অন্য জগতের কে কে

Kk

পুরো তার নাম কৃষ্ণকুমার কুন্নাথ। তবে পরিচিতি কে কে নামে। অকালে হারিয়ে গেলেন ভারতের জনপ্রিয় এই সঙ্গীতশিল্পী। বেঁচে থাকলে মঙ্গলবার ৫৪ বছর পূর্ণ হত তার। কিন্তু তিনি অকালেই আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। 


অন্য জগতের কে কে
We miss you from heart and soul




গত ৩১ মে কলকাতায় এক কনসার্টে গান গাওয়ার পরপরই অসুস্থ হয়ে না ফেরার দেশে চলে যান কে কে। মৃত্যুর পর তার প্রথম জন্মবার্ষিকীতে শোকের আবহ নিয়েই তাকে স্মরণ করেছে বলিউড। হিন্দি, বাংলা, তামিল, তেলেগুসহ নানা ভাষায় গাইতে পারা এই শিল্পী লাইমলাইটে চলে আসে পাল, ইয়ারো গানগুলোর মাধ্যমে। 




প্রচারের আলোয় থাকা এই সঙ্গীত তারকার ৫৪ বছরের জীবনের অনেক কিছুই জানা, আবার অনেক কিছুই জানা গেল তার মৃত্যুর পর। প্রতিভাধর এই গায়ক তার স্টেজ নাম কে কে হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। কপিল শর্মার শো-তে এসে এর কারণ দেখিয়ে তিনি বলেন, দিল্লিতে থাকার সময়ে সবাই তাকে কে কে বলে ডাকত। তিনি কৃষ্ণকুমার নামে পরিচিত হতে চাইলেও কেউ তাকে চিনতে পারছিল না। তাই সবাই যে নামে চিনত, সেই নামই তিনি রেখে দেন।


চলচিত্রে তিনি অবদান রেখেছেন ‘তাড়াপ তাড়াপ’, ‘ডোলা রে’, ‘ক্যায়া মুঝে প্যায়ার হ্যায়’, ‘সাচ কেহ রাহা হ্যায় দিওয়ানা’, ‘জিন্দেগি দো পাল কি’, ‘আলভিদা’, ‘তু হি মেরি সাব হ্যায়’, ‘খুদা জানে’, ‘আঁখোমে তেরি’ এমন নানা গানের মাধ্যমে। পাঁচবার জিতেছেন ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড। 


প্লে-ব্যাক গায়ক হিসেবে তার বড় মাইলফলক আসে এ আর রহমানের হিট গান কাল্লুরি সালে এবং হ্যালো ডক্টরের মাধ্যমে। বলিউডে তার প্রথম আত্মপ্রকাশ ঘটে ‘মাচিস’ সিনেমার ‘ছোড় আয়ে হাম উও গালিয়া’ গান দিয়ে। ‘হাম দিল দে চুকে সনম’ সিনেমার ‘তাড়াপ তাড়াপ’ গানটি তার ক্যারিয়ারে রচনা করে কালজয়ী ইতিহাস, যার দরুণ তিনি রাতারাতি হয়ে ওঠেন তারকা। এবং এরপর তাকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি। আজ আমরা আলোচনা করবো তার কিছু মহৎ গুণের কথা 

সীমাহীন লাজুক মানুষ ছিলেন 

২০১৮ সালে হিন্দুস্তান টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কে কে বলেছিলেন যে তিনি সব সময় লাজুক, তাই মিডিয়াতে খুব একটা দেখা দেন না। তার ভাষ্যে, এ কারণেই মানুষ আসলে জানে না তিনি কে? বহুবার শ্রোতারা কনসার্টের পর তার কাছে এসে জানতে চেয়েছে, তিনি কি সত্যিই কে কে এবং সত্যিই কি তিনি তাড়াপ তাড়াপ এবং আলভিদার মত গানগুলো গেয়েছেন ?


প্রেম-পরিণয়ে মধুময় চাইল্ডহুড 

ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকেই জ্যোতির সঙ্গে কে কে’র পরিচয়। প্রায় ২৪ বছর ধরে জানা এই নারীই হন তার জীবনসঙ্গী। কপিল শর্মার শো-তে তিনি বলেছিলেন, খুব লাজুক স্বভাবের কারণে জ্যোতি ছাড়া অন্য কোনো নারীর সঙ্গে কখনই ডেইটেও যাননি তিনি, এমনকি জ্যোতির সঙ্গে ঠিকভাবে ডেইট করতে পারতেন না।


বিয়ে করার জন্য চাকরি করতে হয়েছে 

প্রেয়সীকে বিয়ের জন্য বিক্রয়কর্মীর চাকরি নিয়েছিলেন কে কে। ছয় মাস পর বিবাহিত কে কে বিরক্ত হয়ে পড়েছিলেন এই চাকরি নিয়ে। স্ত্রী এবং বাবার উৎসাহে তিনি চাকরি ছেড়ে সঙ্গীতে মননিবেশ করেন, যা তিনি ছোট থেকে করতে চেয়েছিলেন।


গানের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই 

বলিউড মাতানো এই গায়কের ছিল না গানের উপর কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা। দিল্লির মাউন্ট সেন্ট মেরি স্কুলে পড়ার সময় তিনি তার মাকে গান গাইতে শুনতেন, যা তার বাবা একটি ছোট টেপে রেকর্ড করতেন। দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় স্কুলের অনুষ্ঠানে তিনি ‘রাজা রানী’ চলচ্চিত্রের ‘জাব আন্ধেরা হ্যায়’ গানটি গেয়ে শোনান, যা শ্রোতা সমাদৃত হয়েছিল। তখন তিনি আবিষ্কার করেন গানের প্রতি তার আগ্রহ। এই অভিজ্ঞতাকে কে কে ‘লাইফ-চেঞ্জিং’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন।


প্রথম চেকের স্মৃতি 

সাড়ে তিন হাজারের বেশি জিঙ্গেলে কণ্ঠ দেওয়া এই শিল্পীর প্রথম জিঙ্গেলটি বের হয় ১৯৯৪ সালে, যার মাধ্যমে শ্রোতারা আগ্রহী হয় তার কণ্ঠস্বরের বিষয়ে। জিঙ্গেলের জন্য সঙ্গীত পরিচালক রঞ্জিত বারোত পে-চেকের বিষয়ে তার মতামত জানতে চাইলে তিনি খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়েন, কারণ ইন্ডাস্ট্রিতে তিনি সম্পূর্ণ নতুন এবং এর বেতন ব্যবস্থা সম্পর্কে তার কোন ধারণা ছিল না। পরে রঞ্জিত যখন তাকে হাতের পাঁচ আঙুল দেখিয়ে ফ্ল্যাশ করেছিলেন, কে কে তখন ধরেছিলেন তিনি ৫০০ রুপি পাবেন। কিন্তু তিনি অবাক হয়ে যান, যখন তিনি ৫ হাজার রুপির পে-চেকটি হাতে পান।


এই গুণোমান শিল্পীর অকাল মৃত্যুতে স্তব্ধ হয়ে পড়েছিল গোটা ভারতসহ অগনিত ভক্তকুল। এযেন প্রতিভার মৃত্যু, এযেন শিল্পের মৃত্যু। কিন্তু তার গান গুলো মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকবে চিরকাল। 

No comments

Powered by Blogger.