ফিরে আসা সত্যের পথে

 



গল্পে গল্পে অনেক গল্প হলো, গল্প যতই শুনা হয় ততই ভালো লাগে, ততই জ্ঞান বাড়ে। গল্প শুনতে পড়তে সকলের ভালো লাগে। আর গল্প যদি হয় ইসলামীক তাহলে তো কথাই নেই। জ্ঞান প্রজ্ঞা এবং ধর্ম চর্চা সবই হবে। ইসলামীক গল্পের ভান্ডার থেকে আজ তিনটি গল্প শোনাবো। 


গল্প গুলো বিভিন্ন সাইট থেকে সংগৃহীত হয়েছে। মানুষ ইসলাম সম্পর্কে জানবে এটাই আমাদের উদ্দেশ্য। যেনতেন গল্প পড়লেই তো হবেনা, গল্প হতে হবে সুন্দর সাবলীল শিক্ষণীয়। চলুন তাহলে শুরু করা যাক! 


১. ফিরে আসা সত্যের পথে 

ছেলেটা ছিলো ইয়াহুদী। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খাদেম। বেশ কিছুদিন ধরেই সে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমত করছিলো।একদিন হঠাৎ সে অসুস্থ হয়ে পড়লো। রোগীর শুশ্রূষায় উপস্থিত হওয়া নবীজীর অনুপম আদর্শ। হোক সে ইয়াহুদী বা খৃস্টান। 


সেই অসুস্থ বালকের খোঁজ খবর নিতে রওয়ানা হলেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। সাথে কয়েকজন সাহাবী। সেখানে পৌঁছে নবী দেখলেন, ছেলেটির পিতা তার মাথার সামনে দাঁড়ানো। তাওরাত পাঠ করছে। নবীজী সুস্পষ্টভাবে জানতেন, তাঁর বর্ণনা তাওরাত ইঞ্জিলে আছে। 


তিনি ইয়াহুদীকে তাওরাত পাঠরত পেয়ে তাকে দিয়ে কথাটা স্বীকার করাতে চাইলেন। ইয়াহুদীরা হযরত মূসা আ. কে নবী মানার দাবি করে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইয়াহুদীকে মূসা আ. এর রবের কসম দিলেন। বললেন, ‘হযরত মূসা আ. এর ওপর তাওরাত নাযিলকারী রবের শপথ করো।


সত্যি করে বলোতো, আমার কথা কি তাওরাতে নেই ? আমার আবির্ভাবের বর্ণনা কি তোমরা সেখানে পাওনা ? কিন্তু না, মূসা আ. এর রবের কসমও সে ইয়াহুদীর মধ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করলো না। সে পরিস্কার অস্বীকার করে বসলো। বাবার এই মিথ্যাচার দেখে ছেলে স্থির থাকতে পারলো না। 


সে বলে উঠলো, হে আল্লাহর রাসূল, আপনার গুণাবলীর কথা, আপনার আবির্ভাবের কথা সবই আমরা তাওরাতে পেয়েছি। সহজ সরল এ স্বীকারোক্তির পর ছেলেটির হেদায়াতের দরজা খুলে গেলো। কেটে গেলো জমে থাকা মেঘের আঁধার। উচ্চ কণ্ঠে বলে উঠলো, আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, ওয়া আন্নাকা রাসূলুল্লাহ।


২. লাজুক সীমা 

পবিত্র কা’বা ঘর। মুসলিম উম্মাহর প্রাণকেন্দ্র। মর্যাদা ও অভিজাত্যের প্রতীক। ইসলামপূর্ব যুগেও একে সম্মান ও গৌরবের মাধ্যম মনে করতো কুরাইশ গোত্র। এ ঘরের রক্ষণাবেক্ষণের কাজকে তারা নিজেদের দায়িত্ব মনে করতো।নিজেদের কল্পিত পদ্ধতিতে হলেও তারা খানায়ে কা’বার সম্মান করতো। 


