নিউমোনিয়ার কারণ, লক্ষণ এবং চিকিৎসা
শীতকাল যায় যায়, তবুও আশঙ্কা রয়েই যায়। এখনও জ্বর কাশিসহ নিউমোনিয়ার মতো রোগে আক্রান্ত হতে পারেন আপনি বা আপনার পরিবার। তাই এখনই এর সম্পর্কে জানতে হবে এবং সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।নিউমোনিয়া হলো ফুসফুসের প্রদাহজনিত একটি রোগ। সাধারণত ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক সংক্রমনের কারণে নিউমোনিয়া হয়। নিউমোনিয়া মৃদু বা হাল্কা থেকে জীবন হানিকরও হতে পারে।
নিউমোনিয়ার ফলে ফ্লু এর সম্ভাবনাও দেখা দিতে পারে। সাধারণত বয়স্ক ব্যক্তিদের, যারা দীর্ঘদিন রোগে ভুগছেন অথবা যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল বা কম তাদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। তবে তরুণ, অল্প বয়স্ক, স্বাস্থ্যবান লোকদেরও নিউমোনিয়া হতে পারে। আপনার আদরের শিশুকে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুর কাছ থেকে দূরে রাখতে হবে। এছাড়া হাঁচি-কাশি আক্রান্ত লোকের সামনে থেকে শিশুদের দূরে রাখুন। সবসময় ধুলাবালি থেকে দূরে রাখুন। শিশুকে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন।
✓ নিউমোনিয়ার লক্ষণ সমূহ
নিউমোনিয়ার উপসর্গগুলো ভিন্ন হয়ে থাকে। এটা নির্ভর করে শারীরিক অবস্থা কি ধরনের জীবাণু নিউমোনিয়ার সংক্রমণ ঘটিয়েছে তার উপর। নিউমোনিয়া হলে অস্বাভাবিক জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট, ঘাম, বুকে ব্যথা হলেই ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। যারা বৃদ্ধ এবং শিশু বা যারা ধূমপান করেন বা যারা ফুসফুসে কোন আঘাত পেয়েছেন বা যাদের কেমোথেরাপি (ক্যান্সারের চিকিৎসা) অথবা অন্য কোন ঔষধ খাওয়ার ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেছে তাদের যদি নিম্নোক্ত লক্ষণ দেখা দেয় তাহলে তাদেরকে দ্রুত ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। তা না হলে নিউমোনিয়া মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।
১. মাথা ব্যথা
২. মাংসপেশীতে ব্যাথা
৩. ক্লান্তি অনুভব করা
৪. জ্বর
৫. কাশি
৬. শ্বাস কষ্ট হওয়া, বুকে ব্যাথা যা শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে উঠা নামা করে
৭. ঘাম হওয়া
৮. কাঁপুনি অনুভব হওয়া।
নিউমোনিয়া হলে শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা প্রয়োজন হয়, এক্ষেত্রে বুকের এক্স-রে, রক্ত এবং কফ/শ্লেষ্মা (Mucus) পরীক্ষা করানো দরকার হয়। মারাত্মক নিউমোনিয়া হয়ে থাকলে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে শিরাপথে এ্যান্টিবায়োটিক এবং অক্সিজেন দেয়ার প্রয়োজন হতে পারে। অক্সিজেনের প্রয়োজন না হলে বাড়িতে থেকেও মুখে এ্যান্টিবায়োটিক সেবন করা যেতে পারে।
জ্বর এবং ব্যথা কমানোর জন্য ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবনের পাশাপাশি নিয়মিত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রচুর বিশ্রাম গ্রহণ করতে হবে। প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার গ্রহণ এবং পানি পান করতে হবে।
✓ নিউমোনিয়া প্রতিরোধ করার উপায়
যে কোন ধরনের রোগ হওয়ার আগেই সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। চলা ফেরায়, খাওয়া দাওয়া সবকিছুতেই লাগাম টানতে হয়। কিছু নির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করলে নিউমোনিয়া প্রতিরোধ করা যায় যেমন,
১. ভালোভাবে পরিস্কার করে হাত ধুতে হবে
২. নিজের প্রতি যত্ন নিতে হবে
৩. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে
৪. সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে হবে
৫. ধূমপান করা যাবে না
৬. অন্যের সামনে হাঁচি/কাশি দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। হাঁচি/কাশি দেয়ার সময় মুখ হাত দিয়ে ঢাকতে হবে বা রুমাল ব্যবহার করতে হবে।
রোগ বালাইয়ের এসময় খুবই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। নিজেকে এবং নিজের পরিবারকে সুরক্ষা দিতে হবে। নিউমোনিয়া এক সময় আতংকের নাম ছিল কিন্তু বর্তমানে এই রোগের চিকিৎসা খুবই সহজলভ্য, তাই অবহেলা না করে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে চিকিৎসা নিতে হবে।
No comments