সংকটে সফলতা



success-crisis-islamic-real-story


জারিফ আহমদ। একজন মেধাবী তরুণ। ধনী পিতার একমাত্র সন্তান। কিছুদিন হলো কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করে বেরিয়েছে। ছোটবেলা থেকেই একটা সময় পর্যন্ত ধর্মের প্রতি জারিফের শ্রদ্ধাবোধ ছিলো। নামায পড়তো। সাথে সাথে ধর্মের অন্যান্য আচার আচরণেও সে অভ্যস্ত ছিলো। 


কিছুদিন হলো ধর্মের বেশকিছু ব্যাপারে জারিফের মনে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। তাই দ্বীন ঈমানের ওপর আগের মতো আর আস্থা রাখতে পারছে না। ওর সব চেয়ে বড় প্রশ্ন, ‘বান্দাকে জান্নাত দিতে চাইলে তো আল্লাহ এমনিতেই দিতে পারেন, তার জন্যে আবার ইবাদত বন্দেগীর শর্ত করেছেন কেন?


এ জন্যে ওর কথা হলো, ‘ইবাদতের কষ্ট করে জীবনের আনন্দ নষ্ট করার কোনো দরকার নেই। হাতে থাকা সময় গুলো ফুর্তির মধ্যে কাটিয়ে দেয়া হবে বুদ্ধিমানের কাজ! নিজের তৈরি প্রশ্নের মধ্যে জড়িয়ে পড়েছে জারিফ। আর সদা ঘুরপাক খাচ্ছে সেসব প্রশ্নের মাঝে। 


ঠিক এমন সময় তার জীবনে ঘটলো বড় বড় দুটো ঘটনা। ওর বাবা মা একসাথে মারা গেলো রোড এক্সিডেন্টে। কয়েকদিন পরই শেয়ার বাজার ধ্বসে জারিফের সব অর্থ হাওয়া হয়ে গেলো। লোপাট হয়ে গেলো কয়েক কোটি টাকা।‌ জারিফের দু’চোখে অন্ধকার নেমে এলো। 


জীবনকে মনে হলো কিনারাহীন। ওর অনেক স্বপ্ন ছিলো, একটা সফটওয়্যার কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করার। এরপর ধীরে ধীরে টেকনোলজি জগতের সমস্ত পণ্য বাজারজাত করার ইচ্ছেও ছিলো ওর। সেসব স্বপ্ন পূরণ হওয়া তো দূরের কথা, এখন বেঁচে থাকার অবলম্বন পাওয়াই দুষ্কর হয়ে পড়েছে। 


মনে চাইছে একটা ফাঁসির দড়ি সংগ্রহ করে ঝুলে পড়তে। মাওলানা আবুল হাসান সাহেব। জারিফের এলাকার বিশিষ্ট আলেম এবং ব্যবসায়ী। ব্যবসায়ের জগতেও রয়েছে তার সরব পদচারণা। পারিবারিক ব্যবসায়ের সূত্রে তিনি এখন গ্রুপ অব ইন্ড্রাস্টির মালিক। 


ব্যবসায়িক একটা কাজে মধ্যপ্রাচ্যের সফর শেষে দেশে ফিরেছেন। এর আগে অনেকবার তিনি জারিফের মনের সন্দেহ নিরসন করার চেষ্টা করেছেন। সফল হননি। আজকে দেশে ফিরে জারিফের দূর্ঘটনার কথা জানতে পেরে তিনি মনে মনে ভাবলেন, আরেকবার চেষ্টা করে দেখি! 


তারপর দেখা করলেন ওর সাথে। মাওলানা আবুল হাসান সাহেব জারিফকে অদ্ভুত একটা প্রস্তাব দিলেন। বললেন, ‘আমি তোমাকে একশ’ কোটি টাকা দেব। সম্মতি থাকলে তোমার সাথে বিয়ে দেব আমার মেয়েকে। তবে এর জন্যে আমার একটা শর্ত আছে।’

‘কী শর্ত?’ জারিফ আগ্রহভরে জানতে চাইলো।

মাওলানা সাহেব বললেন, তোমাকে একদিন আমার কথা মতো চলতে হবে। আমি যা বলি তাই করতে হবে। এরপর তুমি স্বাধীন। টাকা নিয়ে যা ইচ্ছে তাই করতে পারো।


সামান্য একটা শর্তের বিনিময়ে এত বিরাট পাওনা! জারিফের প্রথমে অবিশ্বাস লাগছিলো। কিন্তু মাওলানা সাহেব মিথ্যা আশ্বাস দিচ্ছেন না, এতটুকু আস্থা জারিফের আছে। এ আস্থা থেকেই মাওলানা সাহেবের প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেলো।জারিফ এই প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেল। 


রাজি হওয়ার পর মাওলানা সাহেব আসল কথায় এলেন। বললেন, ‘দেখো জারিফ, একশ’ কোটি টাকার জন্যে তুমি একদিন আমার কথা মতো চলতে কত সহজে রাজি হয়ে গেলে! কৈ একবারও তো তুমি বলোনি, আপনি দিতে চাইলে তো এমনিতেই দিতে পারেন। তার জন্যে আবার শর্ত কেন?


তুমি ভেবেছিলে, এতগুলো টাকা যে দেবে, সামান্য কিছু শর্ত দেয়ার অধিকার তার স্বাভাবিকভাবেই আছে। এ যুক্তি আর নিজের সারা জীবনের শান্তির কথা ভেবে তুমি একদিনের স্বাধীনতাকে হারাতে অনায়াসেই রাজি হয়ে গেছো। 


সেই তুমিই তাহলে এটা কেন ভাবছো না, জান্নাতের অগুনিত নেয়ামত যিনি দেবেন, তাঁরও রয়েছে কিছু শর্ত দেয়ার অধিকার! এর চেয়ে’ বড় কথা হলো, আল্লাহ তা‘আলা আমাদের যেসব শর্ত দিয়েছেন সেগুলো খুবই সহজ ও সামান্য। 


কারণ, পরকালের জীবনের তুলনায় দুনিয়ার জীবনটা একদিনের চেয়েও কম। তাহলে এ সামান্য সময়ে আল্লাহর ইচ্ছেমত জীবনযাপন করতে সমস্যা কোথায়?মেধাবী ছেলে জারিফ। বিষয়টা বুঝতে ওর সময় লাগলো না। সব প্রশ্নের জট নিমিষেই খুলে গেলো। 


নিজেকে আল্লাহর ইচ্ছের কাছে সমর্পণ করতে আর কোনো দ্বিধা রইলো না। এর পর থেকেই সে আল্লাহর সমস্ত আদেশ নিষেধ মেনে চলতে লাগলো, আর তার জীবন সুখ আর সমৃদ্ধিতে ভরে গেলো।‌ আমিন!

No comments

Powered by Blogger.