মসজিদের জায়গায় দোকান-পাট ভাড়া এবং বিক্রির বিধান
উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে এমন দৃশ্য দেখাই যায় না, কিন্তু উপমহাদেশের সব দেশেই দেখা যায় হাট বাজার কেন্দ্রিক মসজিদ গুলোর একাংশ কিংবা রাস্তার পাশে থাকা অংশে দোকান পাট বানানো হয়, সেখান থেকে আসা সবগুলো অর্থ মসজিদের কল্যাণেই খরচ করা হয়।
দোকান পাটের ভাড়া, বরাদ্দ এবং বিক্রির ব্যপারে রয়েছে ইসলামের স্পস্ট বিধি বিধান, মূলত সেই বিধান এবং মাশআলা না জানার কারণে এই দোকান নিয়ে চলছে অনিয়ম আর দুর্নীতি, হচ্ছে সজন প্রিতির মতো গুরুতর অপরাধ। মসজিদ কমিটির সদস্যরাও অনেকেই অবগত নন,তাই এই মাশআলা গুলো জেনে রাখা খুবই জরুরি।
মসজিদের জায়গায় নির্মিত দোকান-পাট এর পজিশন বিক্রি করা জায়েয নেই। মসজিদ বেচা কেনা যেমন জায়েয নেই, তেমনি পজিশন বেচা কেনা শরী‘আতে পছন্দনীয় নয়। তাছাড়া মসজিদের দোকান-পাট দীর্ঘ মেয়াদী ভাড়াও দেয়া যাবেনা। এতেও এক ধরনের মালিকানাভাব সৃষ্টি হয় মানুষের মাঝে। দোকানের ভাড়ার ব্যপারে কাগজপত্র করে রাখা ভালো।
✓ বছর হিসেবে ভাড়া দিতে হবে, তাও সর্বোচ্চ এক বছরের জন্য, প্রতি বছর ভাড়া চুক্তি নবায়ন করে নিতে হবে।
✓ মসজিদের দোকান-পাট ভাড়া দেওয়ার সময় বিশেষ করে খেয়াল রাখতে হবে কোন অবৈধ বা ইসলাম পরিপন্থী কোনো ব্যবসার দোকান যেন না হয়।
✓ মসজিদের জায়গায় দোকান দেওয়া দোকানদারগন মসজিদের পবিত্রতার দিকে খুব খেয়াল করতে হবে। কোনো ভাবেই বিশৃংখলা সৃষ্টি করা যাবেনা।
✓ মসজিদের দোকানে কোনো ধরনের টিভি, ভিডিও, গান, ফটোস্টুডিও, মাদক দ্রব্য,মদের দোকান দেওয়া যাবেনা।
✓ মূল মসজিদের নীচে বা উপরে কখনো কোন প্রকার টয়লেট, উযূখানা বা ফ্যামিলি কোয়াটার তৈরী করা যাবে না। (রদ্দুল মুহতার-১/৬৫৬, ৪/৩৫৮)
✓ ইতি পূর্বে মসজিদ ছিলো, সে স্থানে বা তার কোন অংশে দোকান-পাট, মার্কেট ও উযূখানা করা নাজায়িয। সেটা কিয়ামত পর্যন্ত মসজিদই থেকে যায়।
✓ মসজিদের কোন অংশ নিজ অবস্থায় রেখেও কখনো ভাড়ায় দেওয়া যেমন: মূল মসজিদ ভবনের দেয়ালে বা ছাদে বিলবোর্ড, টাওয়ার ইত্যাদি বসাতে দেয়া জায়িয হবে না।
বর্তমানে অনেক স্থানে দেখা যায় যে, নীচ তলায় বহু দিন যাবত নামায ও জামা‘আত অনুষ্ঠিত হয়েছিল, এবং কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে কোন প্রকার ঘোষণাও ছিল না যে, “এখানে অস্থায়ীভাবে নামায পড়া হচ্ছে, পরবর্তীতে দোতলা থেকে স্থায়ী মসজিদ আরম্ভ হবে।” হঠাৎ করেই উক্ত প্রথম তলা বন্ধ করে দিয়ে সেখানে মার্কেট, দোকান-পাট বানানো হয়।
যদিও আয় করা অর্থ মসজিদের জন্য ব্যয় করা হবে, তারপরও মসজিদকে পরিবর্তন করে ফেলা কবীরা গুনাহ। এটা কোন ভাবেই জায়েয হবে না। কোন মসজিদ কর্তৃপক্ষ এরূপ করে থাকলে তারা সকলেই গুনাহগার হবে। এর জন্য একটাই পথ খোলা আছে, সেটা হল ঐ মার্কেট, দোকান-পাট ভেঙে মসজিদকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে হবে এবং আল্লাহর দরবারে ভুলের জন্য অনুতপ্ত হতে হবে, তাওবা ইস্তিগফার করে নিবে।
কোন মসজিদ জীর্ণশীর্ণ বা সংকীর্ণ হয়ে গেলে তা ভেঙ্গে ফেলে নতুনভাবে তৈরী করা জায়েয আছে। পুরানা আসবাবপত্র বিক্রি করে মসজিদের কাজে লাগানো যাবে। মসজিদকে সুন্দর করার জন্য বা সাজানোর জন্য মজবূত, ভালো মসজিদ ভেঙ্গে ফেলা নাজায়েয। আজকাল অনেকেই মসজিদ নিয়ে গর্ব ও বড়াই করার লক্ষ্যে পুরানা মসজিদকে মজবূত থাকা সত্ত্বেও শহীদ করে এ ধরনের নাজায়িয কাজ করে থাকে। (আবূ দাউদ হাদীস নং ৪৪৮-৪৪৯, মুসনাদে আহমাদ-৩/১৩৬)
অনেক জায়গায় দেখা যাচ্ছে, মসজিদ কমিটি অতি মুনাফার লোভে নামাযের জায়গা সংকুলান করেই দোকান বানাচ্ছে, এগুলো সম্পূর্ণ নাযায়েজ। মনে রাখতে হবে মসজিদ কোনো আয়ের উৎস হতেই পারে না। এটি একমাত্র ইবাদতের জন্য, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য।
No comments