সৌন্দর্য চর্চায় পাঁচ তেল


five-oils-beauty-practice



সৌন্দর্য চর্চার প্রায় সবগুলো প্রসাধনীতেই বিভিন্ন ধরনের তেল ব্যবহার হয়ে আসছে। কিছু তেল প্রাচীন কালেই আবিষ্কার হয়েছিল আবার কিছু তেল ইদানীং কালে বিজ্ঞানের গবেষণায় পাওয়া গেছে কিন্তু সবগুলো তেল অত্যন্ত কার্যকরী। যদি প্রসাধনীর আকাশ ছোঁয়া মূল্যের সাথে সামঞ্জস্য করতে না পারেন, তাহলে প্রাকৃতিক তেল গুলো আপনি চাইলে ঘরোয়া ভাবেই বানাতে পারেন এবং এই তেল গুলোর ব্যবহার বিধি, উপকারিতা জেনে নিতে পারেন শুধু মাত্র পাঁচ মিনিট সময় নিয়ে পড়তে থাকুন। 


In this Article 
(১) তিলের তেল
(২) কাঠবাদাম'এর তেল
(৩) নারিকেল তেল 
(৪) টি-ট্রি অয়েল / চা পাতার তেল 
(৫) অলিভ অয়েল



(১) তিলের তেল
যত্ন না নেয়ার কারণে বয়স বাড়ার আগেই ত্বকে বলিরেখা পড়ে যায়। এই তিলের তেল ত্বকে বয়সের বলিরেখা রোধ করতে প্রচুর সাহায্য করে। প্রতিদিন তিলের তেলের ম্যাসাজ করলে মুখে রক্ত চলাচল বাড়বে এবং ত্বক স্বাস্থ্যোজ্জ্বল হয়ে উঠবে। তিলের তেল ত্বকের মরা চামড়া তুলে ফেলতে পারে। ত্বক সতেজ রাখতে সাহায্য করে। 


যাদের ত্বকে রোদে পোড়া ভাব রয়েছে তারা পোড়া দাগ দূর করতে পারেন তিলের তেলের ম্যাসাজের মাধ্যমে। তিলের তেল যেমন সারা রাত ত্বকে লাগিয়ে রাখা যায়, তেমনি ক্লিনজিং ক্রিম হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। তিলের তেল পায়ের গোড়ালি ফাটার সমাধান করতে পারে। গোসলের সময় পানিতে দুই থেকে তিন টেবিল-চামচ তিলের তেল মিশিয়ে নিতে পারেন। এতে ত্বকের ভেতর থেকে ময়লা বেরিয়ে আসবে। কুসুম কুসুম গরম পানি ও মৃদু সাবান দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করে নিন।



(২) কাঠবাদাম তেল
কাঠবাদাম তেলে ওমেগা-৯ ফ্যাটি অ্যাসিড, এসেনশিয়াল ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিডের পরিমাণ অনেক বেশি। কাঠবাদামের তেল ত্বকের সুস্থতা এবং উজ্জ্বলতায় বেশি উপকারি। প্রতিদিন ব্যবহারে চেহারায় বয়সের ছাপ পড়বে না এবং বলিরেখা দূর হবে। চোখের নিচের কালি, ব্যথা, ফোলা ও চুলকানি কমাতে সাহায্য করে এই তেল। 


কাঠবাদামের তেলে চিটচিটে ভাব থাকে না। তাই ত্বক, চুল ও নখের যত্নে এটি জাদুর মতো কাজ করে। অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ এই তেলটি নিয়মিত ব্যবহারে আপনি অতি সহজেই পেতে পারেন কোমল, মসৃন, দাগহীন উজ্জ্বল ত্বক। রোদে পোড়া কালো দাগ, একজিমা, সোরিয়াসিস, এ সকল চর্মরোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয় কাঠ বাদাম তেল। 

ব্যবহার এবং কার্যকরিতা 
✓ তৈলাক্ত ত্বকে এই তেল কম ব্যবহার করাই শ্রেয়। 
✓ শুষ্ক ত্বকে আর্দ্রতা ধরে রাখে। চোখের নিচের কালো দাগ দূর করে।
✓ ত্বকের গভীরে গিয়ে পুষ্টি জোগাতে সাহায্য করে। 
✓ রাতে ঘুমানোর আগে কাঠবাদামের তেল ত্বকে মাখলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ে ও হারানো সতেজতা ফিরে আসে।