একদিন এক মহিলা কা’বার চার পাশে ধূনি দিচ্ছিলো। হঠাৎ আগুনের একটা ফুলকি উড়ে গিয়ে লাগলো কা’বার গেলাফে। আগুন লেগে পুড়ে গেলো কা’বা ঘর। কুরাইশ গোত্র কা’বা ঘর সংস্কারের সিদ্ধান্ত নিলো। লোকেরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এ কাজে অংশগ্রহণ করলো। 


কাজের সুবিধার জন্যে সবাই ভেতরের স্বল্প বসন রেখে পরনের অতিরিক্ত কাপড় খুলে কাঁধে রেখে দিয়েছিলো। তারপর সে কাপড়ের ওপর বহন করছিলো পাথর। এতে সবাই পুরোপুরি বিবস্ত্র না হলেও হাটুর উপরিভাগ অর্থাৎ শরীরের সতরের কিছু অংশ নিশ্চয়ই দেখা যাচ্ছিলো। 


নবীজী তখন খুবই ছোট। একেবারে বালক। তিনিও সেখানে উপস্থিত হয়ে পাথর বহন করতে লাগলেন। তবে অন্যদের মতো তাঁর কাধে কোন অতিরিক্ত কোন কাপড় ছিলো না। একেতো কচি কাঁধ। তার ওপর খালি কাঁধে পাথর বহন করায় নবীজীর খুব কষ্ট হচ্ছিলো। 


নবীজীর চাচা আব্বাসও উপস্থিত ছিলেন একাজে। ভাতিজার কষ্ট দেখে তার মায়া হলো। তিনি বললেন, তুমিও কাপড়টা খুলে কাঁধে দিয়ে নাও, আরাম পাবে।চাচা আব্বাস নবীজীর ওপর দয়াদ্র হয়ে তাঁর অতিরিক্ত কাপড় খুলে ঘাড়ের ওপর রাখতে গেলেন। 


ভেতরের স্বল্প বসন নিশ্চয় ছিলো। তবু এতটুকু অনাবৃত হতেই নবীজী বেহুশ হয়ে জমিনে পড়ে গেলেন। কিছুক্ষণ পর তার জ্ঞান ফিরে এলো। জ্ঞান ফেরার পরই তিনি বলতে লাগলেন, আমার কাপড়! আমার কাপড়! নবীজীকে কাপড় পরিয়ে দেয়া হলো। এরপর থেকে কোনোদিন সতর সামান্যতম খোলাও দেখেনি কেউ।


৩. বিশ্বাসের ভক্তি 

বদর যুদ্ধের দিন। মুশরিক বাহিনীর সাথে প্রচণ্ড লড়াই চলছে। বীরের মতো লড়াই করছেন হযরত উক্কাশা রাযিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু। কচুকাটা করে চলছেন কাফেরদের। হঠাৎ তার তরবারীটা ভেঙ্গে পড়লো। তিনি পেরেশান হয়ে গেলেন। চারদিকে শত্রুবাহিনী। কী উপায় হবে? 


অবস্থা লক্ষ করে নবীজী তার দিকে একটি ডাল ছুড়ে দিলেন। বললেন, ‘উক্কাশা, এটা দিয়ে লড়াই চালাও।অবিশ্বাসী কেউ এ দৃশ্য দেখলে হয়তো হাসবে। বোকা ঠাওরাবে নবীজীকে। কিন্তু উক্কাশা তো ছিলেন একজন দৃঢ়বিশ্বাসী মুমিন। তিনি নবীজীর দেয়া ডালকেই আকড়ে ধরলেন। 


তারপর সেটাকে চালনা করলেন কাফেরদের ওপর। ঠিক সে সময়েই ডালটি পরিণত হলো তরবারীতে। বিজয় অর্জন হওয়া পর্যন্ত তিনি সেটি দিয়েই যুদ্ধ করলেন। তরবারীটি ছিলো খুবই চমৎকার। লম্বা, ধারালো, চকচকে ও মজবুত। হযরত উক্কাশা রাযিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু সবসময় সেটিকে সাথেই রাখতেন।


No comments

Powered by Blogger.