মুহিউস্ সুন্নাহ হযরত মাওলানা শাহ আবরারুল হক সাহেব রহ.

Hazrat Maulana Shah Abrarul Haque.



✓ মাওলানা শাহ আবরারুল হক সাহেব রহ. এর জন্ম এবং মৃত্যু 
জন্ম হিজরী: ৮ রবীউস সানী ১৩৩৯ হিজরী 
জন্ম সন: ২০ ডিসেম্বর ১৯২০ ঈসায়ী সন
জন্ম স্থান: ভারতের উত্তর প্রদেশের হারদুয়ী শহরে
তিনি এক ধর্মনিষ্ঠ সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। 
তিনি এশিয়ার হাদীস শাস্ত্রের অন্যতম মুহাদ্দিস হযরত মাওলানা আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী রহ. এর বংশধর। 
তিনার পিতা জনাব মাহমূদুল হক রহ. হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহ.-এর স্নেহধন্য মুজাযে সোহবত ছিলেন।
মৃত্যু সন: ১৭ মে ২০০৫ সন
মৃত্যুর বার: মঙ্গলবার
মৃত্যুর সময়: রাত আট ঘটিকায় 
মৃত্যুর স্থান: ভারতের উত্তর প্রদেশের হারদুয়ী জেলায় নিজ বাড়ীতে ইন্তিকাল করেন। (আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে জান্নাতের উচ্চ মাকাম নসীব করুন! আমীন।) 
মৃত্যু কালে তাঁর বয়স ছিল ৮৮ বছর। 
মৃত্যুর পর তার ওসীয়ত মুতাবিক নিজস্ব খাস গোরস্থান থাকা সত্ত্বেও হারদূয়ী জেলা শহরের আম কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।


✓ মাওলানা শাহ আবরারুল হক সাহেব রহ. এর শিক্ষা জীবন 
হারদুয়ী শহরে স্বীয় পিতা কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ইসলামিয়া মাদরাসায় তিনি প্রাধমিক শিক্ষা শুরু করেন এবং মাত্র ৮ বছর বয়সে পূর্ণ কুরআন শরীফ হিফয সম্পন্ন করেন। ১৩৪৯ হিজরীতে উচ্চ শিক্ষার্থে তিনি ভারতের প্রসিদ্ধ শিক্ষা কেন্দ্র সাহারানপুর মাজাহিরুল উলূম মাদরাসায় ভর্তি হন।


১৩৫৬ হিজরী সনে কৃতিত্বের সাথে ১ম স্থান অধিকার করে দাওরায়ে হাদীস তথা সর্বোচ্চ ডিগ্রী লাভ করেন। ঠিক একই নিয়মে ১৩৫৮ হিজরী সনে কৃতিত্বের সাথে ১ম স্থান অধিকার করে “তাকমীলে ফুনূন” তথা উচ্চতর শাস্ত্রীয় গবেষণাও তিনি সম্পন্ন করেন।


✓ মাওলানা শাহ আবরারুল হক সাহেব রহ. এর কর্ম জীবন
শিক্ষা সমাপ্ত করার পর শিক্ষকবৃন্দের ইচ্ছায় সাহারানপুর মুজাহিরুল উলূম মাদরাসায়ই তিনি শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন। এখানে কিছু দিন শিক্ষকতা করার পর স্বীয় শাইখ হাকীমুল উম্মত হযরত থানভী রহ.-এর নির্দেশে তিনি মাদরাসা জামিউল উলূমে চলে যান। 


সেখানকার কর্তৃপক্ষ হযরতের জ্ঞনের গভীরতা ও অসাধারণ যোগ্যতায় মুগ্ধ হয়ে “শাইখুল হাদীস” হিসেবে পদোন্নতি প্রদান করেন। এরপর হযরত থানভী রহ.-এর দ্বিতীয় বারের পরামর্শক্রমে তিনি ফতেহপুর ইসলামিয়া মাদরাসায় চলে যান এবং সেখানে সুনামের সাথে শিক্ষকতা করতে থাকেন।


✓ ‘আশরাফুল মাদারিস’ নামে নিজের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন 
ইসলাম এবং যুগের চাহিদা পুরণে দ্বীনের চতুর্মূখী কার্যক্রম চালু করার লক্ষ্যে ১৩৬২ হিজরীতে শাইখের পরামর্শক্রমে নিজ এলাকায় চলে যান এবং জাতির আকাঙ্খা পুরনে হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহ.-এর দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তিতে মাদরাসায়ে আশরাফুল মাদারিস প্রতিষ্ঠা করেন। 


