সর্বপ্রথম মূর্তিপূজা কারা এবং কিভাবে শুরু করেছিল ?





হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, হযরত আদম আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও নূহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাঝখানে এমন দশ শতাব্দী অতিক্রান্ত হয়েছে, যাদের সকলেই তাওহীদে বিশ্বাসী ছিল। নবী-আগমনের ধারাবাহিকতায় হযরত আদম আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদিও সর্বপ্রথম নবী, কিন্তু তার আমলে ঈমানের সাথে কুফর ও গোমরাহীর মোকাবেলার পর্যায় ছিল না। অর্থাৎ সবাই ঈমানদার এবং আল্লাহর একত্ববাদের বিশ্বাসী ছিলেন। 


হযরত আদম আলাইহি ওয়াসাল্লামের শরী‘আতের অধিকাংশ বিধানই পৃথিবী আবাদকরণ ও মানবীয় প্রয়োজনাদির সাথে সম্পৃক্ত ছিল। কুফর বা কাফেরদের তখন অস্তিত্ব ছিল না। কুফর ও শিরকের সাথে ঈমানের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হযরত নূহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের আমল থেকেই শুরু হয়।


পৃথিবীর বুকে সর্বপ্রথম নূহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের সম্প্রদায়ই মূর্তিপূজায় লিপ্ত হয়। তাই তার যামানা থেকেই ঈমান ও কুফরের সাথে মোকাবেলার পর্যায় আসে। অর্থাৎ তখন থেকেই আস্তিক ও নাস্তিক মতবাদ শুরু হয়। 


রিসালাত ও শরী‘আতের দিক দিয়ে হযরত নূহ আলাইহি ওয়াসাল্লামই জগতের প্রথম রাসূল। এ ব্যাপারে মুসলিম শরীফের শাফা‘আত অধ্যায়ে হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত লম্বা এক হাদীসে হযরত নূহ আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সর্বপ্রথম রাসূল বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। 


এ ছাড়া মহাপ্লাবনে সারা পৃথিবী ডুবে যাওয়ার পর যারা প্রাণে বেঁচে ছিল, তারা ছিল হযরত নূহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার নৌকায় অবস্থিত সঙ্গী-সাথী। তাদের দিয়েই পৃথিবী নতুনভাবে আবাদ হয়েছে। এ কারণেই হযরত নূহ আলাইহি ওয়াসাল্লামকে “ছোট আদম” বলা হয়। 


পবিত্র কুরআনের উল্লিখিত আয়াতসমূহে পয়গামবরগণের কাহিনী বর্ণনার সূচনা হযরত নূহ আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দিয়েই শুরু করা হয়েছে। সাড়ে নয়শ বছরের সু-লম্বা হায়াতে হযরত নূহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবীসুলভ চেষ্টা-প্রচেষ্টা, উম্মতের বিরুদ্ধাচরণ এবং পরিণতিতে ঈমানদারগণ ছাড়া অবশিষ্ট সবার প্লাবনে ডুবে যাওয়ার বিষয় বর্ণিত হয়েছে। 


হযরত নূহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আদম আলাইহি ওয়াসাল্লামের অষ্টমপুরুষ। কোন কোন বর্ণনায় এসেছে, তিনি হযরত আদম আলাইহি ওয়াসাল্লামের পুত্র হযরত শীস আলাইহি ওয়াসাল্লামের বংশধর ছিলেন। হযরত নূহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের আসল নাম “শাকির”। কোন কোন রেওয়ায়াতে “সাকান” এবং কোন কোন বর্ণনায় “আবদুল গাফফার” নাম বর্ণিত হয়েছে।

হযরত নূহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগটি হযরত ইদরীস আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগে ছিল না, বরং পরে ছিলো। তবে অধিকাংশ সাহাবীর মতে, হযরত নূহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইদরীস আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগে ছিলেন।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, নূহ ‌আলাইহি ওয়াসাল্লাম চল্লিশ বছর বয়সে নবুওয়্যাত প্রাপ্ত হন এবং প্লাবনের পর ষাট বছর জীবিত ছিলেন। নূহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের সম্প্রদায় ইরাকে বসবাসরত ছিল এবং তারা সভ্য জাতি হলেও তারাই পৃথিবীতে মূর্তি পূজার সূচনা ও প্রচলন ঘটিয়েছিল।



✓✓ মূর্তিপূজার সূচনা হলো যেভাবে 
হযরত নূহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের কওমের মূর্তিপূজার সূচনার ঘটনা হলো, তারা পরস্পরে এই অঙ্গীকারে আবদ্ধ হয়েছিল যে, আমরা আমাদের দেব-দেবী, বিশেষত নিম্নোক্ত এই পাঁচ প্রতিমার উপাসনা ত্যাগ করবো না। 
১. ওয়াদ্দ (وَدٌّ)। 
২. সুওয়া (سُوَاعٌ)। 
৩. ইয়াগুস (يَغُوْثُ)। 
৪. ইয়াউক (يَعُوْقُ)। 
৫. নাসর (نَسْرٌ)।

ইমাম বাগাবী রহ. বর্ণনা করেন, এই পাঁচজন প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তা‘আলার নেক ও খাস বান্দা ছিলেন। তাদের সময়কাল ছিল হযরত আদম ও হযরত নূহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের যমানার মাঝামাঝি। তাদের অনেক ভক্ত ও অনুসারী ছিল। তাদের ইন্তেকালের পর তাদের অনুসারীরা লম্বা সময় পর্যন্ত আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত ও হুকুম-আহকামের প্রতি আনুগত্য অব্যাহত রাখে।


অতঃপর এক সময় শয়তান তাদের এই বলে প্ররোচিত করলো, তোমরা যেসব নেক বান্দার পদাঙ্ক অনুসরণ করে ইবাদত করো, যদি তাদের মূর্তি তৈরি করে সামনে রেখে নিতে পারো, তা হলে তোমাদের উপাসনা পূর্ণতা লাভ করবে এবং বিনয় ও একাগ্রতা অর্জিত হবে। 

তারা শয়তানের ধোঁকায় পড়ে মূর্তি তৈরি করে ইবাদতখানা তৈরী করলো এবং তাদেরকে স্মরণ করে ইবাদতে বিশেষ আনন্দ অনুভব করতে লাগল। এই অবস্থায়ই তাদের সবাই দুনিয়া থেকে বিদায় নিলো। তারা অবশ্য ঐসব মূর্তি বা প্রতিমার কখনোই পূজা করতো না। 


কিন্তু তাদের মৃত্যুর পর সম্পূর্ণ নতুন এক বংশধর তাদের জায়গায় এলো। তারা এগুলোর সত্যতা জানতো না। এবার শয়তান এসে এই নতুন প্রজন্মকে বুঝাল, তোমাদের পূর্বপুরুষদের খোদা ও উপাস্য ছিল মূর্তি ও প্রতিমা। তারা দুনিয়া ও পরকালের কল্যাণের লক্ষ্যে এসব মূর্তি ও প্রতিমারই উপাসনা করতো। 

তখন নতুন প্রজন্ম শয়তানের এসব কথা বিশ্বাস করলো এবং সেসব মূর্তি ও প্রতিমার পূজা শুরু করলো। তখন থেকেই পৃথিবীতে প্রতিমা পূজার সূচনা ঘটল।সেই ধারাবাহিকতায় আজ‌ও অনেক ধর্মের লোকদের মূর্তির পূজা করতে দেখা যায়। 



No comments

Powered by Blogger.