সমানে সমান
অনেক পুরনো এক কুয়া, বহুদিন যাবৎ ব্যবহার হয় না। আগাছা আর লতাপাতা জন্মে কুয়ার মুখটা ঢেকে গেছে। ভালো ভাবে লক্ষ না করলে চলার পথে হঠাৎ বোঝার উপায় নেই, এখানে একটা কুয়া আছে।
এক পথিক ব্যস্ত হয়ে কোথাও যাচ্ছিলো। খেয়াল করতে না পেরে সে পা দিয়ে ফেললো সেই কুয়ার মুখে। এক ঝটকায় নেমে গেলো পঞ্চাশ ফুট গভীরে। কুয়ার নিচে ছিলো আগাছা আর পাতার মোটা স্তর। হায়াতও ছিলো লোকটার, তাই প্রাণে বেঁচে রইলো।
প্রাথমিক ধাক্কা সামলানোর পর লোকটা বুঝতে পারলো, কুয়ার ভেতরের দেয়ালটা খুবই মসৃন। ভেতরে এমন কোনো খাঁজ বা ধরার বস্তু নেই যেটা অবলম্বন করে ওপরে ওঠা সম্ভব। বাইরের সাহায্য ছাড়া প্রকৃত পক্ষে বাঁচার কোনো সম্ভাবনা নেই।
প্রাণ বাঁচাতে লোকটা চিৎকার শুরু করলো। তার চিৎকারে লোকজন এগিয়ে এলো। সবাই মিলে তাকে ওঠানোর চিন্তা শুরু করলো। একজন বুদ্ধিমানের পরামর্শে কুয়ায় একটি দড়ি ফেলা হলো। লোকটাকে বলা হলো দড়িটা ভালো করে কোমরে বাঁধতে।
এরপর সবাই মিলে টেনে তাকে ওপরে তুললো। কয়েকদিন পর, পাশের গ্রামের এক লোক লম্বা এক তাল গাছে উঠেছে। ওঠার সময় তো তরতর করে উঠে গেছে। কিন্তু ওপর থেকে নিচের দিকে তাকিয়ে তার প্রাণ যাওয়ার উপক্রম। এখন আর নামতে সাহস হচ্ছে না।
লোকেরা গাছের নিচে জড়ো হলো। কারো মাথায় বুদ্ধি আসছে না, কিভাবে ওকে নামানো যায়। অনেক্ষণ মাথা খাটাবার পরও যখন কেউ কোনো সমাধান বের করতে পারলো না, এগিয়ে এলো এক ব্যক্তি। কুয়া থেকে মানুষ ওঠাবার ঘটনায় সে উপস্থিত ছিলো।
তার পরামর্শ অনুযায়ী বিরাট এক দড়ি আনা হলো। তারপর সেটাকে বাঁশের মাধ্যমে পৌঁছানো হলো তাল গাছে থাকা লোকটার কাছে। তাকে আদেশ করা হলো দড়ির সাথে নিজেকে ভালোভাবে বেঁধে নিতে। এরপর ...।হ্যাঁ, এরপর পরবর্তী পদক্ষেপের পালা।
পরামর্শদাতার পরবর্তী আদেশে সবাই মিলে টান দিলো দড়িতে। লোকটার জমিনে নামার দরকার ছিলো। নেমেও এলো। কিন্তু যা হবার তাই হলো। লোকটার মৃত্যুর পরও বুদ্ধিমান, পরামর্শদাতা বলছিলো, ঘটনাটা তো বুঝলাম না।
আমি নিজের চোখে দেখলাম দড়ি দিয়ে ওই লোকটাকে কুয়া থিকা উঠাইলো। উঠানোর পরও তো লোকটা বাইচা ছিলো। কিন্তু এই লোকটা মইরা গেলো ক্যান? আমরা তো এরে দড়ি দিয়াই নামাইলাম!
No comments