বললেন, কে তুমি?
- আমি যায়েদ ইবনে সা’নাহ।
- সেই ইয়াহুদী পণ্ডিত?
- হ্যাঁ, সেই পণ্ডিত।

উমর রাযিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু যায়েদ ইবনে সা’নার নাম ইতোপূর্বে শুনেছেন। তিনি অবাক হলেন। তাওরাতের এতো বড় পণ্ডিত। বিরাট সম্পদশালী মানুষ। সে কেন সামান্য কিছু পাওনার জন্যে নবীজীর সাথে এমন আচরণ করলো? তিনি তাকে প্রশ্ন করলেন, তুমি কেন আল্লাহর রাসূলের সাথে এমন করতে গেলে?

যায়েদ ইবনে সা’নাহ বললেন, ‘উমর, তাওরাতে থাকা শেষ নবীর আলামতগুলো আমি মেলাচ্ছিলাম নবীজীর সাথে। একে একে সবই মিলে গিয়েছিল। সবগুলোই দেখে ফেলেছিলাম তার মাঝে। দুটো আলামত মেলানো বাকি রয়ে গিয়েছিলো।

এক. শেষ নবীর সহিষ্ণুতা তার নির্বুদ্ধিতার ওপর প্রবল থাকবে। দুই. তার সাথে কেউ মুর্খের আচরণ করলে তিনি সর্বোচ্চ সহনশীলতার পরিচয় দেবেন। আমি সুযোগ খুঁজছিলাম। যেভাবেই হোক মুহাম্মদের সহনশীলতা কেমন তা মাপতে হবে। দেখতে হবে তার সহিষ্ণুতা আর নির্বুদ্ধিতার পরিমাণ। আমার লেনদেনের উদ্দেশ্য ছিলো এটাই। 

এ লেনদেনের মাধ্যমে আজ আমি সে দুটো আলামতও নবীজীর মাঝে পেয়ে গেলাম। উমর, আমি তোমাকে সাক্ষী রেখে সন্তুষ্ট চিত্তে-
আল্লাহকে আমার রব,
ইসলামকে আমার ধর্ম,
আর মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমার নবী হিসেবে মেনে নিচ্ছি।’

উমর রাযিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু-এর সামনে ইসলাম গ্রহণ করার পর নবীজীর সামনে উপস্থিত হয়েও নিজের ইসলামের কথা প্রকাশ করলেন তিনি।একদিনেই সফলতার পথে অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছিলেন যায়েদ ইবনে সা’নাহ রাযিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু। এরপর তাকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি। 

সর্বশেষ তাবূকের জিহাদে তিনি অত্যন্ত সাহসের সাথে শত্রুপক্ষের দিকে এগিয়ে যান। এগিয়ে যান চিরশান্তির ঠিকানা জান্নাতের দিকে। 


No comments

Powered by Blogger.