মসজিদে মাইক'এর ব্যবহার || প্রথা এবং পদ্ধতি

Use of microphone in mosque || Customs and Procedures




অনলাইন ভিত্তিক কিছু গ্রহণযোগ্য মাধ্যম থেকে জানা যায়, সর্বপ্রথম মসজিদে মাইক ব্যবহার করার কথা শোনা যায় ১৯৩৭ সালে সিঙ্গাপুরের সুলতান মসজিদে। আধুনিক যুগে মাইকের সাহায্যে আজান দেয়া হয় সব দেশই। মূলত আজানের ধ্বনি দূরে পৌছানোর জন্য মাইকের প্রচলন শুরু হয়। সেই মাইক রাখার জন্য মিনারের প্রচলন‌ও শুরু হয়। 


দিনে পাঁচবার নামাজের সময় আজান দেয়া হয়। মসজিদের সৌন্দর্য আর স্থাপত্যে মাইক এবং মিনার মিলেমিশে একাকার। প্রথমদিকে মদিনায়‌ও মিনারের ব্যবহার ছিল না। সেসময় ছাদের উপর থেকে আজান দেয়া হত। হযরত মুহাম্মদ (স.) এর মৃত্যুর অনেক বছর পর মিনারের ব্যবহার শুরু হয়। তার‌ও অনেক পর মাইক ব্যবহার শুরু হয়। 


✓ আজকাল বিভিন্ন মসজিদে নামাযে মাইক ব্যবহার করা একটি ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। দেখা যায়, মসজিদে মাত্র এক বা দেড় কাতার মুসল্লী, যেখানে সহজেই ইমামের আওয়াজ পৌঁছে যায় এবং মুকাব্বিরের আওয়াজে সুন্দরভাবে রুকু সেজদা করা যায়। তবুও প্রত্যেক ওয়াক্তে মাইক চালানো হচ্ছে। অথচ এর কোন প্রয়োজন নেই। অপচয় ছাড়া কিছুই নয়। 


✓ নামায সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত। যা মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের তরীকায় কোন রকম ঝামেলা ছাড়াই সাবলীল ভাবে পড়াই উত্তম। মাইকের কারণে প্রায় সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। এজন্য শরী‘আতের দৃষ্টিতে এ ধরনের ছোট জামা‘আতে মাইক ব্যবহার নিষিদ্ধ। তবে যদি অনেক বড় মসজিদ হয় বা কয়েক তলায় জামা‘আত হয় সেখানে সতর্কতার সাথে মাইক ব্যবহারের অবকাশ আছে। 


✓ মসজিদের মাইক দ্বারা আযান-ইকামত, বয়ান, তাফসীর ইত্যাদির কাজ করতে হবে। মসজিদের মাইকে মৃত ব্যক্তির খবর প্রচার, চল্লিশার দাওয়াত দেওয়া, ওয়াজ মাহফিলের মাইকিং করা, সামাজিক কোনো কাজের এ‘লান করা এবং যে কোনো পার্থিব কাজে ব্যবহার নিষিদ্ধ। মসজিদে মাইক ব্যবহার করা নিয়ে বিতর্ক না করাই ভালো। 


✓ মসজিদের কোন আসবাবপত্র বাইরের দ্বীনী কাজেও ব্যবহার করা যাবে না। এমনকি ঈদগাহের কাজের জন্যও মসজিদের বিছানা ইত্যাদি ব্যবহার করা যাবেনা। ঈদগাহের জন্য আলাদা আসবাবপত্রের ব্যবস্থা করবেন। (রদ্দুল মুহতার-৪/৩৫৯, রহীমিয়া-৩/১৬৩, আহসানুল ফাতাওয়া-৬/৪০৭)


✓ মসজিদের মাইকের শব্দ গতি সীমিত রাখাই ভালো। অনেক সময় দেখা যায় এক মসজিদের আজানের ধ্বনি দুই তিন মসজিদ পরেও শোনা যায়, এগুলো অপ্রয়োজনীয় কার্যকলাপ। আপনার মসজিদের মাইকের ধ্বনি আপনার এলাকার লোকজনের জন্য‌ই যেন যথেষ্ট হয়। দুই চার সমাজকে শুনিয়ে কোনো লাভ নেই। 


✓ অনেক সময় দেখা যায় এক মসজিদের মাইকে আজান হচ্ছে,আরেক মসজিদে নামাজের জামায়াত হচ্ছে, তখন বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। মসজিদের কমিটির উচিত সমাজের সকলকে বুঝিয়ে মাইকের অপব্যবহার বন্ধ করা। না হয় দিন দিন সমস্যা বেড়েই চলবে।


✓ মসজিদের মাইক দ্বারা অনেক স্থানে শেষ রাত্রে যিকির করা হয়, গজল গেয়ে গেয়ে মানুষকে ঢাকা হয়, কোরআন তিলাওয়াত করা হয়। এসব একদমই নাজায়িয। কারণ এতে লোকদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে এবং ইবাদাতকারীদের সমস্যা সৃষ্টি হয়। এলাকায় অনেক অসুস্থ ব্যক্তিও থাকতে পারে,যাদের সমস্যায় পড়তে হয়। এগুলো মোটেও কাম্য নয়। 


বর্তমানে অধিকাংশ মসজিদে আযান ইকামত সুন্নাতের পরিপন্থী নিয়মে দেয়া হচ্ছে। সুতরাং মুয়াজ্জিন নিয়োগ দেয়ার সময় কোন হক্কানী আলেম দ্বারা পরীক্ষা নিয়ে নিয়োগ দিবেন। যদি পূর্বে নিয়োগ প্রাপ্ত মুয়াজ্জিন হয় তাহলে যে সব প্রতিষ্ঠানে সুন্নাত তরীকায় আযান ইকামতের ট্রেনিং দেওয়া উচিত।



No comments

Powered by Blogger.