অক্লান্ত পরিশ্রম, সীমাহীন ত্যাগ, উৎসর্গের মাধ্যমে সেটাকে এমন সুবিন্যস্ত করে ঢেলে সাজান, যা পরবর্তীতে অন্যান্য সকল মাদরাসার জন্য আদর্শ হয়ে দাঁড়ায়। মাদরাসায়ে আশরাফুল মাদারিস শুধু একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম নয়, এটি শিক্ষা-দীক্ষা, আত্মশুদ্ধি, দাওয়াতে তাবলীগসহ দ্বীনের যাবতীয় খেদমত অত্যন্ত সুন্দর ভাবে আঞ্জাম দেয়ার এক বৃহৎ একটি প্রতিষ্ঠান। 


✓ মাওলানা শাহ আবরারুল হক সাহেব রহ. এর আধ্যাত্মিক জীবন
ছাত্র জীবন থেকেই তিনি হাকীমূল উম্মত হযরত থানভী রহ.-এর সাথে ইসলাহী সম্পর্ক গড়ে তোলেন। মাজাহিরুল উলূম মাদরাসায় অধ্যায়নকালে তিনি হযরত থানভী রহ. এর হাতে আত্মশুদ্ধির বাইআত গ্রহণ করেন। অধ্যায়ন শেষ হওয়ার পর ফতেহপুর মাদরাসায় অধ্যাপনা কালে মাত্র ২১ বছর বয়সে হযরত থানভী রহ. কর্তৃক খেলাফত লাভ করেন। 


চিন্তা-চেতনা, ধ্যান-ধারণা এমনকি মন-মানসিকতা, আধ্যাত্মিক সাধনা, ইত্যাদি সহ সকল গুণাবলীর বিচারে হযরত থানভী রহ.-এর প্রতিচ্ছবি তাঁর ব্যক্তিত্বে ফুটে উঠায় সমাজের লোকেরা তাঁকে দ্বিতীয় থানভী বলে আখ্যায়িত করেন। 


থানভী রহ. এর চিন্তা চেতনায় উদ্ভাসিত এ মহান ব্যক্তিত্ব আধ্যাত্মিক সাধনায় এমন উৎকর্ষ সাধন করেন যে, পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শুধু সাধারণ মানুষ নয়, জাতির কান্ডারী অসংখ্য অগণিত উলামায়ে কেরাম তাঁর হাতে বাইআত গ্রহণ করেন এবং নিজেদের আত্মার পরিশুদ্ধি ঘটান। ইউরোপ, আমেরিকা, এশিয়া ও আফ্রিকায় রয়েছে তাঁর লক্ষ লক্ষ ভক্ত মুরীদ। 

বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ পীর-মাশায়েখ এবং শীর্ষস্থানীয় উলামায়ে কেরামও তাঁরই স্নেহধন্য মুরীদ ও খলীফা। বাংলাদেশে তাঁর উত্তরসুরী হিসাবে রয়েছে বিশিষ্ট ২৮ জন খলীফা। তারা সকলেই দ্বীনের কল্যাণে অবদান রাখছেন। 


সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ, দীনী শিক্ষার ব্যাপক প্রচার প্রসার, মাদরাসা ছাত্র-শিক্ষকদের বিশেষ তারবিয়্যাত, খাঁটি মুসলমান তৈরী করার জন্য দেশ-বিদেশে সফর, শর‘ঈ বিধান মুতাবিক মসজিদ পরিচালনা,পারিশ্রমিক ছাড়া ইসলামের খেদমত, দুঃস্থ মানবতার সেবায় আমৃত্যু কঠিন সাধনা চালিয়ে যান।  

তিনি ছুটে যান এশিয়া-আফ্রিকা ও ইউরোপ-আমেরিকার আনাচে কানাচে। লক্ষ লক্ষ পথহারা মানুষের হৃদয়ে জ্বালান হেদায়াতের অগ্নি মশাল। প্রতিষ্ঠা করেন দেশ-বিদেশে শত শত দ্বীনী প্রতিষ্ঠান।


✓ মাওলানা শাহ আবরারুল হক সাহেব রহ. এর অবদান 
তিনি ভারতে অন্তত ৩০০ নূরানী মাদরাসা কায়েম করেন, হযরতের নির্দেশেই পরিচালিত হত এবং সেগুলোর শিক্ষক হারদুয়ী থেকে পাঠানো হতো। তাদের পরীক্ষা শাহ আবরারুল হক সাহেব রহ. কর্তৃক নির্ধারিত লোকেরাই নিতেন। যাতে করে কোনো ভুল ভ্রান্তি না থাকে। 


এজন্য মাওলানা শাহ আবরারুল হক সাহেব রহ. এর দরবারে পৃথিবীর যে কোন দেশ থেকে যত বড় আলেমই আধ্যাত্মিক সাধনার জন্য হাজির হতেন তিনি অবশ্যই নূরানী কায়েদা নিয়ে মক্তবে বসার পরামর্শ দিতেন। এটাই তাঁর সুলূকের পথ পাড়ি দেয়ার মূল বিষয় বস্তু ছিল। 


No comments

Powered by Blogger.