মান্না ও সালওয়া কি, কাদের জন্য দেওয়া হতো এবং কেন আবার রহিত করা হলো, জেনে নিন সেই অবিস্মরণীয় ঘটনা


What is manna and salwa, for whom it was given and why it was abolished again, know the unforgettable event


manna-salwa-whom-given-was-abolished-again-know-unforgettable-event



∆ মান্না সাল‌ওয়া কেন আসতো?
যখন ঈসা (আ.)-এর সঙ্গীরা তাঁর কাছে আসমানি খাবার প্রার্থনা করে, তখন তিনি পশমের বস্ত্র খুলে কালো রঙের পায়জামা পরিধান করেন। অতঃপর পায়ের সঙ্গে পা, গোড়ালির সঙ্গে গোড়ালি ও পদদ্বয়ের বৃদ্ধাঙ্গুলিগুলো একত্রিত করে দাঁড়ান। অতঃপর ডান হাত বাঁ হাতের ওপর রাখেন। 


তারপর মাথা নিচু করে বিনম্র হয়ে ক্রন্দন করে অশ্রু দিয়ে দাড়ি মোবারক সিক্ত করে দোয়া করেন—হে আল্লাহ! আমাদের রব! আমাদের প্রতি আকাশ থেকে খাদ্যভর্তি খাঞ্চা অবতরণ করুন। অতঃপর দুটি মেঘ খণ্ডের মাঝে গোলাকার রক্তিম বর্ণের একটি দস্তরখান অবতীর্ণ হয়। মানুষ তা প্রত্যক্ষ করেছে। হজরত ঈসা (আ.) তখন দোয়া করেন, হে আল্লাহ! একে রহমত হিসেবে নির্ধারণ করুন। আমার রবের পরীক্ষার বিষয় করবেন না। 


আল্লাহ তাআলা তাঁর দোয়া কবুল করেন। অতঃপর রুমাল দিয়ে আবৃত খাঞ্চা হজরত ঈসা (আ.)-এর সামনে অবতীর্ণ হয়। তিনি তখন সিজদায় লুটিয়ে পড়েন। হাওয়ারিও তাঁর সঙ্গে সিজদায় লুটিয়ে পড়েন। তাঁরা তাতে এমন সুগন্ধি অনুভব করেন, যা এর আগে কখনো অনুভব করেননি। হজরত ঈসা (আ.) বলেন, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি অধিক আবেদ ও পুণ্যবান, সে তা খোলো। আমরা তা থেকে খাব ও আল্লাহর প্রশংসা করব। (তাফসিরে কুরতুবি)


ঈসা (আ.)-এর সঙ্গীরা বলল, হে রুহুল্লাহ! আপনিই এর অধিক হকদার। হজরত ঈসা (আ.) তখন অজুু করে নামাজ পড়েন ও দীর্ঘ মোনাজাত করেন। অতঃপর বসে খাঞ্চাটি খোলেন। এ খাঞ্চা অবতীর্ণের দিবসটি ছিল শনিবার। তাই ইহুদিরা এ দিনকে ঈদের দিন মনে করে।
খাঞ্চায় যেসব জিনিস ছিল তা হলো
✓ কাঁটাহীন তৈলাক্ত একটি ভুনা মাছ।
✓ মাছের চতুর্দিকে ছিল বিভিন্ন ধরনের সবজি।
✓ মাছের মাথার কাছে ছিল লবণ ও ঝোল।
✓ লেজের কাছে ছিল পাঁচটি রুটি।
প্রতিটি রুটির একটিতে ছিল পাঁচটি আনার, আরেকটিতে খেজুর, অন্যটিতে জাইতুন। সালাবি (রহ.) বলেন, একটিতে ছিল জাইতুন, আরেকটিতে মধু, আরেকটিতে ডিম, আরেকটিতে ছিল পনির, আরেকটিতে গোশত।


মান্না ও সালওয়া কী?
মান্না সাল‌ওয়া কি ধরনের খাবার বা কি খাবার এ নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে, কারো মতে মান্না হলো এমন খাদ্য, যা রাতে কুয়াশার মতো পড়ে জমে যেত ও সুস্বাদু খাদ্যে পরিণত হতো। কারো কারো মতে, মান্না হলো ডুমুর। কারো কারো মতে, আঠালো সুমিষ্ট বস্তু। কারো মতে মধু, কারো মতে সুমিষ্ট পানীয়। কারো মতে, পাতলা রুটি।

সালওয়া ছিল এক ধরনের পাখি, যা সূর্যাস্তের পর ঝাঁকে ঝাঁকে এসে ধরা দিত। তারা এদের গোশত ভক্ষণ করত।

∆ মান্না সাল‌ওয়া কেন রহিত করা হয়েছে!
আসমান হতে নাজিল হওয়া খাবার মান্না ও সালওয়া খাওয়ার ব্যাপারে তারা বিরক্তি প্রকাশ করে দুনিয়ার খাবার গ্রহণের কথা উল্লেখ করে। পাশাপাশি তারা আল্লাহর কিতাব ও নবিদের অবাধ্যতা করতে থাকে। এমনকি নবি রাসুলদের হত্যা করতেও তারা কুণ্ঠাবোধ করেনি। যা ছিল অন্যায় এবং অতিরিক্ত সীমা লংঘন।যার ফলশ্রুতিতে আল্লাহ তাআলা তাদের লাঞ্ছনা এবং দারিদ্র্যের মধ্যে নিপতিত করেন এবং তাদের প্রতি আল্লাহ তাআলা রাগান্বিত হন।

আল্লাহ তাআলা বলেন-এবং যখন তোমরা বলেছিলে- হে মুসা! আমরা একইরূপ খাদ্যে ধৈর্য ধারণ করতে পারছি না, অতএব তুমি আমাদের জন্য তোমার প্রভুর নিকট প্রার্থনা কর- তিনি যেন আমাদের জন্মভূমিতে যা উৎপন্ন হয় তা হতে ওর শাক-সবজি, ওর কাঁকড়, ওর গম, ওর মসুর, এবং ওর পেঁয়াজ উৎপন্ন করেন। তিনি (মুসা) বলেছিলেন, যা উৎকৃষ্ট তোমরা কি তার সঙ্গে যা নিকৃষ্ট তার বিনিময় করতে চাও? 


তোমরা কোনো নগরে উপনীত হও, তাহলে তোমাদের চাহিদা মোতাবেক দ্রব্যগুলো প্রাপ্ত হবে। আর তাদের উপর লাঞ্ছনা ও দারিদ্র নিপতিত হলো এবং তারা আল্লাহর রোষানলে পতিত হলো এ কারণ হলো- নিশ্চয় তারা আল্লাহর নির্দশনসমূহে অবিশ্বাস করতো এবং অন্যায়ভাবে নবীগণকে হত্যা করতো; এ কারণে যে, তারা অবাধ্যাচরণ করেছিল ও তারা সীমা অতিক্রম করেছিল। (সুরা বাক্বারা : আয়াত ৬১)



No comments

Powered by Blogger.