(৩) নারিকেল তেল 
চুলের যত্নে যুগে যুগে নারিকেল তেল ব্যবহার হয়ে আসছে। দুর্বল চুলের গোড়া শক্ত করে। ত্বকে মালিশ করলে ত্বক থাকবে সতেজ। নারিকেল তেল ত্বকে ব্লিচ ও ক্লিনজারের কাজ করে। ত্বক নমনীয় করতে নারিকেলের তেল ব্যবহার করুন।র‍্যাশের সমস্যা সমাধানেও নারকেল তেল খুবই কার্যকারী। 

ব্যবহার এবং কার্যকারিতা
✓ ফেটে যাওয়া ত্বকের লাবণ্য ফিরিয়ে আনতে নারিকেল তেল ব্যবহার করুন। 
✓ নিয়মিত নারকেল তেল দিয়ে ম্যাসাজ করলে ত্বকের পানিশূন্যতা দূর হবে।
✓ ত্বকের আর্দ্রতা রক্ষায়ও নারিকেল তেল ব্যবহার করুন, ত্বক সতেজ থাকবে।
✓ নারিকেল তেলের সাথে ভিটামিন ই ক্যাপসুল মিশিয়ে ফ্রিজে রেখে শক্ত করে প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে চোখের নিচে ঘষলে কালো দাগ দূর হয়ে যাবে।



(৪) টি-ট্রি অয়েল / চা পাতার তেল 
তৈলাক্ত ত্বকে যে কোনো তেল ব্যবহারের আগে অনেক কিছুই ভেবে নিতে হয়। কারণ তেলের ব্যবহার ব্রণের সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু তৈলাক্ত ত্বকের এ সকল সমস্যার সমাধান এনে দেবে টি ট্রি অয়েল। পোকামাকড়ের কামড়ে জ্বালাপোড়া, হালকা কাটা ছেঁড়া, কর্নক্যানলকে সফট করতে টি ট্রি অয়েল এক কথায় অসাধারণ। এটি মাথায় দিয়ে দুই থেকে তিন ঘণ্টা পর শ্যাম্পু করলে উঁকুন ও খুশকির হাত থেকে রক্ষা পাবেন। 


গবেষণায় দেখা গেছে ব্রণের চিকিৎসায় টি ট্রি অয়েল, বেনজয়েল পার অক্সাইডের মতো কাজ করে। র‍্যাশ, চামড়া উঠা কোনোরকম সাইড ইফেক্ট ছাড়াই অ্যান্টি ভাইরাল, অ্যান্টি ফাঙ্গাল, অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্যগুলো থাকায় চিকিৎসকরা এই অয়েলকে ওষুধ হিসেবেও আখ্যায়িত করে থাকেন।

(৫) অলিভ অয়েল
ক্রিম, লোশন, শ্যাম্পু অনেক প্রসাধনীতে ব্যবহৃত হচ্ছে অলিভ অয়েল। এই তেল অতি সহজেই ত্বকের গভীরে পৌঁছে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে। অলিভ ওয়েলে রয়েছে ভিটামিন এ, ই এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা ত্বককে সতেজ রাখে। ত্বকে ময়েশ্চারাইজারেরও কাজ করবে। 


ব্যবহার এবং কার্যকারিতা
✓ তুলোতে সামান্য অলিভ অয়েল লাগিয়ে মুখে দশ থেকে পনের মিনিট ধরে লাগাতে থাকুন। এরপর কুসুম গরম পানিতে তোয়ালে ভিজিয়ে তা দিয়ে মুখ মুছে ফেলুন। 
✓ প্রতিদিন গোসল করার পর সামান্য পানির সাথে অলিভ ওয়েল মিশিয়ে সারা শরীরে ম্যাসেজ করুন, এতে শরীরের ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে।
✓ বয়স বাড়ার সাথে সাথে ত্বকে বলিরেখা দেখা দেয়। কপালে, চোখের পাশে ও নিচে চামড়ায় হালকা ভাঁজ দেখা দেয়। প্রতিদিন অলিভ ওয়েল দিয়ে ত্বকে ভালো ভাবে ম্যাসাজ করলে বলিরেখা পড়তে বিলম্ব হবে। 



No comments

Powered by Blogger.