জামা‘আতের সাথে নামায আদায় করার সাওয়াব এবং প্রভাব



reward-praying-with-congregation



ইসলামের মূল আক্বিদা সমূহের মধ্যে নামাজ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কোরআন হাদিসে নামাজের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি দেওয়া হয়েছে। নামাজ একাকি পড়া যায় কিন্তু জামা‘আতের সাথে নামায আদায় করার ব্যাপারে শরী‘আতে যথেষ্ট গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। কিছু সীমিত কন্ডিশন ছাড়া জামায়াত ছেড়ে দেওয়ার বিধান নেই, কেননা জামায়াতের সাথে নামাজ আদায় করার গুরুত্ব অনেক, সাওয়াব‌ও অনেক। কুরআনে কারীমে মহান রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন, তোমরা রুকুকারীদের সাথে রুকু কর। অর্থাৎ, মসজিদে জামা‘আতের সাথে নামায আদায় কর।


∆ যে সমস্ত কারণে জামা‘আত ছেড়ে দেওয়া জায়েয
১. প্রবল বৃষ্টি বা ভারি বর্ষণের কারণে ঘর থেকে বের হতে না পারলে 
২. অতিরিক্ত ঠাণ্ডার কারণে 
৩. কোন হিংস্র জন্তু বা ডাকাতের ভয়-ভীতির কারণে 
৪. চলতে অক্ষম হওয়ার কারণে
৫. অতিরিক্ত বার্ধক্যের কারণে 
৬. অতিরিক্ত ক্ষুধার সময় খাদ্য সামনে উপস্থিত থাকলে 
৭. সফরের ইচ্ছা করা ও তার জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার কারণে 
৮. রোগীর শুশ্রূষা করার কারণে 
৯. প্রচণ্ড বাতাস প্রবাহিত হওয়ার কারণে 
১০. ঘুটঘুটে অন্ধকারের কারণে যেতে না পারলে 
১১. বন্দী বা জেল হাজতে থাকলে 
১২. অন্ধ হলে জামায়াত ছেড়ে দেওয়া জায়েয 
১৩. পঙ্গু হ‌ওয়ার কারণে 
১৪. ভীষণ অসুস্থতার কারণে।


হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযি. বলেন, আমাদের যুগে আমি দেখেছি যে, প্রকাশ্য মুনাফিক এবং অসুস্থ ব্যক্তি ছাড়া কেউ জামা‘আত ত্যাগ করত না। এমনকি কোন অসুস্থ ব্যক্তি যদি দুই জনের কাঁধে ভর করে হাটতে পারত তবে সেও মসজিদে এসে জামা‘আতে শরীক হত। (মুসলিম শরীফ হাদীস নং-৬৫৪)

জামা‘আতে নামায পড়ার গুরুত্ব 
✓ হযরত আবু মূসা আশআরী রাযি. থেকে বর্ণিত, এক হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি মসজিদ থেকে যতদূরে অবস্থান করে, সে দূর থেকে মসজিদে আসার দরুন ততবেশী সওয়ারে অধিকারী হবে। (বুখারী শরীফ হাদীস নং ৬৫১, মুসলিম শরীফ হাদীস নং ৬৬২)

✓ হযরত আবু উমামা রাযি. থেকে বর্ণিত- অন্য এক হাদীসে আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি ঘর থেকে উযূ করে ফরয নামাযের উদ্দেশ্যে মসজিদ দিকে রওনা হল, সে ইহরাম বেঁধে হজ্বে গমনকারীর প্রাপ্ত সওয়াবের পরিমাণ সওয়াবের অধিকারী হবে। (আবূ দাউদ শরীফ হাদিস নং ৫৫৮)


✓ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাযি. থেকে বর্ণিত- নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, জামা‘আতের সাথে আদায়কৃত নামায একাকী নামাযের চেয়ে ২৭ গুন বেশী ফযীলতপূর্ণ। (বুখারী শরীফ হাদীস নং ৬৪৫)


জামা‘আতের সাথে নামায আদায়ের প্রভাব 
✓ মুসলমানদের মধ্যে সাম্য ও ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়।
✓ অন্য ধর্মের মানুষ মুসলমানদের সাম্য সমাগম দেখে প্রভাবিত হবে।
✓ মুসলমানদের মধ্যে পরস্পরে ভ্রাতৃত্ববোধ ও আন্তরিকতার সৃষ্টি হয়।
✓ ধনী গরীব নির্বিশেষে সকলেই সকলের অবস্থা ও প্রয়োজনাদি সম্পর্কে সহজে অবগতি লাভ করেত পারে।


ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল রহ. জামা‘আতের সাথে নামায আদায় করা ফরযে আইন বলেছেন, এবং ইমাম শাফেয়ী রহ. ফরযে কেফায়া বলেছেন। আর ইমাম আযম আবূ হানিফা রহ. সক্ষম পুরুষদের জন্য জামা‘আতকে ওয়াজিব বলেছেন। হানাফী মাযহাবের কোন কোন কিতাবে জামা‘আতকে সুন্নাতে মুআক্কাদাহ বলা হলেও বিশুদ্ধ ও মজবুত মতানুযায়ী তার অর্থ হল মজবুত এবং শক্তিশালী হাদীস  ও সুন্নাতের মাধ্যমে জামা‘আতে শরীক হওয়া ওয়াজিব প্রমাণিত। (আলবাহরুর রায়েক-১/৬০২, আল ফিকহুল ইসলামী-২/১১৬৭, শামী-১/৫৫২, বাদায়ে-১/১৫৫, ফাতহুল কাদীর-১/৩০০.




No comments

Powered by Blogger.